বিশেষ প্রতিনিধি : দেশের দরিদ্র কৃষকদের কল্যাণই ছিল কুনিও হোশির ধ্যান-জ্ঞান। কীটনাশক ব্যবহার না করে উচ্চফলনশীল ধান ও আলুর চাষে নামার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কিন্তু রংপুরে গরুর রুগ্ণ স্বাস্থ্য দেখে প্রথমেই পশুখাদ্য উৎপাদনে মনোযোগ দেন তিনি।
এ কথা জানান জাপানপ্রবাসী জাকারিয়া জামিল ওরফে মিশন, যাঁর হাত ধরেই এ দেশে আসেন জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি। থাকতেনও রংপুরে মুন্সিপাড়ায় গ্রামের বাড়িতে। ২০ বছর ধরে জাপানে আছেন জাকারিয়া জামিল। জাপানি নারীকে বিয়ে করে সংসার পেতেছেন সেখানে, থাকেন টোকিওতে। তাঁর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের গতকাল টেলিফোনে কথা হয়।
জাকারিয়া প্রতিবেদককে বলেন, বছর তিন-চারেক আগে কুনিও হোশির সঙ্গে তাঁর পরিচয়। কুনিওর জন্ম জাপানের ইওয়াতে, সেখানে লেখাপড়া শেষে চলে আসেন তোচিগি শহরে। সেখানেই থাকতেন তিনি। কুনিও বিয়ে করেননি। তাঁর বাবা-মা জীবিত নেই। ভাই-বোন আছেন কি না, সেটা জানেন না তিনি।
জাকারিয়া জামিল জানান, কুনিও মূলত কৃষি বিশেষজ্ঞ। তিনি কীভাবে কীটনাশক ছাড়া ফসল উৎপাদন ও ফলন বাড়ানো যায়—এ নিয়ে কাজ করতেন। টাকাপয়সার প্রতি তাঁর মোহ নেই। পরিচয় হওয়ার পর একপর্যায়ে জাকারিয়া জামিলকে তিনি বলেন যে বাংলাদেশে কৃষির উন্নয়নে কাজ করতে চান। এ জন্য তিনি বাংলা ভাষাও কিছুটা শিখেছিলেন।
‘আমি ভাবলাম, আমার এলাকা রংপুরেরই কৃষির উন্নতি হোক। তাঁকে নিয়ে তিন বছর আগে রংপুরে যাই। আমার বাড়িতে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করি। ঘনিষ্ঠ বন্ধু হীরাকে অনুরোধ করি যেন কুনিও হোশিকে সহায়তা করে।’ এভাবেই হুমায়ুন কবীর (হীরা) যুক্ত হন কুনিওর সঙ্গে।
জাকারিয়া জামিল বলেন, কুনিও তিন বছর আগে প্রথম এসে কিছুদিন থেকে আবার জাপানে ফিরে যান। এর এক বছর পর আবার আসেন। সর্বশেষ মাস চারেক আগে রংপুরে গিয়ে হীরার জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে পশুখাদ্য চাষ শুরু করেন। তিনি বলেন, কুনিওর পরিকল্পনা ছিল কীভাবে কীটনাশক ব্যবহার না করে ধান ও আলুর ভালো ফলন পাওয়া যায়। কিন্তু রংপুরে গিয়ে দেখলেন, এখানকার গরুগুলো রুগ্ণ স্বাস্থ্যের। তাই প্রথমেই পশুখাদ্য উৎপাদন শুরু করেন।
জাপানপ্রবাসী ওই ব্যক্তি জানান, কুনিওর কাছ থেকে তিনি জেনেছেন, এই পশুখাদ্য একই জমিতে বছরে তিন-চারবার আবাদ করা যায়। প্রতি তিন মাস পর পর কেটে নতুন করে লাগাতে হয়। এটি দেখতে আখের মতো। এর রস আখের চেয়ে কম মিষ্টি। ওই রস দিয়ে গুড় তৈরি করার কথা। এই গুড় আবার মৌ চাষে মৌমাছির খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। আর রস বের করার পর গাছ হবে গরুর খাবার। এটা খেয়ে গরু মোটা-তাজা হয়।
জাকারিয়া জামিল বলেন, ‘কুনিওর সঙ্গে আমার প্রায় প্রতিদিন ফোনে কথা হতো। কাউকে কিছু বোঝাতে না পারলে আমাকে ফোন দিতেন, আমি তা অন্যদের বাংলায় বুঝিয়ে বলতাম। তাঁর মতো পরোপকারী মানুষকে কেন হত্যা করা হলো, তা বুঝে উঠতে পারছি না।’ বললেন, ‘ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি, এ রকম একটা ভালো মানুষকে মেরে ফেলা হলো, যিনে কিনা দেশের ভালো করতে চেয়েছিলেন।-প্রথমআলো
৬ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে