সোমবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৬, ০১:৩৮:৫০

গুলশান হামলা : অস্ত্রের উৎস নিয়ে এখনো রহস্য

গুলশান হামলা : অস্ত্রের উৎস নিয়ে এখনো রহস্য

নিউজ ডেস্ক : গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় ব্যবহূত অস্ত্রের উৎস নিয়ে রহস্য কাটেনি। তবে পুলিশ নিশ্চিত, এ অস্ত্র এসেছে ভারত থেকে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশও স্বীকার করে বলেছে, অস্ত্র তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গেই। তবে কারা এর মূল হোতা এবং এ অস্ত্র তৈরির নেপথ্যে কারা রয়েছেন, তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে গুলশান হামলার পর সারা দেশে জঙ্গি নিধনে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম হাতে নিলেও পাওয়া যায়নি নৃশংস ওই ঘটনার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড বরখাস্ত মেজর জিয়াউল হককে। লাপাত্তা রয়েছেন দুই ডজন দুর্ধর্ষ জঙ্গি সদস্য। এরাই এখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পয়লা জুলাই হলি আর্টিজানে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় দেশি-বিদেশিসহ ২২ জন নিহত হন। গা শিউরে ওঠা হামলার স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়ানো অভিজাত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁটি গতকাল পর্যন্ত মালিকপক্ষকে হস্তান্তর করা হয়নি। ২৪ ঘণ্টাই পুলিশের পাহারা থাকছে ওই রেস্তোরাঁর সামনে-পেছনে। এখনো স্বাভাবিক হয়নি গুলশান এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্য। কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে গুলশান-বারিধারা ও বনানী এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। এ মামলার চার্জশিট এখনো প্রস্তুত হয়নি। এ জন্য আরও কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হলি আর্টিজানে হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গি নিধনে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করে। ঢাকা ও আশপাশ এলাকায় পুলিশ-র‌্যাবের অভিযানে এ পর্যন্ত ৩৪ জঙ্গি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে জঙ্গিনেতা তামিম এবং অর্থদাতা আবদুর রহমানও রয়েছেন। জানা গেছে, হলি আর্টিজানে হামলার পর অনেকের মধ্যে এখনো আতঙ্ক রয়ে গেছে। বিশেষ করে কূটনৈতিক জোনে অবস্থানরত বিদেশিসহ স্থানীয়দের মধ্যে। ইতিমধ্যে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিরাপত্তা-বলয় গড়ে তুলেছে। গুলশান-বানানী-বারিধারার সবগুলো পয়েন্ট, বিপণিবিতানসহ প্রায় সব বাসাবাড়ি সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে এরই মধ্যে কূটনৈতিক জোনে নামানো হয়েছে বিশেষ বাস ও রিকশা।

অস্ত্র আসে আমের ঝুড়িতে : আমের ঝুড়িতে করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করে গুলশান হামলার অস্ত্র। নব্য জেএমবির কমান্ডার নুরুল ইসলাম মারজান সেই অস্ত্র গ্রহণ করেন এবং ভাটারায় পাঠান। তবে অস্ত্রের গায়ে কোনো দেশের নাম লেখা ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্ডার থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে আমের ঝুড়িতে করে গুলশান হামলার অস্ত্র ঢাকায় আনা হয়। সেই অস্ত্র নব্য জেএমবির কমান্ডার নুরুল ইসলাম মারজান গ্রহণ করে। ভাটারা এলাকায় যে বাসাটি জঙ্গিরা ভাড়া নিয়েছিল, সেখানে সেই অস্ত্র পৌঁছে দেয় মারজান। পরবর্তী সময়ে সেই অস্ত্র দিয়েই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালানো হয়।’

এদিকে গুলশান হামলায় ব্যবহূত অস্ত্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গে তৈরি করা হয়েছিল বলে মনে করছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার জঙ্গিরা জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দিয়েছে। এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিতে কাজ করছেন ভারতের গোয়েন্দারা। এনআইএ কর্মকর্তারা বলছেন, ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলাকারীরা যে একে-২২ রাইফেল নিয়ে হানা দিয়েছিল, তা পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলায় তৈরি করা হয়। মালদায় তৈরির পর চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত হয়ে অস্ত্রগুলো বাংলাদেশে পাঠানো হয়েছিল বলে জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে। ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়া ও বার্তা সংস্থা টিএনএনের প্রতিবেদনে শনিবার এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

পয়লা জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাড়িতে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালায় অস্ত্রধারী জঙ্গিরা। ওই হামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন ছাড়াও ২০ জিম্মিকে হত্যা করা হয় বলে জানায় আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। নিহত ২০ জিম্মির মধ্যে ১৭ জন বিদেশি ও তিনজন বাংলাদেশি। পরে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন। এ ঘটনায় করা মামলা সিটিটিসি তদন্ত করছে। পুলিশ জানিয়েছে, গুলশান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরী ও বরখাস্ত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। নারায়ণগঞ্জে পুলিশের অভিযানে তামিম চৌধুরী নিহত হন। তবে মেজর জিয়া এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

জজ আদালতে হাসনাতের জামিন নাকচ : গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার ঘটনায় গ্রেফতার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমের জামিন নাকচ করেছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কামরুল হোসেন মোল্লা এ আদেশ দেন। এর আগে এ মামলায় দুই দফায় হাসনাত করিমের ৮ দিন করে ১৬ দিনের রিমান্ড শেষে ১৩ আগস্ট তার পক্ষে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জামিনের আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকার মহানগর হাকিম সেই জামিন আবেদন নাকচ করে দেন। পরে ওই আদেশের বিরুদ্ধে হাসনাতের আইনজীবী ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন করেন।

জামিন আবেদনে বলা হয়, নর্থ সাউথের সাবেক এই শিক্ষক ‘পরিস্থিতির শিকার’। ঘটনার দিন তার মেয়ের ত্রয়োদশ জন্মদিন পালনে স্ত্রী ও ছেলেমেয়ে নিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন হাসনাত। এজাহারে তার নাম নেই, তার কাছ থেকে অবৈধ কোনো জিনিসও উদ্ধার করা হয়নি। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে হামলায় জড়িত থাকার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া ৫৪ ধারার অভিযোগ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর হাসনাত মুক্তি পেয়েছেন। এর আগে ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। পরে কমান্ডো অভিযানে পাঁচ জঙ্গিসহ ছয়জন নিহত হন। পরে ২ আগস্ট সন্ধ্যায় গুলশান থেকে হাসনাত করিমকে সন্দেহভাজন হিসেবে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে ৪ জুলাই রাতে ওই হামলার ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়। বিডি প্রতিদিন

৩১ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি‌ ‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে