সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬, ০১:০৩:১০

নতুন কমিটির সামনে তিন চ্যালেঞ্জ

নতুন কমিটির সামনে তিন চ্যালেঞ্জ

রফিকুল ইসলাম রনি : ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচন মোকাবিলাসহ কয়েকটি কঠিন চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগের নতুন কমিটির যাত্রা। তবে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বর্তমান কমিটি কতটুকু সফল হবে তার হিসাব-নিকাশ কষছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তাদের মতে, সদ্য ঘোষিত কমিটিতে তারকা নেতার সংখ্যা সীমিত। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের কাছে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত এসব নেতা মাঠ জমাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে চলছে নানা আলোচনা।

কমিটিতে স্থান পেয়েছেন এমন অনেকেই আছেন, যারা এলাকাতেই তেমন একটা পরিচিত নন। তারা জেলা পর্যায়ে অনেক প্রবীণ নেতার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে পারবেন কিনা, সেসব বিষয় নিয়েও কথাবার্তা হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে নবগঠিত কমিটিকে অন্তত বড় তিনটি চ্যালেঞ্জ নিয়েই যাত্রা করতে হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা। জেলা-উপজেলায় অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানো। জনসম্পৃক্ততার মাধ্যমে দলের জনপ্রিয়তা বাড়ানো। পাশাপাশি দলীয় পদ ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য বাগানো তথা অনিয়ম-দুর্নীতি থেকে নিজেদের বিরত রাখা।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে দলকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে আসা। তারা আরও বলেন, নতুন কমিটির নেতাদের কর্মকাণ্ডের ওপর জনগণ তীক্ষ নজর রাখবে। তাই নেতাদের কর্মকাণ্ডে গুণগত পরিবর্তন আনতে হবে। কিছু এমপি-মন্ত্রী ও নেতার ছত্রচ্ছায়ায় থাকা বেপরোয়া বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্বকে মনে রাখতে হবে, বিরোধী দল ততটা ক্ষতি করতে পারবে না তাদের, যতটা পারবে চাটুকার ও বেপরোয়া বাহিনী। সেই চাটুকার ও সুবিধাবাদীদের কাছ থেকে নিজেদের দূরে রাখতে হবে।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের প্রথম টার্গেট আগামী নির্বাচন। পরবর্তী টার্গেট রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়ন। উন্নয়ন ও মধ্য আয়ের দেশে পরিণত করা। দলকে শৃঙ্খলবদ্ধ করা হবে আমাদের অন্যতম কাজ।’ তিনি বলেন, ‘উন্নয়ন অর্জন যতই হোক না কেন, আচরণ খারাপ হলে উন্নয়ন ম্লান হয়ে যায়। আবার ভোটের রাজনীতেও এর প্রভাব আছে। এখন থেকেই এ কাজটি আমাদের করতে হবে। বিভিন্ন জায়গার অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কলহ মিটিয়ে দলকে শক্তিশালী করতে হবে।’

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘জঙ্গিবাদ-উগ্রবাদ মোকাবিলা এবং আগামী নির্বাচনের জন্য দলকে প্রস্তুত করাই অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এজন্য তৃণমূলকে সুসংগঠিত করতে হবে। সরকারের উন্নয়ন ও গণমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন ও সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরাও হবে আমাদের অন্যতম কাজ।’

দলীয় সূত্রমতে, এরই মধ্যে নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ড শুরু করে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন সামনে রেখেই ঢেলে সাজানো হয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি। আওয়ামী লীগের নবগঠিত কমিটিতে অপেক্ষাকৃত প্রবীণদের বাদ দিয়ে নবীনদের স্থান করে দেওয়া হয়েছে। ৮১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষিত ৭৪টি পদে দায়িত্বপ্রাপ্তদের মধ্যে ২৪ জনই কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে একেবারেই নতুন মুখ। দলের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করতে এখন থেকেই মাঠে নামতে চায় দলটি। এ কারণে দলে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা দলীয় কাজে প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেন। তবে তাদের জনপ্রিয়তা অর্জন করতে হলে এখন থেকেই মাঠে থাকতে হবে। যোগাযোগ বাড়াতে হবে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে।

দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতার মতে, এবারের জাতীয় সম্মেলনে নেতৃত্বের বিকাশ ততটা না ঘটায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা মনোমালিন্য আছে। তাই নবগঠিত কমিটির নেতাদের তৃণমূল কর্মীদের মনোমালিন্য দূরীকরণের কাজটাও করতে হবে। জানতে চাইলে দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দলের সভানেত্রীর ঘোষিত বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়া। দারিদ্র্য, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করা। দলকে সুসংগঠিত ও বেগবান করে সাধারণ মানুষের মন জয়ের মাধ্যমে আগামী নির্বাচনে ক্ষমতায় আসাটাই চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েই নতুন কমিটি যাত্রা করবে।’ বিডি প্রতিদিন

৩১ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি‌ ‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে