শুক্রবার, ০৯ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:১৭:৫৯

পর্যটনে ভাটা, পর্যটনশিল্পে কমছে বিদেশী অতিথি!

পর্যটনে ভাটা, পর্যটনশিল্পে কমছে বিদেশী অতিথি!

নিউজ ডেস্ক : সাম্প্রতিক এক সপ্তাহের ব্যবধানে ঢাকায় ইতালীয় এনজিওকর্মী সিজার তাভেলা এবং রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কুনিওর হত্যাকাণ্ডের প্রভাব পড়েছে দেশের পর্যটনশিল্পে। কমে গেছে বিদেশী অতিথি। পাঁচতারকা হোটেলের বুকিং বাতিল করে দিচ্ছেন বিদেশী অতিথিরা। বাতিল হচ্ছে বিদেশী অতিথিদের নিয়ে নির্ধারিত অনুষ্ঠানও।

দুটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা মওসুমের শুরুতেই পর্যটনে ভাটা ফেলেছে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর বেশ কয়েকটি হোটেলের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই সপ্তাহে তাদের বিদেশী অতিথি আগমনের হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমেছে। বুকিং বাতিলের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও পর্যটকরাই বেশি বলে হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

আর পোশাক ব্যবসায়ীরা বলছেন, এমন ঘটনায় বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক ইমেজ সংকটে পড়বে। ফলে আস্থা হারাবে বিদেশী ক্রেতা-বিনিয়োগকারীরা। বিশেষ করে তৈরী পোশাক খাতের ক্রেতারা অন্যত্র চলে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা।

পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা জানান, দেশের পর্যটনখাতে বছরের শুরুটা অবরোধ-হরতালের কারণে মন্দায় কেটেছে। এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত। কিন্তু পর্যটন মওসুমের শুরুতে দুই বিদেশীর হত্যাকাণ্ড এ ব্যবসায় চরম শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট টিম তাদের বাংলাদেশ সফর বাতিল করায় হোটেলটি অনেক বড় রকমের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া টিমের জন্য হোটেলের মোট রুমের একটি বড় অংশ বুকিং দেয়া ছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমেরও এ হোটেলে থাকার কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তার অজুহাতে অস্ট্রেলিয়া তাদের সফর বাতিল করায় হোটেলের সবগুলো বুকিং বাতিল হয়ে যায়।

এরপর দুইজন বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনায় বিদেশী অতিথিদের বুকিংয়ের পরিমাণ ক্রমাগত কমতে থাকে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সোনারগাঁও কর্তৃপক্ষ বিদেশী অতিথিদের জন্য সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তবুও বিদেশীরা বাংলাদেশ সফরে খুব সতর্কতার সঙ্গে খোঁজ নিচ্ছেন। তারা টেলিফোনে ও ই- মেইলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইছেন।

হোটেল ওয়েস্টিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিদেশী অতিথিদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে তারাও। হোটেলের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তাকর্মী ছাড়াও পুলিশ সবসময় নজরদারি করছে। হোটেলের ২০০ মিটার বাইরে পুলিশের টিম কাজ করছে। হোটেল বুকিং দেয়ার জন্য বেশ কয়েকটি সংস্থা হোটেলের ভেতরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিজেদের মতো করে তদন্ত করে দেখেছে।

এ হোটেলের এক কর্মকর্তা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশী অতিথিদের বুকিংয়ের হার ১০ থেকে ১৫ শতাংশ কমেছে। এছাড়া, বিদেশীদের ইভেন্ট অনুষ্ঠানের হারও কমে গেছে। গত কয়েকদিনে অস্ট্রেলিয়া ও জাপানি নাগরিকদের অংশগ্রহণে পৃথক দুটি ইভেন্ট অনুষ্ঠানের কথা ছিল।

হোটেল রেডিসন ব্লু’র একজন কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর সবচেয়ে নিরাপদ এলাকায় অবস্থিত হোটেল রেডিসন। এই হোটেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উচ্চমানের। তারপরও নিরাপত্তার অজুহাতে প্রায় ১০ শতাংশ হারে বিদেশী অতিথিদের বুকিং বাতিল হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অতিথিদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে। বুকিং বাতিলের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের সংখ্যা বেশি। এভাবে চলতে থাকলে সামনের শীত মওসুমে পর্যটকদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমতে পারে বলে জানান তিনি।

লাইট ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরুল কাওসার বলেন, দুই বিদেশী নাগরিক খুনের বড় প্রভাব পর্যটন শিল্পে পড়া শুরু হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় ২০০ এর বেশি পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ বাতিল করেছেন। তিনি বলেন, তাদের ভ্রমণ উপলক্ষে প্রায় সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থাই নেয়া হয়েছিল। কিন্তু দুজন বিদেশী নাগরিক হত্যার পর তারা ট্যুর বাতিল করেছেন।

এদিকে এই দুই হত্যাকাণ্ডের পর দেশী-বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোতে বাংলাদেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পূর্ব-নির্ধারিত যাত্রা বাতিল করছেন বাংলাদেশে থাকা বিদেশীরা।

বেসরকারি নভো এয়ারের সেলস অ্যান্ড মার্কেটিং বিভাগের ব্যবস্থাপক একেএম মাহফুজুল আলম বলেন, গত তিন/চার দিন ধরে রিফান্ড করা টিকিটগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের ৪২ শতাংশ, কক্সবাজারের ১৭ শতাংশ, যশোরের ৩১ শতাংশ ও সিলেটের ২০ শতাংশ বিদেশী নাগরিকদের ছিল।
জার্নি প্লাসের মালিক তৌফিক রহমান বলেন, বিদেশী খুনের ঘটনা পর্যটন শিল্পের জন্য হুমকি। ইতিমধ্যেই জাপানি পর্যটকরা ট্যুর বাতিল করছেন বলে শুনেছি। আগামী ১১ ও ১৮ই অক্টোবর কয়েকজন ইউরোপীয় পর্যটক আসার কথা রয়েছে। এখন শঙ্কায় আছি, আসলেই তারা আসবেন কি-না।

নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ: বেসরকারি বিমান ও পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, পর্যটকদের আশঙ্কার কিছু নেই। তাদের নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা করা হবে। ইতিমধ্যেই পর্যটন এলাকাগুলোয় ট্যুরিস্ট পুলিশকে পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া, যেসব স্থানে ট্যুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম নেই সেসব স্থানে জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে পর্যটকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি। তবে তাতেও শঙ্কার মেঘ কাটছে না ট্যুর অপারেটরদের। তারা বলছেন, পরিস্থিতি নিরাপদ বলে বিদেশীদের কাছে প্রতিভাত না হওয়া পর্যন্ত সংশয় থেকেই যাবে।

এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, পরপর দুটি ঘটনা আমরা (বাংলাদেশীরা) ছোট করে দেখলেও এর বিশালতা আছে। বিদেশীরা গভীরভাবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করছেন। রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি ও রাজনৈতিক অস্থিরতার নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা আমাদের (ব্যবসায়ীদের) আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।

বিজিএমইএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক হাসান জানান, সোমবার বিদেশী ক্রেতাদের সঙ্গে বিজিএমইএ’র একটি বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জাপানি নাগরিক হত্যাকাণ্ডের পর বায়াররা বৈঠকটি বাতিল করেন। তিনি বলেন, বিদেশী নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য সরকার যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে দেশের পোশাকখাত হুমকির মুখে পড়বে। অন্যদিকে বড় বড় ক্রেতাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি। -মানবজমিন

৯ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে