ঢাকা : রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান মুহম্মদ খিজির খান (৬৫)। গতকাল সোমবার নিজ বাসায় তাকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
পুলিশ বলেছে, সন্ধ্যায় বাসার সবাইকে বেঁধে পরে তাকে হত্যা করা হয়।
এ হত্যাকাণ্ড ঘটে ছয়তলা বাড়ির দোতলায়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ) কৃষ্ণপদ রায় গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি খিজির খানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, ছয়-সাতজন ব্যক্তি এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। খিজির খান তরিকাপন্থী ছিলেন। বাড়ির তৃতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকতেন তিনি। দোতলায় তার ‘রহমতিয়া খানকাহ শরিফ’ (ঢাকা শাখা)। এ খানকাহ শরিফের পীর ছিলেন খিজির খান।
খিজির খানের গাড়িচালক মোস্তফা ও খানকাহ শরিফের কর্মী আমেনা গণমাধ্যমকে বলেন, সন্ধ্যা সাতটার দিকে ৮-১০ জন লোক তিনতলায় যায়। তাদের তিনজন সিঁড়িতে ছিল। বাকিরা তিনতলার ফটকে গিয়ে খিজির খানের সঙ্গে কথা বলতে চায়। তিনি দোতলায় আছেন জানালে পরে তারা দোতলায় যায়।
তারা বলেন, তারা খিজির খানের সঙ্গে কথা বলে। একপর্যায়ে আমেনা অজুখানার সামনে থেকে দেখেন, তারা খিজির খানকে বেঁধে মেঝেতে শুইয়ে রেখেছে। এ অবস্থা দেখে আমেনা চিৎকার দিলে তিনতলা থেকে খিজির খানের স্ত্রী রুবি নাতিকে নিয়ে দোতলায় আসেন। এ সময় ওই ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন তিনতলায় ওঠে। দোতলায় থাকা ব্যক্তিরা সালাম দিয়ে রুবি ও তার নাতিকে ভেতরে ঢুকিয়ে হাত-পা-চোখ বেঁধে ফেলে। আমেনারও হাত-পা-চোখ বাঁধা হয়।
তারা বলেন, পরে খিজির খানকে ওজুখানায় নিয়ে তারা গলা কেটে হত্যা করে। বেশ কিছুক্ষণ পর লাগোয়া বাড়ি থেকে দারোয়ান এসে তাদের বাঁধন খোলেন। পরে তারা তিনতলায় গিয়ে দেখেন, খিজির খানের পুত্রবধূসহ অন্য সদস্যদেরও হাত-পা-চোখ বাঁধা। তাদের বাঁধন খুলে দিলে তারা চিৎকার শুরু করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
মোস্তফা ও আমেনা বলেন, ওই ব্যক্তিরা বাড়িতে আসার আগে খিজির খানের ছোট ছেলে আহমেদ উল্লাহ বাড়ির বাইরে যান। তিনি খবর পেয়ে বাড়িতে আসেন। যারা এসেছিল তারা রোববার এসে বাড়ির নিচতলা ভাড়া নেয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা অগ্রিম দিয়ে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে দু-তিনজনের বয়স ২৫ বছরের মতো হবে, বাকিদের ৩০-৩৫।
খিজির খানের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। বড় ছেলে মতিউর রহমান কম্পিউটার প্রকৌশলী। তিনি পিডিবিতে কর্মরত। ছোট ছেলে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজে অধ্যয়নরত। দুই মেয়ে রাবেয়া খাতুন ও রাহেলা খাতুন।
খিজির খানের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, খানকাহ শরিফে প্রতি বৃহস্পতিবার জিকির ও দোয়া হতো। খিজির খান তা পরিচালনা করতেন। তবে কাউকে তিনি দাওয়াত দিতেন না, নিজের ইচ্ছায় লোকজন সেখানে যেত।
খিজির খানের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর চর গ্রামে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন তৃতীয়।
৬ অক্টোবর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম