মঙ্গলবার, ০৬ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:৪২:৪৪

দেশের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্মান, প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন

দেশের জন্য শ্রেষ্ঠ সম্মান, প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম : দেশের জন্য এক দুর্লভ অভাবনীয় শ্রেষ্ঠ সম্মান বয়ে আনায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আন্তরিক অভিনন্দন। বুকের সমস্ত উষ্ণতা দিয়ে দিগ্বিদিক কাঁপিয়ে চিৎকার করে যদি বলতে পারতাম জয়তু হাসিনা, জয়তু বাংলাদেশ, জয় বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতার জয়, জয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার জয়। তাহলে বুকটা কতইনা হালকা হতো। কত চেষ্টা করি প্রাণখুলে হাসতে, আনন্দে ভাসতে। কিন্তু কখনো নির্ভেজাল অম্নান প্রাণখোলা হাসি হাসতে পারি না। বড় হতাশ হয়ে অন্ধকারে যখন পথ চলি তখন ভাবি সাড়ে সাত কোটি বীর বাঙালি নিয়ে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। আজ ১৬-১৭ কোটি বাঙালি, এখনো তাদের মুক্তি এলো না, তারা প্রাণখুলে হাসতে পারল না, নিরাপদে চলতে পারল না, সম্মান নিয়ে মাথা উঁচু করে বলতে পারল না 'আমি বাঙালি'।

আমাদের কত যোগ্যতা, দক্ষতা, ঐতিহ্য ছিল, পৃথিবীতে আমরা কত অসাধ্য সাধন করেছি। যখন অনেকের কিছুই ছিল না, তখন আমাদের গর্ব পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দার্শনিকদের অন্যতম মুন্সীগঞ্জের অতীশ দীপঙ্কর চীন তিব্বতকে সভ্যতার আলো দেখাতে শান্তির দূত হিসেবে সেখানে গিয়েছিলেন। ইউরোপের মানুষ যখন কাপড় চিনত না, সমগ্র আমেরিকা বস্ত্রহীন ছিল, আমরা তখন পৃথিবী জয় করা মসলিন তৈরি করতাম। যে কাপড় অথবা শাড়ি ম্যাচের বাক্সে ভরে রাখা যেত, সরু আংটির ভিতর দিয়ে এপার-ওপার করা যেত, কত রাজদরবারে বড় বড় রাজ্য জয়ের আলোচনার চেয়ে মসলিনের আলোচনা বেশি হতো। এখনো টাঙ্গাইলের শাড়ি পৃথিবীর নারী সমাজের হৃদয় জয় করে আছে। শুনেছি, মোগল দরবারে কোনো এক সম্রাজ্ঞী মসলিন পরে পর্দার আড়ালে বসেছিলেন। তার প্রতি সম্রাটের নজর পড়ায় মনে হয়েছিল সম্রাজ্ঞী কাপড় পরেননি। অথচ তখনো তার গায়ে সাত পরত মসলিন ছিল। আমাদের শ্রী জগদিশ চন্দ্র বসু আইনস্টাইনের চেয়ে বড় না হলেও ছোট ছিলেন না।

প্রয়োজনীয় আদর-যত্ন পরিবেশ পেলে আইনস্টাইন অথবা শ্রী জগদিশ চন্দ্র বসু হতে না পারলেও আমার দুলাভাই, জয়-পুতুলের বাবা ড. ওয়াজেদ মিয়া পাকিস্তানের নোবেল বিজয়ী প্রফেসর আবদুস সালাম অথবা ভারতের এপিজে আবদুল কালামের মতো যে হতে পারতেন এ ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। বাংলা সাহিত্য, শিল্পের কত বড় বড় দিকপাল সত্যজিৎ রায়, সুচিত্রা সেন, উত্তম কুমার, তালাত মাহমুদ, জর্জ বিশ্বাস, রাহুল দেব বর্মণ আমাদেরই ঘরে জন্ম নিয়ে পৃথিবীকে আলোকিত করেছেন। সংগীত সম্রাট ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খান পরিবার সারা পৃথিবীকে সুরের মূর্ছনায় মাতিয়ে তুলেছে। রবি শঙ্কর আমাদের সন্তান। শেরে বাংলা, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, বঙ্গবন্ধু যে আলো-বাতাসে মানুষ হয়েছেন, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের আলো-বাতাসে বাস করে পৃথিবী জয় করেছেন। এক সময়ে যখন সমগ্র বাংলা এক ছিল তখন বলা হতো, 'বাঙালি আজ যা ভাবে সমস্ত ভারত ভাবে আগামীকাল। আর পৃথিবী ভাবে তারও একদিন পর।'

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই বিরল সম্মান আপনি পেয়েছেন দেশের জন্য, দেশবাসীর জন্য- সে কথা অকপটে বলায় দেশবাসী সবার সঙ্গে আমিও অভিভূত হয়েছি। 'চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ'- এই সম্মানের মতো যদি আমাদের পারিপার্শ্বিক অবস্থা থাকত, দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা থাকত, তাহলে কতইনা ভালো হতো। দেশে শান্তিতে বসবাসের একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি যদি অসম্ভব হতো তাহলে বলার কিছুই ছিল না। কিন্তু সবাই মিলে চেষ্টা করে যদি করা যায় সেটা না করলে বড় যন্ত্রণা হয়। যদি বিশ্বাস করতে পারতাম শত চেষ্টা করেও দেশকে সুন্দর নিরাপদ করা যাবে না, তাহলে বলার ছিল না। আমরা তো অসম্ভবের সম্ভাবনার মধ্যে বেঁচে আছি। বাঙালির অসাধ্য যে কিছু নেই তা তো আমি নিজের চোখেই কতবার দেখেছি। ভেতো বাঙালি দুর্ধর্ষ পাকিস্তানকে পরাজিত করে স্বাধীন হবে এটা আমাদের ক'জন বিদ্বান জ্ঞানী-গুণী ভেবেছেন? অথচ আমরা সেই অসাধ্য সাধন করেছি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দেশ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি।

বঙ্গবন্ধুহীন বাংলায় ক্ষত-বিক্ষত বুকে তারপরও বেঁচে আছি। আমি সত্যিই এটা বলতে পারি না, জননেত্রী শেখ হাসিনা আপনিই সব, আপনি না থাকলে দেশ থাকবে না। কিন্তু এটা অবশ্যই বলব, আপনি দেশের একটি শ্রেষ্ঠ সম্পদ, বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আপনি ভালো করলে দেশের ভালো হয়। আপনার সামান্য খারাপে দেশের অভাবনীয় ক্ষতি হয়। এত কিছুর পরও গভীরভাবে ভেবে দেখলে বুঝতে পারবেন মানুষের মনে উৎসাহ নেই। শত্রু-মিত্র সবাই যখন দেশের জন্য গর্ববোধ করে, সবাই যখন উৎসাহী হয় তখন সেটাই হয় একজন প্রকৃত জাতীয় নেতার নেতৃত্বের সার্থকতা।

আপনি যেদিন অত বড় একটা বিশ্ব সম্মান পেলেন, মনে হয় সেদিন বা তার পরদিন নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল তাদের সফর বাতিল করল। পরদিন কূটনৈতিকপাড়ায় প্রকাশ্য রাস্তায় একেবারে কাছে থেকে গুলি খেয়ে এক ইতালি নাগরিক মরল।

সপ্তাহ পার হলো পুলিশ ডিম পারছে, কিন্তু বাচ্চা ফুটছে না। গত পরশু রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় এক জাপানি নাগরিক মারা গেছেন- এসব আপনাকে পীড়া দেয় না? যেভাবে আপনাকে দেখেছি তাতে জানি এসব আপনাকেও গভীর পীড়া দেয়। কয়েক মাস আগে আপনার এক মহিলা এমপির ছেলে মদ খেয়ে মাতাল হয়ে গভীর রাতে মগবাজারের রাস্তায় যানজটের কারণে এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে দুজনকে হত্যা করেছে। তাতে কিন্তু তার কোনো অসুবিধা হয়নি। এখনো সে গলা চড়িয়ে কথা বলে। এই তো সেদিন আরেক মাতাল এমপি লিটন ছোট্ট বাচ্চার দুই পায়ে গুলি করে ব্যক্তিগত অস্ত্র থানায় জমা দিয়ে পালিয়েছেন। তাকে এখন কী করা উচিত?

বিচার-শালিস যাই হোক ইসলামী শরিয়ত মতে তার দুই পায়ে গুলি মেরে বিকলাঙ্গ করে বিচার শুরু করা উচিত। হয়তো আমার কথা আপনার ভালো লাগবে না, শুনবেন না, অন্যের কথা শুনবেন। কী দুর্ভাগ্য! চরম বিপদে আপনার পাশে ছিলাম। আজ শত্রুর দ্বারা ঘিরে থাকায় মিত্রের কোনো স্থান নেই। যখন ভাবার সময় পাই তখন বড় বেশি শঙ্কিত হই। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু আমার জীবন উলোট-পালোট তছনছ করে দিয়েছে। হঠাৎ আপনার কিছু হলে এখনো কি শত্রুর প্রথম গোলা আমার দিকেই আসবে? আপনি প্রধানমন্ত্রী, আমি সম্বলহীন এক অসহায় স্বামী, অসহায় পিতা ও সাধারণ মানুষ। আপনি দেশ পরিচালনা করেন। আপনার অদক্ষ কর্মচারীরা আমাদের ওপর নির্মম নির্যাতন করে। এ দেশের মানুষ শান্তিপ্রিয়। ছয় মাসেরও প্রয়োজন হবে না দেশে আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। লাঠি চালিয়ে পৃথিবীতে কেউ কোনো দিন দেশ পরিচালনা করে সফল হতে পারেনি।

লাঠি দিয়ে ভেড়া-বকরি, গরু-ছাগল চালানো যায়, মানুষ নয়। মানুষ চালাতে মেধার দরকার। মানুষ তার আত্মিক শক্তিতে চলে, সে শক্তি সাধনা করে অর্জন করতে হয়। গায়ের জোরে পাওয়া যায় না। আপনি খোলামেলা মানুষ। ঘরোয়া পরিবেশে আপনি যা বলেন তাতে কিছু আসে যায় না। কিন্তু যা জনসম্মুখে আসে তা যদি আর একটু সংযত হতো তাহলে আমার মনে হতো আপনিই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাঙালি হতেন। কোনো সিনেমা-নাটকের কুশলীরা ঘরে বসে যেভাবে কথা বলেন, মঞ্চে সেভাবে বললে দর্শক গ্রহণ করে না। সেখানে মেপেজোখে বলতে হয়। প্রশ্ন আসে আপনি কি অভিনেত্রী? পরিচালক আপনাকে যেভাবে ডায়ালগ দেবে সেভাবে বলবেন? না তেমন না। আপনি কোনো অভিনেত্রী নন। আল্লাহ আপনাকে জননেত্রী বানিয়েছেন।

আপনার পরিচালক আপনি নিজেই। অভিনেত্রীদের শো বা অনুষ্ঠান শেষে তবু ব্যক্তিগত জীবন থাকে, ঘরোয়া পরিবেশ থাকে। যতক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে আছেন ততক্ষণ আপনার তাও নেই। তাই মনের ভিতর কষ্ট গুমরে মরে। যতই বলুন আপনার আশপাশে যারা আছেন আপনি তাদের যাই ভাবুন দেশের মানুষ তাদের সিংহ ভাবে না, বাঘ ভাবে না, নেতা ভাবে না। তাদের চার পায়া খুবই ছোট জাতের ছাগলের মতো ভাবে। একবার কামালের অনুরোধে মায়াকে পিতাকে বলে কয়ে হাতে পায় ধরে বিচারের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলাম। তার মেয়ের জামাই, মায়ার ছেলে যেসব করেছে আদালতের নির্দেশের পরও মায়াকে মন্ত্রিসভায় রেখে আপনার কি খুবই সুনাম হয়েছে? তাকে ছেড়ে দিলে কি ক্ষতি হতো?

কক্সবাজারের বদিউজ্জামান, তার বোঝা বইবার আপনার প্রয়োজন কী? তার চৌদ্দগুষ্টি আপনার এবং আপনার দলের জন্য কি খুবই অপরিহার্য? উপযুক্ত মানুষের কাছে দায়িত্ব থাকলে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা কী এমন কঠিন কাজ। ছাগল দিয়ে ধান মাড়ানো যায় না। কেন যেন সেই কাজটিই আপনি করার চেষ্টা করছেন। মানুষকে খুশি এবং তাদের আস্থা অর্জন করতে পারলে আপনার তো কোনো শঙ্কার কারণ ছিল না। জানি না, কেন কথাগুলো বললাম।

তবে আজ কদিন আপনার জন্য আমার মনটা খুবই ভারাক্রান্ত। সারা জীবন বোকার মতো চলেছি, আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে যা সত্য তাই বলেছি। সারা জীবন ভেবেছি, সতী নারীর পতি হয় একজন। রাজনৈতিক কর্মীর নেতাও একজন। পারিপার্শ্বিক কারণে জীবন চালাতে গিয়ে পতি হারিয়ে সতীর হয়তো আরও বিয়ে হতে পারে। কিন্তু সতী নারীর পতি একজনই। ঠিক তেমনি রাজনৈতিক কর্মীর নেতাও একজন। তারও হয়তো চলার পথে অনেক নেতৃত্বের বদল হয়। কিন্তু সৎ কর্মীর অনেক নেতা হয় না, নেতা তার একজনই। নেতা আর নেতৃত্ব এক নয়। নেতা মানা আর নেতৃত্ব মানাও এক কথা নয়। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার এসব কিছু অসুবিধা আছে।

আবারও বলছি, আমার মন আজ সবচেয়ে বেশি ভারাক্রান্ত এই জন্য যে, আমার রাজনৈতিক পিতার হত্যার সময় তার আশপাশের একজনও যথাযথ প্রতিবাদ করেনি। বরং অনেকেই খুনিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে, অনেকেই কাপুরুষের মতো ইঁদুরের গর্তে লুকিয়েছে, কেউ কেউ আবার হাতা গুটিয়ে কাছা মেরে বলদর্পীর মতো আস্ফালন করেছে, 'মোশতাক ভাই-ই তো আমাদের আসল নেতা।' এসবের প্রতিবাদে যৌবনের সোনার ১৬ বছর অনাদরে-অবহেলায় কাটিয়েছি। দেশে ফিরে দিনরাত আপনার এবং আপনার দলের জন্য ছুটেছি। তারপর মতের মিল হয়নি বলে, অন্যদের মতো চাটু মারতে পারি না বলে একটা দল করে বঙ্গবন্ধু ট্যাবলেট খেয়ে আজও পথ চলছি। কারণ আল্লাহ, রসুল, মা-বাবার পর একমাত্র বঙ্গবন্ধুই আমার শ্বাস-প্রশ্বাসে প্রতিবার আসা-যাওয়া করে।

বঙ্গবন্ধুর এক সময়ের খুবই প্রিয়, আমাকে ঠেকিয়ে রাখার আপনার প্রধান অস্ত্র পিতৃতুল্য বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কার, সংসদ থেকে পদত্যাগ করায় যেখানে আমার জন্ম, যেখানে আমার নাড়ি পোঁতা সেখানে আগামী ১০ নভেম্বর উপনির্বাচন। প্রথম প্রথম প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা ছিল না। কারণ যে যাই বলুক, মানুষ ভোট দিতে পারেনি। চর দখলের চেয়েও খারাপ অবস্থায় গণতন্ত্রকে হত্যা করে নির্বাচনী পদ্ধতিকে পদদলিত করে মানুষের সব অধিকার খর্ব করা হয়েছে। মানুষ ভোট দিতে পারলে, তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারলে আমি সবসময় গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আছি, নির্বাচনেও আছি। সখীপুর উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চেয়েছিলাম। কী ধরনের জালিয়াতি করে আমার মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছিল অন্যরা না জানলেও আপনার অজানা থাকার কথা নয়। সেখানে আপনার কোনো ভূমিকা ছিল কিনা জানি না। যেভাবেই হোক যতদিন এই সংসদ চলে ততদিন দুয়েকটি সত্য কথা হোক এরকম মানসিকতা থেকেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার চিন্তা করেছি।

আপনি যেদিন দিদির অন্ত্যেষ্টিতে দিলি্ল গিয়েছিলেন, আমি সেদিন পিতার কবরে ফাতেহা পাঠ করতে টুঙ্গিপাড়া ছিলাম। এক সপ্তাহ পর গীতাদির শ্রাদ্ধে অংশ নিতে দিলি্ল গিয়েছিলাম। সেখান থেকে ফিরে বিমান থেকে মাটিতে পা দিতে পারিনি শত প্রশ্ন। কালিহাতী উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন কি? তার চার দিন পর বাবা-মার কবর জিয়ারত করে বলেছিলাম কালিহাতীর মানুষ চাইলে, আমার ছাতিহাটি, নাগবাড়ির মানুষ চাইলে নিশ্চয়ই নির্বাচনে অংশ নেব। আপনাকে বলে বুঝাতে পারব না, রাস্তাঘাটে আলোচনার ঝড় বইছে, ১৪ দলের মনোনয়ন নিচ্ছেন কি? ১৪ দলের প্রার্থী হচ্ছেন? জেলা আওয়ামী লীগের বড় বড় নেতা থেকে শুরু করে উপজেলা, গ্রামগঞ্জের সব জায়গায় একই আলোচনা, একই প্রশ্ন। এমনকি ঢাকায়ও সরকার, বিরোধী দল সবার একই আলোচনা। আমার কাছে ১৪ দল, ১৫ দল কোনো কথা নয়, মানুষ যাতে ভোট দিতে পারে, মানুষের ইচ্ছায় যাতে রাষ্ট্র চলে সেটাই আমার কাছে এখন বড় কথা। আমি সে পথেই এগোতে চাই।

আমার গামছার জন্য তো কারও কাছে হাত পাততে হবে না। ১৪ দলের মনোনয়ন নিলে বা ১৪ দল আমাকে মনোনয়ন দিলে কালিহাতীতে নির্বাচন হবে? ভোটারদের বঞ্চিত করে সবাই যেমন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছে তেমনটি হবে না? খালি মাঠে গোল দেওয়ার মতো হবে না? খেলা হলো না, দর্শকরা দেখল না, সিল আদান-প্রদান হয়ে গেল। হ্যাঁ, যদি বিএনপি নির্বাচন করত তাহলে ভেবে দেখা যেত। বিএনপির সঙ্গে রাজাকার আছে, আমার প্রেম আমার ভালোবাসা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তারা খারাপ কথা বলে, বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যার দিনে জন্মদিন পালন করে। তাই বিএনপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ে হয়তো ১৪ দলের মনোনয়ন চাইতে আপত্তি না তুলে বিবেচনা করা যেত।

কিন্তু যেখানে আমি খেলতে চাই, খেলা দেখতে চাই, সেখানে ফাঁকা মাঠে গোল এটা কেমন করে প্রত্যাশা করি? ১৪ দল নৌকা নিয়ে নির্বাচন করুক, আমরা গামছা নিয়ে করি মানুষ দেখুক আপনার সরকারের সময়ও তারা ভোট দিতে পারে। আপনার প্রার্থী জয়ী হলে সবার আগে আমি তাকে অভিনন্দন জানাব। কিন্তু প্রকৃত অর্থে পরাজিত হলে আপনিও কি তা পারবেন? বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে আপনারও তা পারা উচিত। আপনার সঙ্গে আমার রাজনৈতিক অমিল রয়েছে সেটা এখন সবাই জানে। কিন্তু মানুষ হিসেবে আপনাকে এখনো আমি মায়ের মতোই সম্মান করি। আজ আমার মনটা খুব খারাপ- কেন বলেছি জানেন?

আপনার যে ভাই, আপনার পিতার হত্যার বিরুদ্ধে সব থেকে বেশি সোচ্চার, যার প্রতিবাদে আপনার আওয়ামী লীগ মাটির নিচে না গিয়ে আজও মাটির উপরে আছে সেই ভাইকে রাজনৈতিকভাবে হত্যা বা কতল করতে আপনাকেই আজ জল্লাদ ঠিক করতে হচ্ছে। এটা কত বড় ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। বয়স হয়েছে, অনেক নির্যাতন-অবহেলা সহ্য করেছি, যতদিন বেঁচে আছি না হয় আরও সহ্য করব। কিন্তু আপনার বদনাম শুনতে চাই না, সহ্য করতে চাই না। রাস্তাঘাটে আলোচনা, ভোট হলে কী হবে, ফলাফল চুরি হয়ে যাবে। আপনার সম্পর্কে এ ধরনের ধারণা বদ্ধমূল হোক এটা আমার কাম্য নয়। আর এত বড় অর্জনের পর তো নয়ই।

শুনেছি, এ পর্যন্ত ২২ জন ১৪ দলের মনোনয়ন চেয়েছে। নামে ১৪ দল হলেও তারা সবাই আওয়ামী লীগ। ২২ জন কেন আরও ২-৪ জন যোগ করে সবাইকে নৌকা দিয়ে দিন আমার কোনো আপত্তি নেই। যদি আপনার মনে হয় এ সিট আপনার চাই, নিয়ে নিন কিছুই বলব না। কিন্তু তা যদি না চান, দেশবাসী এবং ভোটারকে যদি সম্মান দেখাতে চান, আপনার আমলেও মানুষ ইচ্ছামতো নিরাপদে ভোট দিতে পারে এটা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে চান, তাহলে অবশ্যই সরকারি প্রভাবমুক্ত অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি এবং পরিবেশ সৃষ্টি আপনাকেই করতে হবে। দলীয় নেতা হিসেবে নয়, দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই নির্বাচন নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাই।

একজন সুনাগরিকের, একজন মুক্তিযোদ্ধার, সর্বোপরি আপনার পিতার হত্যার একজন প্রতিবাদকারীকে সময় দিয়ে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের এই আশা পূরণ করতে পারবেন কিনা সেটা আপনার ওপর নির্ভর করে। আল্লাহ আপনার সহায় হোন। বাংলাদেশের জন্য আপনার মাধ্যমে অর্জিত এই শ্রেষ্ঠ সম্মান আপনাকে আরও বলিষ্ঠ দায়িত্বশীল, প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে বিবেকবান একজন জাতীয় নেতায় পরিণত করুক আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে এই কামনাই করি, আমিন।-বিডিপ্রতিদিন

লেখক : রাজনীতিক
৬ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে