রবিবার, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১০:০১:১২

কাল টাকি মাছের ভর্তা দিয়ে পোলাও খেয়েছিলেন মীর কাসেম, পরিবেশন করেন যাবজ্জীবন সাজার কয়েদি

কাল টাকি মাছের ভর্তা দিয়ে পোলাও খেয়েছিলেন মীর কাসেম, পরিবেশন করেন যাবজ্জীবন সাজার কয়েদি

নিউজ ডেস্ক : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলীর ফাঁসির রায় শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় কার্যকর করা হয়। এর আগে দুপুর ২টায় মীর কাসেম আলীকে খাবার দেওয়া হয়। কারা সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, খাবারের তালিকায় ছিল: পোলাও, সাদা ভাত, রুটি, গরু, মুরগি ও খাসির মাংস। এছাড়া চিংড়ি মাছ, টাকি মাছের ভর্তা, পায়েস এবং মিষ্টি পরিবেশন করা হয়। তবে তিনি খেয়েছেন পোলাও, টাকি মাছের ভর্তা, চিংড়ি মাছ ও পায়েস। এছাড়া বিকালে খন্দকার আয়েশা খাতুন তাঁর স্বামী মীর কাসেম আলীর জন্য সেমাই ও বিরিয়ানি নিয়ে যান। আরও ছিল সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার এলাকার হালুয়া। এ হালুয়া মীর কাসেমের প্রিয় খাবার বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে। অন্য খাবার তেমন না খেলেও মীর কাসেম আলী মাজার এলাকার হালুয়া খেয়েছেন।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি হাফিজ উদ্দিন কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে এসব খাবার পরিবেশন করেন। কয়েদি হাফিজ উদ্দিন মীর কাসেমের দেখাশোনায় নিয়োজিত ছিলেন।

জানা যায়, ফাঁসিতে ঝুলতে হবে এমন খবর শোনার পর অনেকটা ভেঙে পড়েছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জামায়াতের অন্যতম অর্থদাতা মীর কাসেম আলী। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২-এর ৪০ নম্বর সেলে (কনডেম সেল) নামাজ আর কোরআন তেলাওয়াত করেই নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলেন তিনি। তবে বিকালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করার সময় নিজের আবেগ আর ধরে রাখতে পারেননি মীর কাসেম। স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলার সময় তার দুই চোখ বেয়ে পানি ঝরছিল বলে নিশ্চিত করেছে কারাসূত্র।

সূত্র আরও বলছে, স্বজনদের কাছে বার বার তার নিখোঁজ ছেলের বিষয়টি জানতে চেয়েছিলেন। তবে স্বজনরা তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া ঘরে তৈরি খাবার তাকে খাওয়াতে পারেননি। এর আগে সকালে বাইরে থেকে ডেকে আনা চিকিৎসক ডা. মিজানুর রহমান মীর কাসেম আলীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। আগের দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকেও ডা. মিজানুর রহমান আসামির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছিলেন। মীর কাসেম আলীর শারীরিক অবস্থা স্বাভাবিক ছিল বলে কারা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন তিনি।

গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারাগারের জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক মীর কাসেমকে বিকালে তার স্বজনদের আসার বিষয়টি অবহিত করেন। মুহূর্তেই তার চেহারা বিবর্ণ হয়ে যায়। জেল সুপারেরর কোনো কথার উত্তর দেননি তিনি। এ সময় তিনি নিজের ৪০ সেলে জায়নামাজে বসে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত শুরু করেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে রুটি সবজি দিয়ে কারা কর্তৃপক্ষের দেওয়া সকালের নাস্তা খান মীর কাসেম।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-২-এর জেলার নাসির উদ্দীন জানান, মীর কাসেম আলীকে কারা বিধি অনুযায়ী সব সুবিধা দেওয়া হয়েছে। মীর কাসেম শারীরিকভাবে যথেষ্ট সুস্থ ছিলেন।

কারাসূত্র বলছে, বিকাল ৪টা ১৫ মিনিট থেকে ৫টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত ৩৮ জন স্বজনের মীর কাসেমের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষ হওয়ার পরই কুসুমগরম পানি দিয়ে গোসল করেন তিনি। এর পরই কারা মসজিদের ইমাম মুফতি হেলাল উদ্দীন ৪০ সেলে ঢোকেন মীর কাসেমকে তওবা পড়াতে। তবে নিজের তওবা নিজেই পড়বেন বলে জানিয়ে দেন তিনি। এ সময় মীর কাসেম অস্থির আচরণ করছিলেন। ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার আগে জেল সুপারের নেতৃত্বে চার জল্লাদ ৪০ সেলে প্রবেশ করেন। দুই হাত পেছন দিকে নিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। পরিয়ে দেওয়া হয় যমটুপি। দুই জল্লাদ মীর কাসেমের দুই কাঁধ ধরে ধীরে ধীরে নিয়ে যান ফাঁসির মঞ্চের দিকে।

কাশিমপুর কারাগার পার্ট-২-এর জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, বিকালে ১ ঘণ্টা ৩৫ মিনিটের সাক্ষাৎপর্বে মীর কাসেমের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়েছেন তার পরিবারের সদস্যসহ ৩৮ স্বজন। অবশ্য কারাগারের ভিতরে সাক্ষাতের উদ্দেশে ঢুকেছিলেন তিন শিশুসহ তার পরিবারের ৪৭ জন সদস্য। স্বজনদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় ৮-১০ জনের গ্রুপ করে তাদের সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হয়।
০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে