বৃহস্পতিবার, ০৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:১৪:২৪

ষড়যন্ত্রে সতর্ক সরকার

ষড়যন্ত্রে সতর্ক সরকার

হাবীব রহমান : দুই বিদেশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় চাপের মুখে পড়লেও সরকার বলছে এটা ষড়যন্ত্র। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই এর জন্য দায়ী করা হয়েছে বিএনপি-জামায়াতকে। একই ঘটনায় সিরিয়া-ইরাকভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস-এর বাংলাদেশে উপস্থিতি নিয়ে ‘স্নায়ুতর্কেও’ জড়িয়েছে সরকার ও পশ্চিমা কূটনীতিকরা। সরকার এ ঘটনার রেশ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দিতে নারাজ। তারা বলছে, আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই বাংলাদেশে। ক্ষমতাসীনরা বলছেন, সাউথ ব্লকে নিজেদের প্রভাব বাড়াতে পশ্চিমারা এখানে আইএস খোঁজার চেষ্টা করছেন।

সবার অংশগ্রহণে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায়ে পশ্চিমাদের চাপের কথা সরকারের নীতিনির্ধারকদের অনেকেই স্বীকার করেছেন। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর প্রভাবশালী এক নেতা প্রতিবেদককে বলেন, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর থেকে পশ্চিমাদের সঙ্গে সরকারের একটু দূরত্ব রয়েই গেছে। মধ্যবর্তী একটি নির্বাচনের চাপ আমরা বারবার পাশ কাটিয়ে যাচ্ছি।

সরকারের সূত্র জানায়, দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি-জামায়াত জোট দেশের রাজনীতিতে চাপের মুখে পড়ে। সরকারের কঠোরতার মুখে রাজপথে তেমন কোনো জোরালো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি বিগত সময়ে। ফলে বিএনপি এখন পশ্চিমাদের দ্বারস্থ হয়েছে। আর পরিস্থিতি অস্বাভাবিক করে তুলতেই এমন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। সম্প্রতি গুলশানের কূটনীতিকপাড়ায় সিজার তাভেল্লা নামের এক ইতালীয় এনজিওকর্মীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এর পাঁচ দিনের মাথায় রংপুরের এক গ্রামে একই কায়দায় খুন হন জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি। সরকারের তরফে বলা হচ্ছে এসব ঘটনায় বিএনপি-জামায়াত জড়িত। দেশকে অস্থিতিশীল করতেই এমনটি করা হচ্ছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার আবারো বলেছেন, দুই বিদেশিকে ‘পরিকল্পিতভাবে’ হত্যা করা হয়েছে। এ ধরনের ‘ঘটনা ঘটিয়ে’ বাংলাদেশকে আর ‘অস্থিতিশীল’ করা যাবে না।

কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে মিরপুর সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে তিনি আরো বলেন, এটকু আমি আপনাদের আশ্বাস দিতে পারি, আজকে বাংলাদেশের অবস্থা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে যে, এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে বাংলাদেশকে কেউ অস্থিতিশীল করতে পারবে না। তবে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ডে বিএনপির জড়িত থাকার কথা ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরের ‘যোগসূত্র’ থাকতে পারে। অতীতে দেখা গেছে যখনই তাকে (খালেদা জিয়া) কিছুদিনের জন্য বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুঁজে পাওয়া যায়নি, তখনই দেশে কোনো না কোনো ঘটনা ঘটেছে। নাসিম বলেন, খালেদা লন্ডন থাকাবস্থায় কীভাবে দেশে এমন একটি চক্রান্ত বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে, বিদেশিদের হত্যা করা হচ্ছে, এ দুটির কোনো যোগসূত্র আছে কি-না তা ভেবে দেখতে হবে, খতিয়ে দেখতে হবে।

এদিকে এসব ঘটনায় জড়িত যেই থাকুক কাউকে ছাড় না দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সব অপরাধীর প্রতি সরকার জিরো টলারেন্স দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কূটনীতিকদের আস্থায় আনতে সর্বাত্মক নিরাপত্তা বিধান করতে সরকার বদ্ধপরিকর। মঙ্গলবার উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে আশ্বস্ত করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া সারাদেশ এখন নিরাপত্তার চাদরাবৃত। সীমান্ত পথে বসানো হয়েছে কড়া প্রহরা। কেউ কোনোভাবে সরকারবিরোধী উসকানি দেয় কিনা- তাতেও সংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ও আগামীকাল শুক্রবার ঘিরেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ তৎপরতা থাকবে। ইতিমধ্যে এক প্রতিমন্ত্রীর বাসায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। আগামী দুর্গাপূজাকে ঘিরেও সরকার সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সরকারের কাছে আগাম তথ্য রয়েছে দুর্গাপূজায় নাশকতার পরিকল্পনা রয়েছে বিভিন্ন মহলের। তাই সব এমপিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এ সময়ে নিজ নিজ এলাকায় থাকার জন্য। সারা দেশের পুলিশ প্রশাসনকে সক্রিয় থাকতে দেয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলা ও জেলা জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের আটক করা হয়েছে বিভিন্ন মামলায়। এমন ধরপাকড় আরো চলবে বলে জানা গেছে।

তবে এসব ঘটনাকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখলেও এতে সরকারের ওপর কোনো চাপ নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, কিসের চাপ। আমেরিকায় বন্দুকধারীরা ১০ স্কুল শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যা করেছে। অস্ট্রেলিয়ায় পুলিশ সদর দফতরের সামনে গুলি করে দু’জনকে হত্যা করা হয়েছে। এজন্য কী বলবেন আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার সরকার চাপে পড়েছে? তিনি বলেন, যারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে মেনে নিতে পারে না, যারা সরকারকে বিব্রত করতে চায়, এসব তাদেরই কর্মকাণ্ড। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে। এসব খুনিকে খুঁজে বের করা সম্ভব হবে। কোনো ঘটনায় জড়িত কেউই পার পাবে না।

গত সোমবার মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বলেছেন, বাংলাদেশে আইএসসহ সব ধরনের সহিংস উগ্রবাদ দমনে যৌথ উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, যখনই আইএস বা আলকায়েদা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে কৃতিত্ব দাবি করে, তখন আমরা সেগুলোর সত্যতা উদ্ঘাটনের চেষ্টা করে থাকি। এ দুটি হত্যাকাণ্ডে আইএস জড়িত থাকার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেননি তিনি। এ বিষয়ে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, এমন সম্ভাবনার ভিত্তিটা কী? কেউ জানে না। কোনো একটা ঘটনা ঘটল সঙ্গে সঙ্গে আইএসের নামে কেউ একটা বিবৃতি দিল- আর তাতেই হলো! এটা সরকারকে বিব্রত করার চেষ্টা। তাহলে কী আমরা বলব- আমেরিকার সন্ত্রাসবাদেও আইএস জড়িত, অস্ট্রেলিয়ায় জড়িত।

এ দুই হত্যার বিষয়ে হানিফ বলেন, এটা কোনো চুরি-ডাকাতির ঘটনা না। রাজনৈতিক কিছুও না। এটা বিরোধী চক্রের ষড়যন্ত্র। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার জন্য যারা তৎপর, যাদের প্রভুরা তৎপর তারাই এসবের সঙ্গে জড়িত। সামনে শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের অনেকের রায় কার্যকর হবে- তাই তারা কিছু সন্ত্রাসী কার্যক্রম করার চেষ্টা করতে পারে। অনেক বাধা মোকাবিলা করে সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর করেছে। এবারো এর ব্যতিক্রম হবে না।

একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন আদায়ের জন্য পরিকল্পিতভাবে এসব ঘটানো হচ্ছে কিনা- এমন প্রশ্নে হানিফ বলেন, নির্বাচনের জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণ কী চায়, সেটা ভাবতে হবে। নির্বাচন তো প্রতি বছর বছর হবে না। যথাসময়ে যথানিয়মে নির্বাচন হবে।

বিদেশি হত্যাকাণ্ড ও আইএস সংশ্লিষ্টতার এক প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন, বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। বিএনপি-জামায়াতই আইএসের কাজ করে। মানুষ পুড়িয়ে মারা, শিশু হত্যা-নারী হত্যা আইএসের এসব কাজ এদেশে বিএনপি-জামায়াত করছে। তাদের দমন করতে পারলে এদেশে আইএস শেকড় গাড়তে পারবে না।-মানবকণ্ঠ
৮ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে