ঢাকা : দলের কঠিন দুঃসময়ের কাণ্ডারি ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ’র মৃত্যুর দিনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কমিটি ঘোষণা করায় চরম ক্ষুব্ধ হয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা।
দলটির নেতাকর্মীরা মনে করেন, ১/১১ এর কঠিন দুঃসময়ের বিএনপির কাণ্ডারি হান্নান শাহ’র মৃত্যুর দিনে কমিটি দেওয়া এবং কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানানোকে দলে এবং দলের বাহিরে কেউ ভালো ভাবে নিচ্ছে না। সবাই সমালোচনা করছে বিএনপির এই রকম সিদ্ধান্তকে।
হতাশ বিএনপির এক কর্মী বলেন, দলের এরকম একটি সিদ্ধান্ত আমাকে হতাশ করেছে। অন্যদের কেমন লাগছে জানি না, তবে বিষয়টি আমার কাছে খারাপ লাগছে। দল করে কী হবে, দলের সিনিয়র এবং ত্যাগী নেতার মৃত্যুকে যদি এই ভাবে তুচ্ছ করা হয় তাহলে সাধারণ নেতাকর্মী মারা গেলে তো কেউ খবর ও নিবে না।
এদিকে মহিলা দলের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর ওপর ক্ষুদ্ধ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলটির অন্যতম প্রভাবশালী নেতা মির্জা আব্বাস।
তিনি বলেন, এ ধরনের ঘটনায় আমি খুবই ক্ষুব্ধ হয়েছি। যখন আমাদের অন্যতম নির্ভিক ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক সহকর্মীকে চিরদিনের মতো হারিয়েছি, যখন আমরাসহ দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা শোক পালন করছে, বিএনপি যখন তাকে সর্বোচ্চ সম্মান জানিয়ে তার অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দলীয়ভাবে ৪ দিনের শোক কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ঠিক সেই মুহূর্তে শোকের দিনে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কমিটি ঘোষণা দেওয়াটা সমাচিন হয়নি। কিন্তু কী কারণে একেই দিনে আমাদের শোর্কাত সময়ে গতকাল কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।
মির্জা আব্বাস আরো বলেন, দলের চেয়ারপারসন যেকোনো সময় দলের অঙ্গ সংগঠনের কমিটি গঠন করতে পারেন, সে এখতিয়ার ম্যাডামের আছে কিন্তু কোনো সময় মিডিয়ায় প্রকাশ করবে তা দপ্তরের দায়িত্বের মধ্যই পড়ে। তিনি বলেন, এই কমিটি ঘোষণা চারদিন পরে করলে তো কোনো সমস্যা হতো না। তিনি মনে করেন এজন্য দায়ী সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু। টিপুর অদক্ষতার জন্যে দল সমালোচনার সম্মুক্ষীণ হতে হয়েছে এজন্য তার ওপর চরম ক্ষুদ্ধ মির্জা আব্বাস।
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, আমি দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের অনুমতি ছাড়া কোনো কাজ করি না। আমার ওপর যখন যা নির্দেশ আসে, তাই আমি পালন করি। এর বাইরে আমার কিছু বলার নেই।
মধ্যম সারির এক নেতা বলেন, এর আগেও বিএনপির নতুন দপ্তরে ৬ জুলাই কমিটিতে নাম না থাকার পরও ঘোষণার পর নাঙ্গলকোটের ব্যবসায়ী নেতা মোবাশরের নাম জালিয়াতির করে নাম বসানো হয়। যার নাম মিডিয়ার সামনে দলের মহাসচিবের ঘোষণা দেওয়া তালিকায় ছিল না।
মহিলা দলের কমিটি ঘোষণা নিয়ে আরেক নেতা বলেন, সকাল ১১.৫০ মি. মহাসচিবের শোকবাণী, ১.৪৮ মি. চেয়ারপারসনের শোকবাণী তারপর ২.৩৭ মিনিটে শোকের মাঝে কী কারণে কার স্বার্থে টিপু মহিলা দলের প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে শাহজালাল (র.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছে আ স ম হান্নান শাহর মরদেহ।
আনুষ্ঠানিকতা শেষে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার মহাখালীর ডিওএইচএসের বাসায়। প্রিয় নেতার মরদেহ দেখে সেখানে উপস্থিত নেতাকর্মীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
হান্নান শাহ্’র মরদেহ গ্রহণ করতে পরিবারের সদস্য ও বিএনপির নেতারা বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন। হান্নান শাহ্’র ছোট ছেলে শা্হ রিয়াজুল হান্নান ও মেয়ে শারমিন হান্নান সুমি মরদেহের সঙ্গে ছিলেন।
লাশ গ্রহণ করতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন হান্নান শাহ্’র বড় ছেলে শা্হ রেজাউল হান্নান, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সহদফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছায়েদুল ইসলাম বাবুল, আকতারুজ্জামান বাচ্চু, জাকির হোসেন মিজান প্রমুখ।
ডিওএইচএসের বাসায় দলীয় নেতাকর্মী, আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা হান্নান শাহ্’র প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তার মরদেহ সম্মিলিত সামরিক হাসাপাতালের হিমঘরে নিয়ে যাওয়া হয়।
হান্নান শাহ্’র মৃত্যুতে মঙ্গলবার থেকে চারদিনের শোক ঘোষণা করেছে বিএনপি। শোকের দ্বিতীয়দিনে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশের অফিসে দলীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা ও কালো পতাকা উত্তোলন করা হয়।
কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে খোলা শোকবইতে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা স্বাক্ষর করেন। ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা উন্মুক্ত থাকবে।
হান্নান শাহ্’র নিজ এলাকা গাজীপুরেও পালন করা হচ্ছে শোক। বিভিন্ন মসজিএদ তার রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
হান্নান শাহ্’র বড় ছেলে শা্হ্ রেজাউল হান্নান গণমাধ্যমকে জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় মহাখালী ডিওএইচএস মসজিদে, বেলা সাড়ে ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় এবং জোহরের পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তার নামাজে জানাজা হবে।
পরে হান্নান শাহ্’র মরদেহ আবারো সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হবে। শুক্রবার সকালে সড়কপথে গাজীপুরে নিয়ে যাওয়া হবে তার মরদেহ।
ওইদিন সকাল ৯টায় জয়দেবপুর রাজবাড়ী মাঠে, সকাল সাড়ে ১০টায় কাপাসিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ও জুমার পর নিজ গ্রাম চালাবাজার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে নামাজে জানাজা শেষে বাবার কবরের পাশেই হান্নান শাহকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হবে।
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি