সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৮:৪৪:৫৯

‘মেয়েরে ছ্যাঁকা দিয়া মাথার তালু আর মগজ এক কইরা ফালাইছে’

‘মেয়েরে ছ্যাঁকা দিয়া মাথার তালু আর মগজ এক কইরা ফালাইছে’

নিউজ ডেস্ক: ‘ও মা, আমি বাইত যামু, এহানে থাউম না।’ নির্যাতনের শিকার নয় বছরের শিশু জান্নাতুল ফেরদৌস কিছুক্ষণ পরপর তার মা ফিরোজা বেগমের কাছে এই বায়না ধরছে। বায়না পূরণের উপায় নেই। জান্নাতুলের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সারা শরীরে ক্ষত। ১৫ সেপ্টেম্বর প্রথমে হাইমচর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে তাকে ভর্তি করা হয় চাঁদপুর সদর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে।

গতকাল রোববার এই হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, শিশুটির মাথার ক্ষত এখনো শুকায়নি, যন্ত্রণা রয়ে গেছে। চিকিৎসক মনিরুল ইসলাম বলেন, শরীরের বিভিন্ন স্থানের ক্ষত শুকালেও মাথার ক্ষত পুরোপুরি শুকায়নি। তবে বুধ বা বৃহস্পতিবার নাগাদ তাকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে।

গৃহকর্মী হিসেবে জান্নাতুল গাজীপুরে এক বাসায় কাজ করত। বাড়ি যেতে তার খুব মন চাইত। বিমানবন্দরে চাকরি করা ওমর ফারুক ও তাঁর স্ত্রী স্কুলশিক্ষিকা মণি বেগমের কাছে এ নিয়ে আবদার করত। আর এই আবদারের ‘অপরাধে’ তাকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়।

জান্নাতুলের মা ফিরোজা গতকাল বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েরে ছ্যাঁকা দিয়া মাথার তালু আর মগজ প্রায় এক কইরা ফালাইছে। আল্লার রহমতে আমার জান্নাতরে ফিরা পাইছি। যে মেয়েরে দ্যাখে, সে-ই চোখের পানি ফালায়। কী হইছিল জানতে চাইলেই মেয়ে ভয় পায়। ওরা আমার কইলজার ভিতরে আঘাত দিছে। আমি বিচার চাই।’

জান্নাতের মা ফিরোজা বেগম বলেন, আসামিপক্ষ মামলা প্রত্যাহার করতে নানা রকম প্রলোভন দেখাচ্ছে।
এত কম বয়সে জান্নাতুলকে কেন কাজে দিলেন জানতে চাইলে ফিরোজা বলেন, তাঁর খালাতো ভাই মোস্তফা সরদার মেয়েকে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছেন বলে এক বছর আগে নিয়ে যান তাঁর ভায়রা ওমর ফারুক ও মণি বেগম দম্পতির বাসায়। তারপর থেকে মেয়ের খোঁজ নিতে গেলেই মোস্তফা বলতেন, মেয়ে ভালো আছে। হাসি-খুশি আছে। গত এক বছরে ওমর ফারুক ও মণি বেগম কোনো টাকাপয়সা দেননি বলে জানালেন ফিরোজা।

মোস্তফা সরদার ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে গাজীপুরের ওই বাড়ি থেকে জান্নাতুলকে হাইমচরে নিয়ে যান। অবস্থা দেখে স্থানীয় লোকজন জান্নাতুলকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। এলাকাবাসীই মোস্তফা সরদারকে পুলিশে সোপর্দ করেন। জান্নাতুলের প্রতিবেশী চাঁদপুরের হাইমচর এলাকার শাহজাহান ভূঁইয়া বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় ওমর ফারুক, তাঁর স্ত্রী মণি বেগম ও মোস্তফা সরদারকে আসামি করা হয়। নির্যাতনের মামলায় অভিযুক্ত তিনজনই গ্রেপ্তার রয়েছেন।

চাঁদপুর সদর হাসপাতালের সার্জারি চিকিৎসক হাসানুর রহমান বলেন, শরীরজুড়ে জান্নাতের এত ক্ষত, যা গুনেও হিসাব করা মুশকিল। আঘাতের চিহ্ন দেখে মনে হয় তা খুব বেশি পুরোনো না। অনেক আঘাতের জায়গা লাল হয়ে ছিল। তবে জান্নাত আগের চেয়ে কিছুটা ভালো আছে। হাসপাতাল থেকে সার্বিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।

জান্নাতরা পাঁচ ভাইবোন। মা ফিরোজা বেগম থাকেন হাইমচর উপজেলার নয়ানী বাংলাবাজারের কাছে বেড়িবাঁধের পাশে একটি দোচালা ভাড়া ঘরে। জান্নাতুলের নানি সৈয়দি বেগম ভিক্ষা করে নিজের ও মেয়ের সংসার চালাচ্ছেন। আর জান্নাতের বাবা মন্টু মাতব্বর থাকেন চাঁদপুর শহরের নতুনবাজার এলাকায়। মন্টু মাতব্বর কখনো রিকশা চালান, আবার কখনো বাবুর্চির কাজ করেন।

জান্নাতুল কখনো স্কুলে যায়নি। বড় হয়ে কী হতে চাও জানতে চাইলে সে কিছুক্ষণ চুপ থাকে। পরে বলে, আম্মু জানে। একটু পরে বলে, ‘বড় হমু, চাকরি করমু।’-প্রথম আলো
২৬ সেপ্টেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে