নিউজ ডেস্ক : অচল হাত-পায়ের কাছে হার না মেনে পরিবেশ ও প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে মুখ দিয়ে লিখেই জীবন সংগ্রামে জয়ী হওয়ার স্বপ্ন দেখছে রংপুরের মিঠাপুকুরের শারীরিক প্রতিবন্ধী মেধাবী শিক্ষার্থী জুবায়ের হোসাইন। জন্মগতভাবেই শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও প্রতিবন্ধকতাকে হার মানিয়েছে সে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার বালারহাট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এবারের জেএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শারীরিক প্রতিবন্ধী জুবায়ের হোসাইনের পরীক্ষার জন্য আলাদা কক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই কক্ষে দেয়া হয়েছে একটি বেড ও বালিশ। বেডে শুয়ে বালিশে মাথা রেখে মুখে কলম নিয়ে ইংরেজি ১ম পত্রের পরীক্ষা দিচ্ছে জুবায়ের।
প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তার পরীক্ষার জন্য অতিরিক্ত ৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই সে মুখ দিয়ে লিখে বাংলা প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা ভালভাবেই দিয়েছে। পিএসসি পরীক্ষাতেও জুবায়ের মুখ দিয়ে লিখেই পেয়েছে জিপিএ-৪.২৫। ওই কেন্দ্রে প্রায় ২ হাজার পরীক্ষার্থী থাকলেও সকলের নজর জুবায়েরের দিকে। জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর সে। ঠিকমত কথা বলতে না পারলেও ভাঙ্গা ভাঙ্গা শব্দে সে জানায়, আমি লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হতে চাই।
জুবায়েরের পিতা উপজেলার বালারহাট ইউনিয়নের হযরতপুর গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক জাহিদ সরওয়ার জানান, জুবায়েরের মুখে কাঠি দিয়ে তা দাঁত দিয়ে চেপে ধরে মাটিতে বিশেষ কৌশলে লেখা শেখানোর কাজ শুরু করি। প্রথম অবস্থায় জুবায়ের খুব হাঁপিয়ে উঠতো। কিন্তু সে হাল ছাড়েনি। পরিবারের সদস্যরা তার কষ্ট দেখে তাকে নিরুত্সাহিত করলেও সে আবার দ্বিগুণ উত্সাহ নিয়ে মুখে কাঠি চেপে মাটিতে লেখালেখির চেষ্টা চালিয়ে যায়। এরপর সে মুখে কলম নিয়ে লেখালেখি শুরু করে। মুখে কলম নিয়ে লেখালেখির অভ্যাস করতে প্রায় ১ বছর সময় লেগেছে। এরপর থেকে মুখে কলম নিয়ে লিখতে আর কোনো সমস্যা হয় না তার। এখন সে স্বাভাবিক মানুষের মত মুখে কলম নিয়ে লিখতে পারে।
মা উম্মে কুলছুম জানান, অন্য ভাইবোনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লেখাপড়ায় বেশ ভাল করছে জুবায়ের। তিনি আরও বলেন, জুবায়ের চলাফেরা করতে পারে না। ভ্যান গাড়িতে করে সে স্কুলে যাওয়া-আসা করে। ছোট বোন জান্নাতুল ফেরদৌস জুই বলেন, আমরা তাকে কখনই প্রতিবন্ধী মনে করি না।
বালারহাট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফইজুন্নাহার বেগম বলেন, জুবায়ের হোসাইন খুবই মেধাবী ছাত্র। শিক্ষকরাও তার প্রতি বেশি নজর রাখে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার প্রতিবন্ধীদের জীবনমান উন্নয়ন এবং মর্যাদা রক্ষায় অনেক কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুবায়েরের লেখাপড়া ও ভবিষ্যত্ কর্মসংস্থানের জন্য পাশে দাঁড়াবেন এমনটাই আমি আশা করছি।
বালারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব আজিজুল ইসলাম বলেন, আমি আশা করি, সে ভাল করবে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাজ্জাতুল ইসলাম শান্ত বলেন, আমরা আশা করছি, জেএসসিতে সে ভাল ফলাফল করবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুন-অর-রশীদ জুবায়েরের উজ্জ্বল ভবিষ্যত কামনা করেন।-ইত্তেফাক
৪ অক্টোবর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/হাবিব/এইচআর