সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১১:৩৪:১৬

হাসপাতালে সেই বৃক্ষমানব আবুল বাজানদারের অন্যরকম ঈদ

হাসপাতালে সেই বৃক্ষমানব আবুল বাজানদারের অন্যরকম ঈদ

জাকিয়া আহমেদ : একসময়ের বৃক্ষমানবখ্যাত আবুল বাজানদার এবার ঈদ করছেন হাসপাতালে।  ঈদ নিয়ে তার পরিকল্পনা জানতে চাইলে উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলেন, ‘এ আমার অন্যরকম ঈদ। এমন ঈদ যে আমার জীবনে আসবে কোনওদিন ভাবিনি। কাল সবাই মিলে নতুন পোশাক পরে ঘুরতে যাব।’

অপারেশন না হলে বৃক্ষমানবখ্যাত আবুল বাজানদার হয়ত নিজ হাতে খেতেই পারতেন না। যদিও এখন হাত দুটি ব্যবহার করে দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজই তিনি করতে পারছেন।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে তাকে পর্যবেক্ষণে রেখেছেন চিকিৎসকরা। এবার হাসপাতালে অন্যরকম ঈদ উদযাপন করবেন আবুল বাজানদার।

সোমবার (১২ সেপ্টেম্বর) হাসাপাতালের রুমে ঢুকেই দেখা গেল হাসপাতালের বিছানার ওপরে রাখা আকাশি-বাদামি আর গোলাপি রঙের দুটো পাঞ্জাবি। নিজের জন্য কোনটা রাখবেন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না বাজানদার।

হঠাৎ এই প্রতিবেদককে দেখে হাসিমুখে বললেন, আপা আপনি যেটা বলবেন সেটাই রাখবো।  আপনিই পছন্দ করে দেন।  গোলাপিটা বেশি সুন্দর বলতেই একমুখ হাসি ছড়িয়ে পড়লো মুখে।

নিজের জন্যতো পাঞ্জাবি পছন্দ করলেনই, সঙ্গে মেয়েকেও নিজ হাতে পরিয়ে দিলেন ঈদের নতুন জামা।  তারপর মেয়েটাকে কোলে জড়িয়ে বসে রইলেন খানিকটা সময়, যেন এতোদিন লুকিয়ে থাকা বাবামনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে তার।

চোখে জল নিয়ে বললেন, ‘মেয়েকে তো কোলেই নিতে পারতাম না, জড়িয়ে ধরতে পারতাম না। এখন আমি সব পারি। নিজের হাতে গোসল করতে পারি, খাবার খেতে পারি, কলম ধরতে পারি, নিজের পোশাকটাও বদলাতে পারি।’

আবুলের দেখাশোনা করছেন কাজী বাহার। তিনি আবুলের জন্য এবারও পাঞ্জাবি নিয়ে এসেছেন। আবুলের স্ত্রী হালিমার জন্য এনেছেন সালোয়ার কামিজ আর মেয়ের জন্য লাল টুকটুকে এক ফ্রক। আর সেই ফ্রক গায়ে নিয়ে সাড়ে তিন বছরের জান্নাতুল ফেরদাউস তাহিরার খুশি ছিল দেখার মতো।

স্ত্রী হালিমার উদ্দেশ্যে আবুল বলেন, ‘ওর কষ্ট কমিয়ে দিয়েছি। ওর প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নাই। আমার জন্য যা করছে সেটা আর কেউ করবে না।’

আবুল যখন এসব কথা বলছিলেন পাশে বসেই তখন হাসছিলেন আবুল বাজানদারের স্ত্রী হালিমা খাতুন।

স্বামীর এমন কথায় লজ্জা পাচ্ছেন? এ প্রশ্ন করতেই উত্তর দিলেন, ‘সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন। উনি যেন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যান। হাসপাতালের এই রুমটাই এখন আমার সংসার হয়ে গেছে। বিকালের দিকে মেয়েকে নিয়ে একটু নিচে যাই, হাঁটি। ভালো লাগে। মেয়েটাও এই রুমে বদ্ধ থেকে মাঝে মাঝে অস্থির হয়ে ওঠে। নিচে নিয়ে গিয়ে খেলনা কিনে দিলে শান্ত হয়। তাছাড়া সারাদিন রুমে টেলিভিশন দেখে।

টেলিভিশন কে দিলো জানতে চাইতেই পাশ থেকে আবুল বলেন, ‘বারী ভাই (প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারী) দেশে এসে আমাকে দেখতে আসছিলেন। তিনিই টিভি আর আমার মেয়ের খাবার গরম করার জন্য একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেন উপহার দিয়েছেন। সারাদিন বসে বসে এখন টিভি দেখি।’ টেলিভিশনের কোন অনুষ্ঠান ভালো লাগে জানতে চাইলে বলেন, যে কোনো গানই ভালো লাগে।

প্রসঙ্গত, গত ৩০ জানুয়ারি খুলনা থেকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি হন আবুল বাজানদার। গত ১০ বছর ধরে তিনি বিরল রোগ এপিডার্মোডিসপ্লাসিয়া ভ্যারুসিফরমিস-এ আক্রান্ত ছিলেন।

হাতে গাছের শেকড়সদৃশ মাংসপিণ্ড তৈরি হওয়ার এ রোগে আক্রান্ত আবুল পরিচিতি পান ‘বৃক্ষমানব’ হিসেবে। তিনি বিশ্বের তৃতীয় রোগী যিনি এ রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন।

তবে গত ৯ মাসে আবুলের হাতে পায়ে মোট ১০ বার অস্ত্রোপচারের ফলে তার হাত শেকড়মুক্ত হয়েছে। আঙ্গুলগুলো হয়েছে দৃশ্যমান। হাতের ব্যান্ডেজও খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে সুস্থ আবুলকে আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে জানান বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. সামন্ত লাল সেন।

তিনি বলেন, আবুলের হাত থেকে ফেলে দেওয়া মাংসপিণ্ড আবার ফেরত আসার আশঙ্কা রয়েছে কিনা এ বিষয়ে কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার করার জন্য দেশের বাইরে তার রক্ত, টিস্যু প্রভৃতি পাঠানো হয়েছে। আপাতত আবুল যথেষ্ঠ সুস্থ আছে। পায়ের ব্যান্ডেজও হয়তো ঈদের পর খুলে দেওয়া হবে। -বাংলা ট্রিবিউন
১২ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে