ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে : ওদের পরিবারে ঈদ এলো শোকের বারতা নিয়ে। কে জানতো- খুশির ঈদের মাত্র দু’দিন আগে তাদের চির বিদায় নিতে হবে এই দুনিয়া ছেড়ে। এ কারণে কষ্ট, শোকের মাত্রাটা বেশি।
গাজীপুরে অগ্নিকাণ্ডে মারা যাওয়া ৫ জন গতকাল নিজ বাড়িতে ফিরে এলেন, তবে সুস্থ-স্বাভাবিক অবস্থায় নয়; কফিনে মোড়া পোড়া মৃতদেহ হয়ে তারা ফিরলেন বাড়িতে। আর তাদের কফিন দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা।
চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি জানাযায় অংশ নিতে আসা হাজারো মানুষ। সবাই কেঁদেছেন তাদের জন্য। চোখের অশ্রুতে তাদের শেষ বিদায় জানালেন স্বজনরা। পরিবারের সুখ-শান্তির জন্য কারখানায় যারা দিন-রাত পরিশ্রম করতেন তাদের হারিয়ে এখন দিশাহারা অসহায় পরিবারগুলোও। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় চোখে-মুখে মলিনতার ছাপ।
গাজীপুরের টঙ্গিতে ট্যাম্পাকো কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে ৬ জনের বাড়ি সিলেটে। এর মধ্যে ৫ জনই হচ্ছেন গোলাপগঞ্জের সুন্দিশাইলে। এরা হচ্ছেন- সুন্দিশাইল গ্রামের মৃত তমদির আলীর ছেলে ওয়ালি আহমদ কুটি (৩২), একই গ্রামের মৃত মজর আলীর ছেলে হাসান সিদ্দিকী রহিম (৪৮), সোনা মিয়ার ছেলে এনামুল হক (৩৮), মৃত তমজিদ আলীর ছেলে সাইদুর রহমান (৪৮) ও পার্শ্ববর্তী কানিশাইল গ্রামের মৃত আবদুল করিমের ছেলে রেদওয়ান আহমদ (৩০)।
মারা যাওয়া অপরজন হচ্ছেন, নগরীর সুনারপাড়ার মাহতাবুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান মিজান (২৭)। তাদের মারা যাওয়ার খবর পেয়ে শনিবার রাতেই ঢাকায় ছুটে যান স্বজনরা। ঢাকা মেডিকেল থেকে লাশ নেন তারা। এরপর রাতেই সিলেটের উদ্দেশে রওয়ানা দেন।
সকালের দিকে ৬ জনের লাশ এসে সিলেটে পৌঁছে। এরপর লাশ নিয়ে যাওয়া হয় গোলাপগঞ্জের সুন্দিশাইল গ্রামে। সেখানে লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনরা। তখন গোটা এলাকায় শোক নেমে এসেছে। স্বজনরা জানিয়েছেন, আগুনে পুড়ে যারা মারা গেছেন তাদের শরীরের ৯৫ ভাগই ছিল দগ্ধ। অনেকেরই চেহারা চেনা যাচ্ছিল না। আর লাশের দুর্গন্ধ ছিল। এ কারণে কফিন থেকে লাশ বাইরে বের করা হয়নি। দুপুরের পর সুন্দিশাইল ঈদগাহ মাঠে তাদের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে এলাকার কয়েক হাজার মানুষ অংশ নেয়।
জানাযার নামাজের আগে ঈদগাহ মাঠে বক্তব্য রাখেন, গোলাপগঞ্জ পৌরসভার চেয়ারম্যান সিরাজুল জব্বার চৌধুরী। এ সময় তিনি নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। এ সময় তিনি বলেন, ঈদের আগে এই ঘটনা গোটা গোলাপগঞ্জবাসীকে শোকাহত করেছে। এ সময় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান রুহেল আহমদও বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, যারা মারা গেছেন তারা আর ফিরে আসবেন না। কিন্তু যাতে পরিবার ক্ষতিপূরণ পায় সে ব্যাপারে তিনি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনিও শোকাহত পরিবারবর্গকে গভীর সমবেদনা জানান। নিহতদের মধ্যে একজন মিজানুর রহমান মিজান সিলেট নগরীর বাসিন্দা।
নিহতের সহপাঠী আতিকুর রহমান নগরী বলেন, মিজানের মরদেহ ঢাকা মেডিকেলে শনাক্ত করেছেন তার বাবা ও চাচা। তিনি বলেন, এ মাসের বেতন পেয়ে রোববার বাড়িতে আসার কথা ছিল। কিন্তু সে আশা আর পূরণ হলো না। মিজানের পরিবারের ঈদের খুশি দগ্ধ হলো আগুনে। এমজমিন
১২ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি