নিউজ ডেস্ক: দিনক্ষণ ঠিক। কোরবানির পশু কেনার পর্বও শেষ করেছেন অনেকে। প্রস্তুতির পালা প্রায় শেষ। এখন অপেক্ষা কেবল রাত পোহানোর। ভোর হলেই মঙ্গলবার। ১০ জিলহজ। পবিত্র ঈদুল আজহা। পশু কোরবানির মধ্যদিয়ে আগামীকাল সারা দেশে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব কোরবানির ঈদ উদ্যাপিত হবে।
আল্লাহর উদ্দেশে নিজের জানমাল ও প্রিয়তম জিনিস সন্তুষ্টচিত্তে বিলিয়ে দেওয়ার এক সুমহান শিক্ষা নিয়ে প্রতিবছর ঈদুল আজহা উদ্যাপন করা হয়। ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী কোরবানি করা ওয়াজিব। আল কোরআনের সুরা কাউসারে কোরবানির মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘অতএব তোমার পালনকর্তার উদ্দেশে নামাজ পড়ো এবং কোরবানি করো।’ সুরা হজে বলা হয়েছে, ‘কোরবানি করার পশু মানুষের জন্য কল্যাণের নির্দেশনা।’
কোরবানির ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। প্রায় চার হাজার বছর আগে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর ছেলে হজরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু পরম করুণাময়ের অপার কুদরতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর সেই ত্যাগের মহিমার কথা স্মরণ করে মুসলিম সম্প্রদায় জিলহজ মাসের ১০ তারিখে আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করে থাকে। তবে ঈদের পরও দুই দিন অর্থাৎ ১১ ও ১২ জিলহজেও পশু কোরবানি করার ধর্মীয় বিধান আছে।
কাল সকালেই মুসল্লিরা নিকটস্থ ঈদগাহ বা মসজিদে আসবেন ঈদুল আজহার দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায়ের জন্য। খতিব নামাজের খুতবায় তুলে ধরবেন কোরবানির তাৎপর্য। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ধনী-গরিব-নির্বিশেষে সবাই একত্রে নামাজ আদায় করবেন। শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন কোলাকুলির মাধ্যমে।
নামাজ শেষে অনেকেই যাবেন কবরস্থানে স্বজনের কবর জিয়ারত করতে। আনন্দের দিনে অশ্রুসিক্ত হয়ে চিরকালের জন্য চলে যাওয়া স্বজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আল্লাহর দরবারে করজোড়ে মোনাজাত করবেন তাঁরা। এরপর হজরত ইব্রাহিম (আ.)-এর মহান আত্মত্যাগের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজের ভেতরের পশুত্বকে পরিহার করা ও আল্লাহর অনুগ্রহ লাভের আশায় পশু কোরবানি করবেন।
ঈদুল আজহায় পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি কেনাকাটা গৌণ। এই ঈদের প্রস্তুতির মধ্যে প্রধান বিষয় হলো পশু ক্রয়। অবশ্য যাঁরা ঈদের উৎসবে রাজধানী ঢাকা বা অন্য কোনো শহরের কর্মস্থল থেকে তাঁদের গ্রামের বাড়িতে ফেরেন তাঁদের প্রস্তুতি শুরু হয় যানবাহনের টিকিট সংগ্রহ করা থেকে বাক্সপেঁটরা গোছানোর মধ্য দিয়ে। এরপর যাত্রা করা।
বৃহস্পতিবার থেকেই ঢাকা থেকে ঘরে ফেরার পালা শুরু হয়েছে। গতকাল রবিবার শহরের সড়কগুলো ছিল আধাফাঁকা। ভিড় ছিল পশুর হাট, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে। ঈদের যাত্রায় ভোগান্তি কম নয়, এবারও তার কোনো হেরফের হয়নি। প্রিয়জনের সান্নিধ্য লাভের আনন্দ, আপন ঠিকানায় ফেরার অনুভূতির তুলনায় যাত্রার দুর্ভোগ মেনে নিয়ে সপরিবারে গ্রামে ফিরে গেছে অসংখ্য মানুষ।
দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
ঈদের দিন রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় ও ‘ঈদ মোবারক’ খচিত পতাকা শোভিত হবে। পাশাপাশি সব সরকারি-বেসরকারি ভবনেও জাতীয় পতাকা ও ঈদ মোবারক খচিত পতাকা উত্তোলন করা হবে। কেন্দ্রীয় কারাগারসহ দেশের সব কারাগার, সরকারি হাসপাতাল, ভবঘুরে কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম এবং শিশু ও মাতৃসদনে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
১২ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর