কাজী সোহাগ : কড়া গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে বাংলাদেশ বিমানকে। স্বর্ণ চোরাচালান, নিরাপত্তা, কার্গো হ্যান্ডলিং, লাগেজ চুরি, লাগেজ কাটা বা টানা-হ্যাঁচড়া, টিকিট নিয়ে কারসাজি ইত্যাদি অভিযোগের ভিত্তিতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) দাবি করেছে সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির তদারকির ফলে বিমানের নানা অনিয়ম আগের চেয়ে অনেক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। তবে দুই এমপি এ বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন। তারা বলেছেন, বিমানে নানা অনিয়ম রয়েছে। এতে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। বিমান নিয়ে সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির কার্যবিবরণীতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। ওই কমিটির সভাপতি শরীয়তপুর-২ আসনের এমপি শওকত আলী।
সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কুষ্টিয়া-৪ আসনের এমপি আবদুর রউফ বলেন, পৃথিবীর সর্বত্রই আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে নগদ টাকায় টিকিট কিনতে হয়, সেখানে বুকিং সিস্টেম নেই এবং কোনো যাত্রী না গেলে তাকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে তার ব্যতিক্রম। এছাড়া, বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স-এ অবিক্রীত টিকিট থাকলেও নেই বলা হয়। অথচ অনেক সময় আসন ফাঁকা থাকে। কখনো কখনো টাইম সিডিউলও মানা হয় না। প্রতিষ্ঠানটি সুন্দরভাবে চলুক, লাভজনক হোক সেটাই প্রত্যাশা। নিরাপত্তা, কার্গো হ্যান্ডলিং, লাগেজ চুরি, কাটা বা টানাহেঁচড়া ইত্যাদি বিষয়ে যেসব অভিযোগ রয়েছে সে সব পরিস্থিতির উন্নতি হওয়া দরকার।
একই প্রসঙ্গে কমিটির সদস্য অপর এমপি অ্যাডভোকেট নাভানা আক্তার বলেন, বিমানে প্রায়শই স্বর্ণের চোরাচালান ধরা পড়ে। এসবের সঙ্গে কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত বলে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। আসা-যাওয়ার সময় অপ্রয়োজনীয় চেক হয়, যা বিড়ম্বনার শামিল। টাকা পাচার হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এতে দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। আটক জিনিসপত্র বা টাকা পয়সা সরকারি কোষাগারে জমা হয় কিনা, তা তিনি জানতে চান।
এমপিদের এসব বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে বেবিচক-এর চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এহসানুল গনি চৌধুরী জানান, সেফটি সিকিউরিটি নিশ্চিতকল্পে বৃটিশ কোম্পানি নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং তারা বিমানকর্মীদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সিকিউরিটির বিষয়ে অধিক নজরদারির ফলে পরিস্থিতির অনেকখানি উন্নতি হয়েছে। অর্থপাচার বা চোরাচালানের বিষয়টি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নজরদারি করে থাকে। সরকারের বিভিন্ন এজেন্সির তদারকির ফলে এসব বিষয় আগের চেয়ে অনেক নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে।
একই বিষয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত এমডি এমএম আসাদুজামান জানান, প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় ইতিমধ্যে বেশকিছু উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অতীতের খারাপ অবস্থা এখন নেই। বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বর্তমানে পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। স্থায়ী কমিটির পরামর্শ মোতাবেক পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এ প্রসঙ্গে কমিটির সভাপতি জানান, বিমানের সুনাম যাতে বৃদ্ধি পায়, প্রতিষ্ঠানটি যাতে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হয় এবং সর্বোপরি নিরাপদ ভ্রমণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে সংশ্লিষ্ট এজেন্সিসমূহকে ব্যবস্থা নিতে হবে। এদিকে নিরাপত্তার পাশাপাশি বৈঠকে বিমানের অডিট আপত্তি নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়। এতে বলা হয়, ২০১০-১১ থেকে ২০১৪-১৫ পর্যন্ত ৭০৭টি আপত্তির সঙ্গে ৪ হাজার ৩০৯ কোটি ২১ লাখ, ২৮ হাজার ৯১৮ টাকা জড়িত। ইতিমধ্যে ৮৭টি আপত্তি নিষ্পত্তি করা হয়েছে। যা থেকে আদায় করা অর্থের পরিমাণ ১৮ কোটি ১৯ লাখ ৮ হাজার ১৮ টাকা।
এ প্রসঙ্গে কমিটির সভাপতি বলেন, অডিট আপত্তির সঙ্গে জড়িত টাকার পরিমাণ অনেক। ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অনিষ্পন্ন অডিট আপত্তিসমূহ দ্বিপক্ষীয় বা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে যথাশিগগির সম্ভব দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এমজমিন
০৭ নভেম্বর ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি