বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:৫২:৪৮

৬টি পশু কোরবানি দিলেও মাংস রাখেন না এক টুকরোও

৬টি পশু কোরবানি দিলেও মাংস রাখেন না এক টুকরোও

রাফসান জানি : পুরনো ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের বাসিন্দা শাহিদা মোরশেদ। একাই কোরবানি দিচ্ছেন ৬টি পশু। তবে ৬টি পশু কোরবানি দিলেও নিজের বাড়িতে এক টুকরো মাংসও রাখেন না। যারা কোরবানি দিতে পারেন না, পুরোটাই বিলিয়ে দেন তাদেরকে।

আশেপাশের অসচ্ছল মানুষগুলো ঈদের দিনে যাতে একটু ভাল খাবার খেতে পারেন, ঈদ উদযাপন করতে পারেন, সেটাই তার লক্ষ্য। বছরের পর বছর পারিবারিক ঐতিহ্য রক্ষা করে এ নিয়ম পালন করে আসছেন তিনি।

এবারও ব্যতিক্রম হয়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের (পুরাতন ৬৩) সাবেক কমিশনার শাহিদা মোরশেদের বাড়িতে। কোরবানি দেওয়ার জন্য বাড়িতে আনা হয়েছে ৩টি গরু ও ৩টি খাসি। প্রথমদিনে একটি গরু কোরবানি দেওয়া হয়েছে। আর এর সবটুকু মাংস প্রতিবেশিদের দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দিনে কোরবানি দেওয়া হবে বাকি পশুগুলো। মাংস যাতে সমানভাবে বন্টন হয়, সেজন্য  বাড়িতে কিনে আনা হয়েছে একই মাপের প্লাস্টিকের বক্স। প্রতিটি বক্সের ধারণ ক্ষমতা দুই কেজি ।

শাহিদা মোরশেদ বলেন, ‘এটা আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। আমার স্বামী গোলাম মোরশেদ একাধারে ৩০ বছর এই এলাকার কমিশনার ছিলেন। আমার শ্বশুড়ের সময়েরও আগে থেকে পারিবারিকভাবে আমরা এটা করে আসছি। প্রতিবেশি অসহায় মানুষদের সঙ্গে ঈদ ভাগাভাগি করে নেওয়ার জন্য আমরা এটা করে থাকি। লোক দেখানোর জন্য নয়। আল্লাহ আমার পরিবারকে অনেক দিয়েছেন। আমরা অসহায় মানুষদের দিয়ে থাকি। এলাকার অসহায়-গরিব মানুষদের মাংস দেওয়ার মাধ্যমে একটু বাড়তি আনন্দ দিয়ে ঈদ আনন্দে শামিল হওয়াই মূল উদ্দেশ্য।’

২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত কমিশনারের দায়িত্ব পালন করা এই সাবেক কমিশনার জানান, ‘পারিবারিকভাবে একসঙ্গে  পশু কোরবানি দেওয়ার রেওয়াজ চলে এসেছে। পরিবারের অন্য সদস্যরাও বংশ পরম্পরায় এ ঐতিহ্য ধরে রাখতেন চান।’

এই ঐতিহ্য শুধুমাত্র শাহেদা মোরশেদের পরিবারে নয়। পুরনো ঢাকার বেশ কিছু বিত্তশালী পরিবার রয়েছে, যারা একাধিক গরু কোরবানি দেন শুধুই দরিদ্র মানুষের মধ্যে মাংস বিতরণের জন্য। নিজেরা এক টুকরো মাংসও রাখেন না।

এমনই আরেকজন পুরনো ঢাকার বিত্তশালী ব্যবসায়ী হাজী আজগর উল্লাহ। তিনি জানান, ‘এবার তাদের বাড়িতে আনা হয়েছে ৫টি গরু। প্রথম দিনে দুটি, দ্বিতীয় দিনে দুটি ও ঈদের তৃতীয় দিনে একটি গরু কোরবানি দেওয়া হবে। সবটুকু মাংস অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে এক্ষেত্রে শুধুমাত্র যারা কোরবানি দিতে পারেন না, কেবল তাদেরকেই দেওয়া হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমি পূর্বপুরুষদের দেখেছি, এভাবে অসহায় মানুষের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করতে। আমিও করছি। ভবিষ্যত প্রজন্মও করবে। এটা আমাদের ঐতিহ্যের পাশাপাশি অসহায়দের মুখে হাসি ফুটনোর একটা মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।’

পুরনো ঢাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেক আগে থেকেই বকশিবাজার, মালিটোলা, বংশালের কয়েকটি পরিবার এককভাবে ২০ থেকে ৩০টি গরু কোরবানি দিয়ে, গরিব-দুঃখীদের মধ্যে মাংস বিলিয়ে দেন।

বংশালের ব্যবসায়ী হাজী বুরহান উদ্দিন বলেন, ‘আগে তো একেকজন অনেকগুলো গরু কোরবানি দিতেন। তারপর সেই মাংস সবার বাড়ি বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এসব বাড়ির সামনে কেনা গরুগুলো একসঙ্গে রাখার পর, ছোট্ট একটা বাজারের মতো মনে হতো। কোরবানির গরু দেখতে লোকজনের ভিড় জমতো এসব বাড়ির সামনে। ঈদের টানা তিনদিন চলতো কোরবানি। এখনও কিছু পরিবার আছে, যারা অসহায় মানুষের জন্য কোরবানির মাংস বিলি করে। কিন্তু সংখ্যাটা কমে আসছে।’

বকশিবাজারের বাসিন্দা রমিজ উদ্দিন মনে করেন, ‘সমাজের বিত্তশালীরা এমন উদ্যোগ আরও বেশি করে গ্রহণ করলে ধনী-গরীব সবার মাঝে একটা সামাজিক সাম্য তৈরি হবে। যা সবার মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করবে।’ - বাংলা ট্রিবিউন
১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে