নিউজ ডেস্ক : মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসি কার্যকরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে গেছে। এরই মধ্যে কারাগারে পৌঁছেছে জল্লাদরা। তৈরি করা হয়েছে ফাঁসির মঞ্চ। জল্লাদরাও দিয়েছেন চূড়ান্ত মহড়া। এরই মধ্যে তওবা পড়ানো হয়েছে মীর কাসেমকে।
মৃত্যদণ্ড কার্যকরের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে রাত সাড়ে ১০টায়। কাশিমপূর কারাগারের একটি সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকরের সময় নির্ধারণের জন্য আইজি প্রিজন্স, অতিরিক্ত আইজি প্রিজন্স, সিনিয়র জেল সুপার, জেলার ও ডেপুটি জেলার নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মীর কাসেমের ফাঁসির জন্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে রাত ১০টা ৩০ মিনিট।
কাশিমপুর কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে, এরই মধ্যে কারাগারের ইমামের কাছে তওবা পড়েছেন মীর কাসেম আলী। এসময় তিনি ছিলেন বেশ শান্ত, কারারক্ষীদের সঙ্গে সন্ধ্যার পর থেকেই তেমন একটা কথা বলছেন না তিনি।
এদিকে রাত ৯ টা ৩৫ মিনিটে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম আলম কারাগারে প্রবেশ করেন। পুলিশি টহল গাড়িবেষ্টিত হয়ে তিনি এখানে আসেন। শনিবাট তিনি কারা ফটকে নিজ গাড়িবহর নিয়ে প্রবেশ করেন। এসময় তার সাথে ছিলেন গাজীপুরের সিভিল সার্জন আলী হায়দার। অ্যাম্বুলেন্সের সঙ্গে প্রবেশ করেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন-উর রশীদ।
শনিবার রাত ৯ টা ৫০ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্স তিনটি কারা ফটকে আসে। তিনটি অ্যাম্বুলেন্সই পুলিশি টহল গাড়িবেষ্টিত হয়ে এখানে আসে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে কারাগার ঘিরে।
জানা গেছে, মীর কাসেমের ফাঁসির প্রধান জল্লাদের দায়িত্ব পালন করবেন জল্লাদ শাহজাহান ভূইয়া। তাকে সহায়তা করবেন রাজু ও কামালসহ আরো চারজন। শনিবার বেলা সারে ১২টার দিকে রাজুকে কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগার থেকে কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২ এ আনা হয়েছে।
এর আগে শনিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফাঁসি কার্যকরে আদেশ কারাগারে পৌঁছে। আদেশে ফাঁসি কার্যকরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং কারা কর্তৃপক্ষ আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে।
ফাঁসি কার্যকরের পর মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের চালা গ্রামে হচ্ছে মীর কাসেম আলীর দাফন।
প্রশাসনের দায়িত্বশীল সূত্রে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। মীর কাসেমের স্ত্রী খন্দকার আয়েশা খাতুনও শনিবার সন্ধ্যায় কারাগারে মীর কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বিষয়টি জানিয়েছেন।
মীর কাসেমের দাফন নির্বিঘ্ন করতে সড়ক পথে নেয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে পুলিশের নিরাপত্তা চৌকি। মানিকগঞ্জ শহর থেকে হরিরামপুরের চালা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার রাস্তার প্রতিটি বাঁকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন।
মানিকগঞ্জে মীর কাসেম আলীর কবর খোঁড়ার কাজ করছেন চালা ইউনিয়নের সাকুচিয়া গ্রামের মৃত. কছিম উদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে সামেজ উদ্দিন বিশ্বাস (৭০)।
মীর কাসেমের নিজ অর্থায়নে নির্মিত মসজিদের উত্তর পাশে লেবু বাগান আর বাঁশ ঝাড়ের কাছেই সমাহিত করা হচ্ছে তাকে। বাঁশ কাটা হচ্ছে, আনা হয়েছে তালাই বাঁশ।
সেখানকার আশপাশের মানুষের আনাগোনা সীমিত করে দেয়া হয়েছে। পুরো এলাকাটি পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। বিশেষ কাজ ছাড়া লোকজনের বাড়ির বাইরে যাওয়ার ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, মীর কাসেম আলীর লাশের সঙ্গে তার দুই মেয়ে আসতে পারেন।
হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, মীর কাসেম আলীর লাশ দাফনে যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য ব্যাপক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।
ফাঁসি কার্যকরের পদক্ষেপ হিসেবে কারা বিধি অনুযায়ী স্থানীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও সিভিল সার্জনকে অবহিতকরণে চিঠি পাঠিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। একই চিঠি পাঠানো হয়েছে মীর কাসেম আলীর গ্রামের বাড়িতেও।
কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের আশপাশে নিরাপত্তা বেষ্টনী বসায় কারা কর্তৃপক্ষ ও জেলা পুলিশ। বিকেলে আরো অতিরিক্ত ৪ প্লাটুন বিজিবি কারাগারের চারপাশে মোতায়েন করা হয়েছে।
৩ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/প্রতিনিধি/এমআর/এসএম