বুধবার, ০৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৩১:৩২

খুনিদের ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা

খুনিদের ঠেকাতে সর্বোচ্চ সতর্কতা

শাহীন করিম : রাজধানীতে ইতালি ও রংপুরে জাপানি নাগরিকের খুনিরা যাতে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য স্থলপথ, আকাশপথ কিংবা জলপথে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা করা হয়েছে। বিমানবন্দর, সীমান্ত ও বন্দরগুলোতে আরো জোরদার করা হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় সোয়া দুই লাখ বিদেশি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার। নতুন করে সারাদেশে বিদেশিদের তালিকা করা হচ্ছে। তাদের নিরাপত্তা বিধানে ‘স্পেশাল টাস্ক গ্রুপ’ গঠন করা হয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দুই বিদেশি নাগরিক খুন হওয়ার পর দেশের সীমান্ত এলাকা বেনাপোলে দেশি-বিদেশিদের চলাচলে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। খুনি চক্রদের দেশত্যাগ ঠেকাতে বেনাপোল ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর সীমান্তে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি। বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্টে বসিয়ে চালানো হচ্ছে গণতল্লাশি।

অপরদিকে চট্টগ্রামের তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল সিইপিজেড, কোরিয়ান ইপিজেড এবং কেইপিজেডে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে চট্টগ্রামের শিল্প পুলিশ। অন্যদিকে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত বিদেশি নাগরিক ও বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেখানকার হোটেল-মোটেলে অবস্থানরত সব বিদেশি নাগরিকের অবস্থানের বিষয়ে তাৎক্ষণিক তথ্য দিতে আবাসিক সব হোটেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে পুলিশ ও র‌্যাব।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত প্রায় দুই লাখ ২৪ হাজার বিদেশি নাগরিকের জন্য ব্যাপক নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে তাদের বাসস্থান ও কর্মস্থল চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া চলছে। বিদেশিদের যাতায়াতের পথ, বিনোদনের স্থান ও সামাজিক যোগাযোগের অবস্থানে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। মন্ত্রী বলেন, ঢাকার গুলশান ও বারিধারার কূটনীতিক এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার পাশাপাশি গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। বিদেশিদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা সম্পর্কে গতকাল কূটনীতিকদের জানানো হয়েছে। তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।

২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানে ইতালির নাগরিক সিজার তাভেল্লা ও পাঁচ দিনের মাথায় শনিবার সকালে রংপুরে জাপানি নাগরিক হোসি কোনিওকে একই কায়দায় গুলি করে হত্যা করে পালিয়ে যায় খুনিরা। মাত্র পাঁচ দিনের ব্যবধানে দুই বিদেশি নাগরিককে হত্যার ঘটনায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশ ও র‌্যাবের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, দুই বিদেশিকে হত্যাকারী খুনিরা যাতে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সব জায়গায় গত কয়েকদিন ধরে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। খুনিচক্র যাতে বিমানযোগে দেশত্যাগ না করতে পারে সেজন্য দেশের সব বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। একইসঙ্গে সেখানে কর্মরত বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানায়, দুই বিদেশির অন্তত ছয় খুনি যাতে স্থলপথে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বেরিয়ে যেতে না পারে সেজন্য সেখানকার ইমিগ্রেশনের কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। তাছাড়া ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের দিকে নজরদারি করছে বিজিবি সদস্যরা। চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরেও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। সূত্র দাবি করে, বিদেশি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহভাজন কিছু ব্যক্তির ছবি পৌঁছে দেয়া হয়েছে বিমানবন্দর ও সীমান্তে দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিভিন্ন ইউনিটের কাছে।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে পুলিশ। সেক্ষেত্রে খুনিদের গ্রেফতার করতে ও বিদেশে পালানো ঠেকাতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আর র‌্যাবের মুখপাত্র কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, অন্য গোয়েন্দাদের পাশাপাশি বিমানবন্দর ও সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বিশেষ নজরদারি চালাচ্ছে র‌্যাব। খুনিদের শনাক্তে ছায়া তদন্ত করছে র‌্যাব।

এদিকে বেনাপোল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সম্প্রতি দু’ বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সীমান্তে বাড়তি সতর্কতা বজায় রাখতে সরকারিভাবে তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যে বিদেশি নাগরিক বেনাপোল চেকপোস্ট হয়ে বাংলাদেশে আসছেন, তাদের অবস্থানের ঠিকানা নির্ভুলভাবে লিপিবদ্ধ করে সঙ্গে সঙ্গেই ঢাকা অফিসে পাঠানো হচ্ছে। এছাড়া যারা বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছেন, তাদের পাসপোর্ট সম্পূর্ণ যাচাই করে দেশত্যাগের অনুমতি দেয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মমিন উদ্দিন জানান, পরবর্তী নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত এ সতর্কতা বজায় থাকবে।

অন্যদিকে যশোরে সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি ২৬ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, সীমান্তপথে যাতে অপরাধীরা ভারতে পালিয়ে যেতে না পারে, সে জন্য তারা সার্বক্ষণিক সতর্ক রয়েছে।

অপরদিকে আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, দুই বিদেশি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর সারাদেশের মতো গুরুত্বপূর্ণ শিল্পনগরী চট্টগ্রামের অবস্থানকারী বিদেশিদের নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হয়েছে। চট্টগ্রামের তিনটি অর্থনৈতিক অঞ্চল সিইপিজেড, কোরিয়ান ইপিজেড এবং কেইপিজেডে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের আসা যাওয়ায় নিরাপত্তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রামের শিল্প পুলিশ। রোববার বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা সংক্রান্ত বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি নাগরিককে গুলি করে হত্যার পর কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত বিদেশি নাগরিক এবং বিদেশি পর্যটকদের নিরাপত্তায় পোশাকে ও সাদা পোশাকে মাঠে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পুলিশ সদস্যরা এসব বিদেশি নাগরিকের অবস্থানের ওপর বিশেষভাবে নজর রাখছে। এছাড়া জেলায় কয়েকটি চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। গত সোমবার পর্যন্ত হোটেল সী-গালে ৩ অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক অবস্থানের কথা নিশ্চিত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

ইতিমধ্যেই কক্সবাজারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ৬৭ বিদেশি নাগরিক থাকার তথ্যও পেয়েছে পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিট। এর বাইরে আরো অর্ধশতাধিক বিদেশি কক্সবাজারে অবস্থান করছেন বলেও জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফেরদৌস আলী চৌধুরী বলেন, পুলিশ হেড কোয়ার্টারের নির্দেশে বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পোশাকে ও সাদা পোশাকে নামানো হয়েছে পুলিশ সদস্যদের। এছাড়া চেকপোস্ট বসিয়ে চালানো হচ্ছে তল্লাশি।
 
আমাদের বরিশাল ব্যুরো জানায়, বরিশাল নগরীতে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক নজরদারি শুরু করেছে পুলিশ। বিদেশিদের নিরাপদে চলাচলে খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ডিবি পুলিশের সহকারী কমিশনার আবু সাইদ জানান, দেশে ইতালীয় ও জাপানি নাগরিক হত্যার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ওই নজরদারি করা হচ্ছে। গত রোববার বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা রক্ষায় ওই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সহকারী কমিশনার বলেন, বর্তমানে নগরীতে ৬৫ বিদেশি নাগরিক রয়েছেন।

তাদের তালিকা প্রস্তুতসহ সার্বক্ষণিক যোগাযোগ করা ও রাখার যাবতীয় তথ্য আদান প্রদান করা হয়েছে। এসব নাগরিকদের মধ্যে সিংহভাগ চীন, জাপান, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার। তিনি আরো জানান, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং মেডিকেল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের নিরাপদে চলাচলের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা দিতে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। এছাড়াও পৃথক চারটি সতর্ক দল (ভিজিল্যান্স টিম) বিদেশি নাগরিকদের চলাচলের স্থানে ভিন্ন ভিন্নভাবে পর্যবেক্ষণ করবে ও প্রয়োজনে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেবে।-মানবকণ্ঠ
৭ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে