মঙ্গলবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৬:২০:১৬

১৪ হাজার কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ১৪ লাখ, গরু জবাই করে শিশুরাও!

১৪ হাজার কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ১৪ লাখ, গরু জবাই করে শিশুরাও!

নিউজ ডেস্ক : ঈদুল আযহায় পশু জবাইয়ের জন্য ১৮ বছরের নিচে শিশু-কিশোরদের ব্যবহার না করার যে অনুরোধ জানানো হয়েছিল সরকারের সেই নির্দেশনা মানেননি অনেকেই।  

মঙ্গলবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশু জবাই করতে ১৮ বছরের কম বয়সী মাদ্রাসার ছাত্রদের দেখা গেছে।  

জানা গেছে, ঈদুল আজহার আগে কোরবানির পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ নিয়ে এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ১৮ বছরের কম বয়সী মাদ্রাসার ছাত্রদের কোরবানির পশু জবাইয়ের কাজে ব্যবহার করা যাবে না।  এ নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সিটি করপোরেশনগুলো কাজ করবে।  কিন্তু সিটি করপোরেশনের লোকজনকে এ ব্যাপারে তদারকি করতে দেখা যায়নি।

এদিকে এর আগে এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল কওমি মাদ্রাসাগুলো।

সারাদেশে কওমি মাদ্রাসাগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ কোরবানির পশু জবাই এবং চামড়া সংগ্রহের কাজ করে থাকেন।

তাদের কেউ কেউ বলছেন, ১৮ বছরের নিচে শিশুদের তারা সরাসরি জবাইয়ের কাজে নিয়োজিত করেন না।  তবে অনেকেই বলছেন, সরকারের এ নির্দেশনা মানতে গেলে তাদের চামড়া সংগ্রহের মাধ্যমে আয়ের পরিমাণ অনেকটাই কমে যাবে।

বাংলাদেশে শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, দেশে প্রায় ১৪,০০০ কওমি মাদ্রাসা রয়েছে, যার শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ।  দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এ মাদ্রাসাগুলোর আয়ের উৎস মূলত. দান-অনুদান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের দুটো সময়ে তারা বড় ধরনের আয় করেন- একটি রমজান মাসে যাকাত থেকে এবং অপরটি ঈদুল আযহায় কোরবানির পশুর চামড়া থেকে।

স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়নরত আখতার প্রায় ১৪-১৫ বছর বয়স থেকে পশু জবাই করে আসছেন।  ছোট বয়সে পশু জবাইয়ে চাপ অনুভব করেছেন কি-না জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, খারাপ লাগলেও এটাকে আমরা খারাপভাবে নিই না।  কারণ এটা আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করি।  এর মাধ্যমে যেই অর্থটা আসে সেটা দিয়ে আমাদের লালন-পালন করা হয়, আমাদের কিতাবাদি কেনা হয়।

১৮ বছর বয়সী আরেকজন শিক্ষার্থী আমজাদ হোসেন কোরবানির পশু জবাই করছেন প্রায় ১২ বছর বয়স থেকে।  তিনি বলেন, জবাইয়ের ক্ষেত্রে বয়সটা তার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি।


মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহিত কামাল গণমাধ্যমকে বলেণ, ১৮ বছরের আগে মানুষের 'এজ অফ মেজরিটি' আসে না।  এসময় দেখে দেখে শেখার প্রবণতা থাকে।  কোরবানির সময় কিশোররা যে গরু জবাই করে সেটার মোটিভটা তার ধর্মীয় জ্ঞান থাকলেও পুরোপুরি বোঝে না।  সুতরাং এটি তার মধ্যে ছাপ ফেলতে পারে।  ১৮ বছরের নিচে শিশুরা যাতে জবাই না করে এ ব্যাপারে সচেতন থাকা উচিত।

ঢাকার আরেকটি কওমি মাদ্রাসা জামিয়া মোহাম্মদিয়া আরাবিয়ার অধ্যক্ষ মৌলানা আবুল কালাম বলেন, তারা ১৮ বছরের নিচে শিশু-কিশোরদের জবাই করার কাজে ব্যবহার করেন না।  তবে তারা সহযোগী হিসেবে কাজ করে।

সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, ১৮ বছরের নিচে শিশুরা জবাই বা মাংস কাটার কাজে নিয়োজিত হলে শারীরিকভাবেও আহত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।  মানসিকভাবেও সবাই এ কাজের জন্য প্রস্তুত থাকেন না।

মনস্তত্ববিদ অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, ধর্মীয় অনুশাসনের দিকে শিশুদের মনোযোগী করার ক্ষেত্রে এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখার সুযোগ থাকলেও এবিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।  তিনি বলেন, খুব স্বল্পসংখ্যক হলেও প্রতিবছর অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কিছু রোগী পান যারা পশু জবাইর দৃশ্য দেখে ভয় পায়।

অধ্যাপক কামাল মনে করেন, কোরবানির কাজে নিয়োজিত হলে শিশু-কিশোরদের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে এমনটা নিশ্চিতভাবে বলার সুযোগ নেই। তবে অপ্রাপ্তবয়স্কদের এ ধরনের সরাসরি কাজ থেকে বিরত রাখাই ভালো।
১৩ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে