মঙ্গলবার, ০৬ অক্টোবর, ২০১৫, ১০:২০:২১

সুদে টাকা ধার নিয়ে এমপির গুলিতে আহত শিশুর চিকিৎসা করাচ্ছে পরিবার

সুদে টাকা ধার নিয়ে এমপির গুলিতে আহত শিশুর চিকিৎসা করাচ্ছে পরিবার

আরিফুল হক: নয় বছরের শিশুটির দুই পায়ে নতুন ব্যান্ডেজ। কিছুক্ষণ আগেই বাঁধা হয়েছে। ওষুধের প্রভাবে শিশুটির পা প্রায় অবশ হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে ছটফটে বারবার পা নাড়ানোর চেষ্টা করছে। পাশে বসা মা সেলিনা বেগম তাকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন। ছেলে তাঁর আগের মতো হাঁটতে পারবে কি না, তা নিয়ে চিন্তিত সেলিনা।

গত শুক্রবার সকালে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বাড়ি থেকে সকালে হাঁটতে বেরিয়েছিল স্থানীয় বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শাহাদাত হোসেন ওরফে সৌরভ। এ সময় সাংসদ মনজুরুল ইসলাম ওরফে লিটন গুলি ছুড়লে শিশুটির বাঁ পায়ে একটি ও ডান পায়ে দুটি গুলি লাগে। ওই দিনই চিকিৎসার জন্য শিশু শাহাদাতকে রংপুর মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়।

চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে, তবে সময় লাগবে। এদিকে শিশুটির পরিবার বলছে, সুদে টাকা ধার নিয়ে তারা সন্তানের চিকিৎসা করাচ্ছে। শাহাদাতের বাবা গ্রামে গ্রামে ঘুরে হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করেন। ছেলের এই অবস্থায় তাঁর ব্যবসাও বন্ধ।

গতকাল সোমবার দুপুরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার দিন যেভাবে ছিল, সেভাবেই শুয়ে আছে শাহাদাত। চার দিন ধরে প্রিন্টের লুঙ্গি পরা। খালি গা। সেলিনা বললেন, গরমের কারণে তাঁর ছেলে শরীরে কোনো কাপড় রাখতে পারছে না। বিশেষ কিছু খাচ্ছেও না। ব্যথা উঠলে কান্নাকাটি করছে।
গতকাল দুপুরে আচ্ছন্ন অবস্থায় শাহাদাত মাঝে মাঝে আস্তে আস্তে মায়ের সঙ্গে কথা বলছিল। বিছানার চারপাশে অনেক লোক। শাহাদাতের গ্রামের লোক, হাসপাতালের অন্য রোগীদের কৌতূহলী স্বজনেরা। সেলিনা বেগম বলেন, তাঁর ছেলে এমনিতে খেতে পছন্দ করত। তবে গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর তেমন খাচ্ছে না। শিশুটি পা ফেলতে পারছে না। তাঁকে কোলে করে বাথরুমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। শিশুটি আবার আগের মতো হাঁটতে পারবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান সেলিনা।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বাবলু কুমার সাহা বলেন, মাত্র ঘটনাটি ঘটেছে, শিশুটির জন্য এটি একটি বড় ধাক্কা। তার পুরোপুরি সেরে উঠতে সময় নেবে। বাঁ পায়ের হাঁটুর নিচে একটি গুলি হাড়ের পাশ দিয়ে ঢুকে মাংসপেশি ভেদ করে অন্য দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে। ওই ফুটোটা বন্ধ করার জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আর ডান পায়ে দুটি গুলি মাংসপেশি ছুঁয়ে ক্ষত তৈরি করে গেছে। সেটাও অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাঁর পায়ের ভেতরে গুলির কোনো অংশ পাওয়া যায়নি।

এদিকে শিশুটির চিকিৎসার খরচ জোগাতে হিমশিম খাচ্ছে পরিবারটি। শিশুটির বাবা সাজু মিয়া জানান, এ পর্যন্ত তাঁর ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এর মধ্যে নিজেদের যা ছিল, সবই খরচ করেছেন। স্বজনদের কাছ থেকে ধার করেছেন ২০ হাজার টাকা। চড়া সুদেও মহাজনের কাছ থেকে নিয়েছেন আট হাজার টাকা। গতকাল আরও এক স্বজনের কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়েছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসা খুব ভালো। তবে সব ওষুধ এমনকি স্যালাইনও বাইরে থেকে কিনতে হচ্ছে।
সাজু মিয়া বলেন, জীবনে প্রথমবার তিনি রংপুর মেডিকেলে এসেছেন। এর আগে কখনো এত বড় হাসপাতাল দেখেননি। তাই কয়েকজন আত্মীয়কে সার্বক্ষণিক তাঁদের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে। ফলে খরচও বাড়ছে।

কোনো পক্ষ থেকে কোনো চাপ আছে কি না, জানতে চাইলে সাজু মিয়া বলেন, ‘কোনো চাপ নাই। কেউ এখন পর্যন্ত কিছু বলেনি। আমার সঙ্গে গ্রামবাসী আছে, পুলিশ আছে।’ প্রথম আলো
৬ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে