মঙ্গলবার, ০৬ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৩৭:৩৩

সন্দেহভাজন খুনিদের তালিকা নিয়ে অভিযানে ডিবি

সন্দেহভাজন খুনিদের তালিকা নিয়ে অভিযানে ডিবি

হরলাল রায় সাগর : আলোড়ন সৃষ্টিকারী দুই বিদেশি হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে গোয়েন্দা জাল বিস্তার করা হয়েছে। তৎপর গোয়েন্দা ও তদন্ত কর্মকর্তারা। একাধিক গোয়েন্দা দল মাঠে। তদন্তে আধুনিক বিজ্ঞান পদ্ধতি কিংবা প্রযুক্তিগত পদ্ধতিসহ সর্বোচ্চ পদ্ধতি কাজে লাগাচ্ছেন তারা। সন্দেহভাজন খুনিদের তালিকা নিয়ে অভিযানে নেমেছে গোয়েন্দা পুলিশের দল (ডিবি)। তবে আট দিনেও ইতালির নাগরিক সিজার তাভেল্লা হত্যা রহস্য উদ্ধার করতে পারেনি গোয়েন্দারা। তেমনি জাপানি নাগরিক হোসি কোনিও হত্যা রহস্যও অধরা। জড়িত কাউকে গ্রেফতার করাও সম্ভব হয়নি। এ দুই হত্যার রহস্য উদঘাটনে একেবারেই অন্ধকারে তদন্ত কর্মকর্তারা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুটি হত্যাকাণ্ডেই এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। তবে নিখুঁতভাবে তদন্ত অগ্রসর হচ্ছে। তারা দ্রুত রহস্য উদঘাটনে আশাবাদী। সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তারা বলছেন, দুটি হত্যাকাণ্ডই আন্তর্জাতিক চক্রান্তে ঘটেছে এবং একই সূত্রে গাঁথা।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, দুই বিদেশি হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি। তদন্ত দ্রুততার সঙ্গে এগুচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই হত্যা রহস্য উম্মোচন হবে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চক্রান্তে এ হত্যাকাণ্ড সুপরিকল্পিত। তিনি বলেন, দুই বিদেশিরই লাশ হিমঘরে রাখা হয়েছে। স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তরে আরো সময় লাগবে।

রাজধানীর নিরাপত্তা বেষ্টিত কূটনৈতিক এলাকা গুলশানে ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলি করে হত্যা করা হয় ইতালির নাগরিক সিজার তাভেল্লাকে (৫১)। তিন দুর্বৃত্ত পিস্তল দিয়ে তিনটি গুলি করে অপেক্ষমাণ একটি মোটরসাইকেলে উঠে দ্রুত পালিয়ে যায়। সিজার হেঁটে গুলশান-২ এর ৯০ নম্বর সড়কের বাসায় ফিরছিলেন। এ ঘটনার পাঁচদিনের মাথায় ৩ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে ঠিক একইভাবে মুখোশ পরা তিন দুর্বৃত্ত গুলি চালিয়ে রংপুরে জাপানি নাগরিক হোসি কোনিওকে (৬৬) হত্যা করে খুনিরা অপেক্ষমাণ মোটরসাইকেলে করে চলে যায়।

সন্দেহভাজন খুনিদের ধরতে অভিযানে ডিবি: গোয়েন্দা সূত্র জানায়, সিজার তাভেল্লা ও হোসি কোনিও হত্যার ঘটনায় সন্দেভাজন খুনিদের একটি তালিকা নিয়ে এবার পুলিশ মাঠে নেমেছে। অভিযানে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, ডিবি, সিআইডি ও দুটি গোয়েন্দা সংস্থা সহায়তা করছে। রোববার রাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকাসহ সারাদেশে অন্তত ১৫টি অভিযান পরিচালনা করেছে তারা। এসব অভিযানে কেউ আটক হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত কমিটির কোন সদস্য মন্তব্য করতে চাননি।

তদন্ত কমিটির সদস্যরা বলেছেন, সম্ভাব্য খুনিদের আটক করতে বা খুনিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন ব্যক্তিদের আটক করতেই এ অভিযান চলছে। অভিযান ও ঘটনার তদন্ত নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তবে তদন্তে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, হত্যাকাণ্ডের সময় প্রত্যক্ষদর্শী একজনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী হত্যার মিশনে অংশ নেয়া তিন যুবককে খোঁজা হচ্ছে। তবে এখনো তাদের কোন হদিস পাওয়া যায়নি। ওই তিন যুবক কারা, কি পরিচয় সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে পারেনি।  
এদিকে বিভিন্ন আলামাত সংগ্রহের পাশাপাশি এ পর্যন্ত গুলশান এলাকার ১০৯টি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে গোয়েন্দা পুলিশ। এক এক করে এসব ফুটেজ সূক্ষ্মভাবে দেখা হচ্ছে। এসব ফুটেজের মাধ্যমে হত্যাকারীরা পালানোর ক্ষেত্রে কি কি পথ ব্যবহার করেছে তা শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। পথ সম্পর্কে ধারণা স্পষ্ট হলে খুনিদের ব্যবহৃত মোটরসাইকেলও শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে বলে ওই সূত্রে জানা গেছে।

সিজার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা) মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পুলিশ বিভাগ। এ কমিটিকে সহায়তা দিতে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠন করা হয় আরো দুটি কমিটি।

সিজারের হত্যাকাণ্ডে আরো একটি অনুসন্ধান কমিটি : ইতালির নাগরিক সিজার তাভেল্লা হত্যাকাণ্ড অনুসন্ধানে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ৩ সদস্যবিশিষ্ট আরো একটি কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটিতে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি এন্ড প্রসিকিউশন) দিদার আহম্মদকে আহ্বায়ক করা হয়েছে।

অন্য সদস্যরা হলেন, উপ-কমিশনার (ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি) আতাউল কিবরিয়া ও উপ-কমিশনার (প্রফেশনাল স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড ইন্টারনাল ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) টুটুল চক্রবর্তী।

সিজারের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন কমিটির হাতে : গুলশানে নিহত ইতালির নাগরিক সিজার তাভেল্লার ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তার হাতে পৌঁছেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শরীরের তিনস্থানে গুলিবিদ্ধ হওয়ায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও হত্যাজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে।

কোনিও হত্যাকাণ্ডের তদন্তে অগ্রগতি নেই : আমাদের রংপুর প্রতিনিধি জানান, তদন্ত কমিটির প্রধান ও রংপুর রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত ডিআইজি হুমায়ুন কবির বলেছেন, হোসি কোনিও হত্যাকাণ্ডের তদন্ত মাঝামাঝি পর্যায়ে। বলার মতো কোনো অগ্রগতি নেই। গতকাল সোমবার সকালে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি আরো বলেন, যেহেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর তাই সবদিক বিবেচনা করেই গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বেশি কিছু বলা যাবে না।

ডিআইজি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বেশ কয়েকটি দল কাজ করছে। তবে গণমাধ্যমের সামনে বলার মতো কোনো তথ্য এ মুহূর্তে নেই। কোনো অগ্রগতি হলে সেটা পরে জানানো হবে।

তিনি বলেন, কোনিও ২০১১ সাল থেকে রংপুরে যাতায়াত করতেন। সর্বশেষ ২৮ আগস্ট তিনি এখানে আসেন। আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও অবিবাহিত ছিলেন কোনিও।

পুলিশ কর্মকর্তা হুমায়ুন বলেন, জাকারিয়া বালার ছোট ভাই মিশনের জাপানে হোটেলের ব্যবসা আছে। সেই হোটেলে মাঝেমধ্যে খেতে যেতেন কোনিও। সে সূত্রেই মিশনের সঙ্গে তার পরিচয় এবং রংপুরে আসা। আর জাকারিয়ার বাড়িতেই বাসা ভাড়া নেন তিনি। রংপুরে বর্তমানে ২৮৬ জন এবং দিনাজপুরে ৫১২ জন বিদেশি রয়েছেন জানিয়ে ডিআইজি বলেন, তাদের নিরাপত্তায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।  

ছয়জনকে জিজ্ঞাসাবাদ : তদন্ত কমিটির প্রধান হুমায়ুন কবির জানান, হোসি কোনিও হত্যার ঘটনায় আটক ছয়জনকে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে কোনিওর বাড়িওয়ালা জাকারিয়া অসুস্থ হয় পড়ায় তাকে রমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ কারণে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি এখন পর্যন্ত। তিনি সুস্থ হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে কোনিও সম্পর্কে আরো তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। ঘটনার দিন জাকারিয়ার শ্যালক হিরা, রিকশাচালক মন্নাফ আলী, ? মুরাদ হোসেন, রাশেদুন নবী খান বিপ্লব ও আনিছুর রহমান লাকুকে আটক করে পুলিশ। তাদের কাছে কোনো উল্লেখযোগ্য তথ্য পাওয়া গেছে কি-না তা জানাতে অপারগতা জানায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে মামলা করা হলেও আটকদের কারো গ্রেফতার দেখানো হয়নি এ মামলায়-মানবকণ্ঠ
৬ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে