নিউজ ডেস্ক : ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে তিন সন্ত্রাসীকে ছিনিয়ে নেওয়ার মূলহোতা আনোয়ার হোসেন ফারুক ওরফে জামাই ফারুকের বিরুদ্ধে খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় জড়িত থাকার প্রমাণ পায়নি ভারতীয় গোয়েন্দারা। তবে তাদের হাতে বাংলাদেশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ এই জঙ্গি নেতার পশ্চিমবঙ্গে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সাংগঠনিক প্রধান থাকার তথ্য রয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশের পুলিশ ও গোয়েন্দাদের একটি অংশ ফারুককে দেশে এনে বিচার করতে চাইছে। তবে ভারত তাকে হাতছাড়া করতে রাজি নয়।
ফারুককে ২৪ সেপ্টেম্বর উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ সীমান্তের কাছ থেকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)। তাদের দাবি, জামাই ফারুকের বিরুদ্ধে তাদের হাতে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ আছে। ফারুক এখন কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেলে বন্দি।
এসটিএফের দাবি, অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দক্ষিণ ভারত ও আসামসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ধারাবাহিক নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা ছিল জেএমবির।
এসটিএফের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই ষড়যন্ত্রের মূল পরিকল্পনাকারী ছিল ফারুক। ওই মামলাতেই আমরা ফারুককে বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করাবো।’
বাংলাদেশ থেকে গোয়েন্দা-পুলিশের দুই সদস্যের একটি দল ২২ অক্টোবর কলকাতায় যান খাগড়াগড় বিস্ফোরণে অভিযুক্ত জেএমবির পাঁচ সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে। তারা হলো, ইউসুফ গাজী, আবদুল কালাম, জবিরুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম এবং রফিক ওরফে রুবেল মিয়া। ওই পাঁচ জনের সঙ্গে ফারুকও ধরা পড়েছিল। কিন্তু খাগড়াগড় বিস্ফোরণে ফারুকের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার প্রমাণ না পাওয়া যাওয়ায় তাকে ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)হেফাজতে নেয়নি।
এনআইএ-র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের গোয়েন্দারা ফারুকের সঙ্গে কথা বলতে পারেননি। জেএমবির পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলে তারা বুঝতে পেরেছেন, শুধু পশ্চিমবঙ্গে নয়, গোটা ভারতে জেএমবির বিস্তারের জন্য ফারুকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’
তবে ফারুককে হেফাজতে নিতে এনআইএ আদালতে আবেদন করছে না কেন- এ প্রশ্নের জবাবে এনআইএ’র এক তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, প্রথমত, খাগড়াগড় বিস্ফোরণ মামলায় ফারুকের জড়িত থাকার পক্ষে কোনও নথি মেলেনি।
দ্বিতীয়ত, জেএমবির সদস্যেরা অর্থাৎ ওই মামলায় অন্য অভিযুক্তেরা ছাড়া ফারুকের ব্যাপারে কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। অথচ এক্ষেত্রে নিরপেক্ষ সাক্ষীর জবানবন্দি প্রয়োজন।
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি, ‘ফারুকের ব্যাপারে যা করার আটঘাট বেঁধেই করতে হবে। হেফাজতে এনে প্রমাণের অভাবে ছেড়ে দিতে হলে লজ্জার সীমা থাকবে না। যখন বুঝবো ফারুকের বিরুদ্ধে আমরা খাগড়াগড় মামলায় চার্জশিট দিতে পারছি, তখনই ওকে হেফাজতে নেব। তার আগে নয়।’
এরই মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ ও গোয়েন্দারা ফারুককে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করেছে বলে এনআইএ সূত্রে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে এনআইএ’র এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ফারুক যেহেতু ত্রিশালের প্রিজন ভ্যান মামলায় মূলহোতা তাই বাংলাদেশ পুলিশের কোনও কোনও কর্মকর্তা মনে করছেন ওকে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো যাবে।’
তবে কলকাতা পুলিশের দাবি, তাদের হাতে ফারুকের বিরুদ্ধে ভারতে নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত থাকার জোরালো প্রমাণ রয়েছে। সেজন্য তাকে ছাড়ার প্রশ্নই আসে না।
এসটিএফ-এর মতে, আসমেই আইইউডি তৈরির পরিকল্পনা করেছিলে সে। এরপর তা দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতো অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে। কোন কোন এলাকায় এ হামলা চালানোর আশঙ্কা ছিল তার-এ প্রশ্নের জবাবে এসটিএফের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সেই ব্যাপারে একেবারে শেষ মুহূর্তে নির্দেশ আসার কথা ছিল বাংলাদেশ থেকে। তার আগেই ফারুক ধরা পড়ে গেল।’
এদিকে, গুলশানে সন্ত্রাসী হামলায় ব্যবহৃত একে টোয়েন্টি টু রাইফেলগুলো পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হয়েছিল বলে যে খবর ভারতের একটি ইংরেজি দৈনিকে বেরিয়েছে, তা খারিজ করেছে এনআইএ এবং কলকাতা পুলিশের এসটিএফ। দুটি সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত সংবাদ প্রকাশ হয়েছিল।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে ফারুকসহ আটক ছয় জেএমবি সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এ প্রসঙ্গে এনআইএ’র এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই পাঁচজন এমন কথা কখনও বলেনি। ওই সংবাদ ঠিক নয়।’
এসটিএফের এক তদন্ত কর্মকর্তা বলছেন, ‘গুলশানের হামলায় ব্যবহার হওয়া একে টোয়েন্টি টু রাইফেল বিহারের মুঙ্গেরে তৈরি হয়েছিল এবং বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল আসাম সীমান্ত দিয়ে। পশ্চিমবঙ্গের যোগসূত্র এখানে নেই।’ -বাংলা ট্রিবিউন।
৩০ অক্টোবর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম