সোমবার, ০৫ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:০৬:৪১

সন্দেহভাজন ৬ খুনির ছবি পুলিশের হাতে!

সন্দেহভাজন ৬ খুনির ছবি পুলিশের হাতে!

নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় ইতালীয় নাগরিক তাবেলা এবং রংপুরে জাপানি নাগরিক হোসে কোমিও হত্যায় জড়িত সন্দেহভাজন ৬ খুনির ছবি পুলিশের হাতে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে প্রযুক্তির সহায়তায় এসব সন্দেহভাজনদের ছবি তৈরি করেছে আমেরিকার এফবিআইএর আদলে বাংলাদেশ পুলিশের নবগঠিত ইউনিট 'পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন' (পিবিআই)। এর সূত্র ধরে শনিবার মধ্য রাত থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খুনিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হলেও রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে জাপানি নাগরিক হত্যার পর শনিবার রাতেই সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ডিভিশন ও র‌্যাবের গোয়েন্দারা রংপুরে ছুটে যান। প্রাথমিক তদন্ত শেষে দুই খুন একই সূত্রে গাঁথা বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ। এ ঘটনায় আটক ৪ জনের মধ্যে হীরার ভাই কামাল জাপানি নাগরিক হত্যায় জড়িত থাকতে পারে বলে র‌্যাবের একটি সূত্রে জানা গেছে। কামাল আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে রয়েছে অপর একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

জানতে চাইলে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের ডিআইজি ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান প্রতিবেদককে বলেন, পিবিআই প্রযুক্তিনির্ভর তদন্ত সংস্থা। আনুষ্ঠানিকভাবে পিবিআই যাত্রা শুরু পর থেকে প্রযুক্তির সহায়তায় একাধিক মামলার সুষ্ঠু তদন্ত সম্পন্ন করেছে। সম্প্রতি দুই বিদেশি নাগরিক খুন হওয়ার পর পিবিআই এই মামলার ছায়া তদন্ত করছে। পাশাপাশি ডিবির তদন্ত কর্মকর্তাদের সার্বিকভাবে সহায়তা করছে।

তিনি বলেন, ঘটনার পর প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে প্রযুক্তির সহায়তায় কম্পিউটারের সাহায্যে সন্দেহভাজন কয়েকজন খুনির ছবি তৈরির পর শনিবার মধ্য রাতে একাধিক স্থানে অভিযান চালানো হয়। এছাড়া পিবিআই আরো কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় রেখেছে। ওই তালিকা ধরেও অভিযান চালানো হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে খুব শিঘ্রই পিবিআই চাঞ্চল্যকর এই দুই মামলার রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবে।

গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনের মাত্র ৫/৬শ' গজ দূরে ৯০ নম্বর সড়কে দুর্বৃত্তের গুলিতে তাবেলা সেজার নামের এক ইতালীয় নাগরিক খুন হন। তিনি নেদারল্যান্ডভিত্তিক এনজিও আইসিসিওবিডির প্রজেক্ট ম্যানেজার এবং বারিধারায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সদস্য ছিলেন। এ ঘটনায় তাবেলার কর্মস্থলের পক্ষ থেকে বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করা হয়। মামলাটি ঢাকা মাহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করছে। পাশাপাশি তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সহায়তা করতে সিআইডি ও ডিবির সমন্বয়ে দুটি পৃথক কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া র‌্যাবের পক্ষ থেকেও মামলাটির ছায়া তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনার ৫ দিন পর রংপুরের মাহীগঞ্জে আটুলিয়া গ্রামে জাপানি নাগরিক হোসে কোমিওকে একই স্টাইলে গুলি করে হত্যা করা হয়।

রংপুরে অবস্থানরত র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক, লে কর্নেল আবুল কালাম আজাদ টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, দুই খুনের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে। এ ঘটনায় আটক হীরার ভাই কামাল জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখান থেকেই দুই খুনের রহস্যভেদ করা সম্ভব হবে।

জানা গেছে, গুলশানে ইতালীয় নাগরিক হত্যার পর পুলিশ সদরে জরুরি বৈঠকে বসেন আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা। সেখানে পিবিআইর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সব ইউনিটের পাশাপাশি পিবিআইর কর্মকর্তাদের খুনিদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেয়া হয়। কারণ পিবিআই একমাত্র প্রযুক্তিগতভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ ইউনিট। এরপর থেকে সন্দেহভাজন খুনিদের সন্ধানে নামে পিবিআই। তারা একাধিকবার প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে খুনিদের চেহারার বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন। এরপর কম্পিউটারের সাহায্যে তারা তাবেলার একাধিক খুনির ছবি তৈরি করেন। পরবর্তীতে ওই ছবিগুলো প্রত্যক্ষদর্শীদের দেখানো হয়। সেখান থেকে ৩ জনের ছবি খুনিদের চেহারার সঙ্গে মেলে বলে নিশ্চিত হয় পিবিআইয়ের সদস্যরা।

এরপর ওই ছবি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে সরবরাহ করা হয়েছে। পাশাপাশি পিবিআইয়ের সদস্যরাও খুনিদের অবস্থান বের করা চেষ্টা চালাচ্ছে। একইভাবে জাপানি নাগরিক হোসে কোমিওর খুনিদেরও ছবি তৈরি করেছে পিবিআই। এ ধরনের ৩টি ছবি জেলা পুলিশ কর্মকর্তাদের সরবরাহের প্রস্তুতি চলছে। পাশাপাশি নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে ছবির ব্যক্তিদের শনাক্তের চেষ্টাও চালানো হচ্ছে। তবে এসব ছবি হাতে পাওয়ার পর শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে ওই ছবির ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করবে না পুলিশ। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ ও নজরদারির আওতায় রাখা হবে।

তদন্ত কমিটিকে সহায়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের বাছাই করা দক্ষ ও চৌকস কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠন করা টিমের প্রধান ও সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. রেজাউল হায়দার প্রতিবেদককে বলেন, অনেক সময় প্রযুক্তির সহায়তায় তৈরি করা ছবি নিরপরাধ ব্যক্তির সঙ্গেও মিলে যায়। এ কারণে ওই ছবিকে তদন্তে সহায়ক হিসেবে রাখা হয়েছে। ছবির ব্যক্তির বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ খবর নেয়ার পর অ্যাকশনে যাওয়া হবে।

তিনি বলেন, ঢাকায় ইতালীয় নাগরিক হত্যায় এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে খুনিদের গ্রেপ্তারে সিআইডির বিভিন্ন ইউনিটের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। রংপুরের ঘটনার পর সেখানে সিআইডির ক্রাইম সিনের সদস্যরা গিয়েছিল। তারা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহের পর সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ডিভিশনের সদস্যরা রোববার ঢাকা থেকে রংপুরে গিয়েছে। দুই হত্যার ধরন একই। ধারণা করা হচ্ছে একই জাপানি নাগরিক হত্যায় একই ধরনের গুলি ব্যবহার করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কোনো সূত্র পাওয়া যাবে।

তাবেলা হত্যা মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি মাহবুব আলম প্রতিবেদককে জানান, সম্ভব্য কয়েকটি কারণ সামনে রেখে তদন্ত শুরু করা হলেও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার বিষয় দুটি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। তবে এখনো বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই। তাবেলার খুনিদের গ্রেপ্তারে ডিবি পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে।-যায়যায়দিন
৫ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে