নজরুল ইসলাম : বিএনপির নির্বাহী কমিটি গঠনে কাউন্সিলে অনুমোদিত গঠনতন্ত্র অনুসরণ করা হয়নি। এতে করে জটিলতায় পড়েছে বিএনপি। যার কারণে ৫০২ সদস্যের নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেও দলের গঠনতন্ত্র ছাপতে বিলম্ব হচ্ছে। এতে করে গঠনতন্ত্রের সঙ্গে দলের ঘোষণাপত্র ছাপাও বিলম্ব হচ্ছে।
কারণ বিএনপির ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র একই সঙ্গে বই আকারে ছাপা হয়। বিএনপির নেতাদের ভাষ্য- দলের চেয়ারপারসন চাইলে পরবর্তী কাউন্সিলে অনুমোদনসাপেক্ষে যে কোনো সময় কমিটির আকার বাড়াতে বা কমাতে পারেন। দলের গঠনতন্ত্রে চেয়ারপারসনকে সেই ক্ষমতা দেয়া আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে দলের গঠনতন্ত্রের যেসব সংশোধনী অনুমোদন দেয়া হয়েছে, তা ড্রাফট আকারে চূড়ান্ত করা হয়েছে। দ্রুতই এগুলো ছাপতে দেয়া হবে। বড়জোর আরও দু-এক সপ্তাহ লাগতে পারে।
জানা যায়, ৫ম কাউন্সিলের পর ঘোষিত কমিটি ছিল ৩৮৬ সদস্যের। কিন্তু ষষ্ঠ কাউন্সিলে ৫৭টি নতুন পদ সৃষ্টি করা হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারপারসন ১০ শতাংশ সদস্য বাড়াতে পারেন। সেটি যোগ করে কমিটির আকার হয় ৪৪৯ সদস্যের।
কিন্তু বিএনপি যে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করেছে, তাতে মোট সদস্য ৫০২ জন। এখন পর্যন্ত অনুমোদিত গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে অন্তত ৫৩ জনকে নির্বাহী কমিটিতে জায়গা দেয়া হয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, গত ১৯ মার্চ রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে অনুষ্ঠিত বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে নির্বাহী কমিটিতে কর্মকর্তা পর্যায়ে ৫৭টি পদ বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। আগে কর্মকর্তা পর্যায়ের (সহসম্পাদক পর্যন্ত) পদ ছিল ১২১টি। সে হিসাবে এখন কর্মকর্তা পদ হওয়ার কথা ১৭৮টি। কিন্তু বিএনপি ঘোষণা করেছে ২০৯টি পদ।
দেখা যায়, কাউন্সিলে অনুমোদিত পদের চেয়ে কর্মকর্তা পর্যায়ে ৩১টি পদ বেশি বাড়ানো হয়েছে। সদস্য হওয়ার কথা ২৭১ জন। কিন্তু রাখা হয়েছে ২৯৩ জনকে। এখানেও অতিরিক্ত ২২ জনকে নেয়া হয়েছে। আগে কর্মকর্তা পর্যায়ে ১২১টি পদ বাদে সদস্য ছিল ২৩০ জন। তবে কার্যত বিএনপির গত নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্য সব মিলিয়ে ছিল ৩৮৬ জন। চলতি বছর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে সদস্যপদ বাড়ানোর কোনো প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়নি। কিন্তু ঘোষিত কমিটিতে দেখা গেছে, নির্বাহী সদস্য হচ্ছেন ২৯৩ জন। সে ক্ষেত্রে সদস্য বাড়ানো হয়েছে ৬৩ জন।
কাউন্সিলে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টাপদ সংশোধন করে বলা হয়, এটি হবে উপদেষ্টা কাউন্সিল। উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য কত হবে, তা নির্দিষ্ট থাকবে না। এটি চেয়ারপারসনের ওপর নির্ভর করবে। অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধন কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম। শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে কাউন্সিলে তার পক্ষে সংশোধনী প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করেন ওই কমিটির সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি এখন দেশের বাইরে রয়েছেন।
তবে সংশ্লিষ্ট এক নেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাউন্সিলে অনেকগুলো পদ বাড়ানো হয়েছিল। তবে কাউন্সিলে পদ বাড়িয়ে যে সংশোধনী পাস হয়েছে, এর বেশি নাম ঘোষণা করার কথা নয়।
তবে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘কাউন্সিলে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা ছিল না। আমরা পদ বাড়িয়েছি এবং সংখ্যা বাড়িয়েছি। তারপরও গঠনতন্ত্রে যদি আমরা কোনো কিছু যুক্ত করতে চাই সে ক্ষমতা দলের চেয়ারপারসনকে দেয়া আছে। চেয়ারপারসন তার নিজ ক্ষমতাবলে এটা করতেই পারেন। পরবর্তী কাউন্সিলে অনুমোদনসাপেক্ষে দলীয় চেয়ারপারসন গঠনতন্ত্রে সংশোধনী আনতে পারেন।’
১৯ মার্চ কাউন্সিল হলেও বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। গত ৬ আগস্ট কমিটি ঘোষণার পর এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, বিএনপির গঠনতন্ত্রের সংশোধনীগুলো এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। চূড়ান্ত করে গণমাধ্যমকে জানানো হবে। বিএনপির ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে দলের গঠনতন্ত্রে ভাইস চেয়ারম্যান পদ ১৭ থেকে বাড়িয়ে ৩৫টি করা হয়। প্রতিটি বিভাগে সাংগঠনিক সম্পাদক একজন এবং দু’জন করে সহসাংগঠনিক সম্পাদক। আগে প্রতি বিভাগে একজন করে সহসাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। নতুন কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে ১০ জনকে। আর সহসাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে ২০ জনকে। কুমিল্লা, ফরিদপুরকেও সাংগঠনিক বিভাগ করে গঠনতন্ত্রে যুক্ত করা হয়েছে।
এ ছাড়া কাউন্সিলে ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সম্পাদক, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সহসম্পাদক (সাতটি) অর্থনীতিবিষয়ক সহসম্পাদক, জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক সহসম্পাদক, প্রশিক্ষণবিষয়ক সহসম্পাদক (দুটি), গণশিক্ষাবিষয়ক সহসম্পাদক, ধর্মবিষয়ক সহসম্পাদক (তিনজন থেকে বাড়িয়ে চারজন,) শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সহসম্পাদক, বন ও পরিবেশবিষয়ক সহসম্পাদক, স্বনির্ভরবিষয়ক সহসম্পাদক, তাঁতবিষয়ক সহসম্পাদক, পরিবারকল্যাণ সহসম্পাদক (দুটি), স্বাস্থ্যবিষয়ক সহসম্পাদক (দুটি), প্রবাসীকল্যাণবিষয়ক সহসম্পাদক, বিজ্ঞানও প্রযুক্তি সহসম্পাদক, তথ্যপ্রযুক্তি সহসম্পাদক, মানবাধিকার সহসম্পাদক, ক্ষুদ্রঋণবিষয়ক সহসম্পাদক, উপজাতিবিষয়ক সহসম্পাদক পদ সৃষ্টি করা হয়।
বিএনপির ঘোষিত কমিটিতে দেখা যায়, কর্মসংস্থান সম্পাদক, ব্যাংকিং ও রাজস্ববিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দু’জনকে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আইন সম্পাদক করা হয়েছে দু’জনকে, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক পদ ভেঙে আলাদা করে দু’জনকে, তথ্য ও গবেষণা পদ ভেঙে দু’জনকে এবং প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদকও দু’জন করা হয়েছে। গঠনতন্ত্রে সহপ্রচার সম্পাদক একজন কিন্তু করা হয়েছে তিনজন, আইনবিষয়ক সহসম্পাদক তিনজনের স্থলে চারজন, একজন শিক্ষাবিষয়ক সহসম্পাদকের স্থলে দু’জন, একজনের স্থলে মহিলাবিষয়ক সহসম্পাদক দু’জন, একজনের পরিবর্তে শ্রমিকবিষয়ক সহসম্পাদক দু’জন, কাউন্সিলে শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সহসম্পাদক একজন অনুমোদন দেয়া হলেও কমিটি ঘোষণার সময় দু’জন দেখা যায়।
একইভাবে কাউন্সিল প্রশিক্ষণবিষয়ক সহসম্পাদক অনুমোদন দেয়া হয় তিনজন কিন্তু করা হয়েছে চারজনকে। কর্মসংস্থানবিষয়ক সহসম্পাদক একজন, প্রান্তিক জনশক্তি উন্নয়নবিষয়ক সহসম্পাদক একজন, ব্যাংকিং ও রাজস্ববিষয়ক সহসম্পাদক একজন করা হয়েছে। কাউন্সিলে স্বাস্থ্যবিষয়ক সহসম্পাদক দু’জন অনুমোদন দেয়া হলেও তিনজন করা হয়; নার্সেস ও স্বাস্থ্য সহকারী সহসম্পাদক একটি পদ করা হয়েছে। কিন্তু কাউন্সিলে বলা হয়েছিল স্বাস্থ্যবিষয়ক সহসম্পাদক হবেন দু’জন। এর মধ্যে একজন হবেন নার্স। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদক করা হয়েছে দু’জন, তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সহসম্পাদকও করা হয়েছে দু’জন। যুগান্তর
২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি