ওমর ফারুক : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসি কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের প্লট বাতিল করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, ‘মুজাহিদের প্লটের ত্রুটি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ত্রুটি খোঁজা হচ্ছে। এছাড়া আদালতেরও কোনও লিখিত নির্দেশনা রাজউক পায়নি। এ কারণে মুজাহিদের প্লটের বরাদ্দ এখনও বহাল রয়েছে।’
রাজউক চেয়ারম্যান এম. বজলুল করিম চৌধুরী সোমবার বলেন, ‘মুজাহিদের নামে প্লট বরাদ্দের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। ত্রুটি পাওয়া গেলে রাজউক আইনগত ব্যবস্থা নেবে। ত্রুটি থাকায় ইতোমধ্যে মতিউর রহমান নিজামী ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্লট বাতিল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মানবতাবিরোধী অপরাধীদের প্লট বাতিল করার বিষয়ে আদালতের কোনও লিখিত নির্দেশনা আমরা পাইনি। এ কারণে ত্রুটি বের করে আমরা বিদ্যমান আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
উল্লেখ্য, জামায়াত নেতা মুজাহিদ উত্তরা আবাসিক এলাকার ১১ নম্বর সেক্টরের ১০ নম্বর সড়কে ৫ নম্বর প্লটটি বরাদ্দ নিয়েছিলেন বিএনপি শাসনামলে। প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পর তিনি মিশন ডেভেলপারকে দিয়ে ছয়তলা ভবন নির্মাণ করে বসবাস করতে থাকেন। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ প্রমাণিত হলে গত বছর ২২ নভেম্বর তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
গত ১৩ জুলাই মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে রাজউক এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মানবতাবিরোধী অপরাধীদের প্লটের বরাদ্দ বাতিলের ঘোষণা দেন। এরপর গত ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত রাজউকের ০৭/২০১৬তম সাধারণ সভায় মতিউর রহমান নিজামী ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্লট দু’টি বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই বাতিলের ক্ষেত্রে তাদের অপরাধ আমলে আনা হয়নি। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি হয় এ বছর ১০ মে এবং দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বর্তমানে যাবজ্জীবন কারাভোগ করছেন।
রাজউক সূত্র জানিয়েছে, মুজাহিদের প্লট বরাদ্দ ও ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত কোনও ত্রুটি সোমবার পর্যন্ত পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। এ কারণে রাজউকের নিয়ম অনুসারে তার প্লটের বরাদ্দ বাতিল করা যাচ্ছে না। তবে তার প্লটটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সূত্র জানায়, ত্রুটি পাওয়া না গেলে বিদ্যমান আইনে তার প্লট বাতিলের কোনও সুযোগ নেই।
গত ২৮ জুলাই অনুষ্ঠিত রাজউকের ০৭/২০১৬তম সাধারণ সভায় জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্লট দু’টির বরাদ্দ বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ সিদ্ধান্ত নিতে রাজউককে নিজামীর প্লটের পাচটি ত্রুটি এবং সাঈদীর প্লটের একটি ত্রুটি শনাক্ত করতে হয়েছে।
রাজউক জানিয়েছে, বনানী আবাসিক এলাকার ১৮ নম্বর সড়কের ৬০ নম্বর প্লটটি নিজামীর নামে বরাদ্দ দেওয়া হয় ২০০৬ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর। প্লটের দখল বুঝে পাওয়ার পর তিনি ডেভেলপার নিয়োগের মাধ্যমে সেখানে ভবন নির্মাণ করেন।
নিজামীকে এই প্লট বরাদ্দ দেওয়ার বেলায় রাজউকের প্লট বরাদ্দ বিধিমালা ১৯৬৯ এর ১৩/এ ধারা অনুসরণ করা হয়। ১৩/এ ধারাটি দেশের প্রতি যারা অবদান রেখেছেন তাদের প্লট বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রযোজ্য।
নিজামীর প্লটের ত্রুটিগুলোর মধ্যে রয়েছে (১) প্লট বরাদ্দকালীন মূল হলফনামা না থাকা ও দাখিলীয় ফটোকপি হলফনামায় নিজামীর সই না থাকা, (২) মিশন ডেভেলপারের আমমোক্তার হিসেবে রাজউকের অনুমোদন না পাওয়া, (৩) আবাসিক প্লটকে বাণিজ্যিক ব্যবহার, (৪) সরকারের অনুশাসন ছাড়াই নিজামীর নামে প্লট বরাদ্দ এবং (৫) পরবর্তী সময়ে পাওয়া সরকারের অনুশাসন রাজউকের বোর্ডসভায় (সাধারণ সভা) উপস্থাপন না করা।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্লটও বাতিল হয়েছে ত্রুটিজনিত কারণে। এ ত্রুটিটি ছিল কিস্তি খেলাপে। রাজউক ২০০৩ সালের ২২ ডিসেম্বর ৮৪৫৬ নম্বর কোডের মাধ্যমে সাঈদীর নামে প্লট বরাদ্দ দেয়। ২০০৪ সালের ২০ মার্চ সাঈদী রাজউক শাখা সোনালী ব্যাংকের ১০৩৭০ নম্বর রশিদের মাধ্যমে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। ২০০৫ সালের ১২ জুন রাজউক সাঈদীর নামে চূড়ান্ত বরাদ্দপত্র জারি করে।
জানা গেছে, দেলাওয়ার হোসাঈন সাঈদী আড়াই লক্ষাধিক টাকার প্রথম কিস্তি পরিশোধ করেন। প্লটের চূড়ান্ত বরাদ্দপত্র পাওয়ার পর তিনি দ্বিতীয় কিস্তির টাকা পরিশোধ করেননি। দ্বিতীয় কিস্তি পরিশোধের সময়সীমা ছিল ২০০৫ সালের ৩১ জুলাই পর্যন্ত। পরে এই সময়সীমা বাড়িয়ে ২০০৬ সালের ৩০ মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হলেও তিনি কিস্তি দিতে বিরত থাকেন। -বাংলা ট্রিবিউন।
২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম