সোমবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৩৬:৫৮

রওশনের আচরণে বিব্রত হচ্ছে জাপা!

রওশনের আচরণে বিব্রত হচ্ছে জাপা!

মোশতাক আহমদ : বিদেশ সফর ও রাষ্ট্রীয় অতিথিদের সঙ্গে সাক্ষাতে ব্যর্থতায় এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে সমালোচনার মুখোমুখি তাঁর স্ত্রী ও সংসদের বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। নিজ দলের সংসদ সদস্যরা এসব নিয়ে বিস্তর আলোচনা করছেন। বারবার দুজন এমপিকে নিয়ে রওশনের বিদেশ সফরে বঞ্চিত অন্যরা রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

সম্প্রতি ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে বিদেশ সফরকে তাঁরা দেখছেন অন্য দৃষ্টিতে। বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তিনি ‘মর্যাদা’ রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছেন বলেই নেতাকর্মীদের অভিমত।

পার্টি সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ সফররত রাষ্ট্রপ্রধান ও কূটনীতিকরা বিরোধী দলের নেতৃত্বে থাকা রওশনের সঙ্গে বৈঠক না করায় দলের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। সংসদ সদস্যসহ দলের নেতারা এসব ঘটনাকে ‘অসম্মানজনক’ বলে মনে করছেন। পার্টির বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হলেও রওশন প্রতিক্রিয়া দেখাননি। জাতীয় পার্টির ৩৬ জন সংসদ সদস্য থাকলেও বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রওশন বিদেশ সফরে বারবার নিয়ে যান দুজনকে। দলের মধ্যে এ পক্ষপাত নিয়ে তৈরি হয়েছে প্রতিক্রিয়া। যদিও কেউ প্রকাশ্যে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি নন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাপার এক এমপি বলেন, ‘ম্যাডাম নিজেই বারবার বিদেশ সফর করায় আমরা বিব্রত। দেশের বাইরে এমপিদের বিভিন্ন সভা বা সেমিনারে অংশ নেওয়ার জন্য স্পিকার বিরোধীদলীয় নেতার কাছে তালিকা চাইলে তিনি সব সময় নিজের নাম দেন। এর সঙ্গে চারজনের নাম প্রস্তাব করলেও প্রতিবারই নাম থাকে এমপি সেলিম উদ্দিন ও রওশন আরা মান্নানের। এতে দলের অন্য এমপিরা স্বাভাবিক কারণেই ক্ষুব্ধ। আর বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তিনি মূলত ছায়া প্রধানমন্ত্রী। সে ক্ষেত্রে ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে সফরে তিনি অংশ না নিলেও পারেন।’

জাপার সংসদ সদস্য মো. নোমান এ বিষয়ে বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নেত্রীই ভালো জানেন। সেলিম উদ্দিনকে হয়তো ম্যাডাম ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন। আর ম্যাডাম যেহেতু মহিলা তাই সফরকালে একজন মহিলা প্রয়োজন। এ কারণেই তিনি রওশন আরা মান্নানকে সঙ্গে নিয়ে যান।’

সম্প্রতি জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে ছিলেন ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী। এতে যোগ দেন রওশন এরশাদ। গত বছর জাম্বিয়ায় আইপিইউ সম্মেলনে জাপার একই প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরীর নেতৃত্বে। সে সময় রওশন এরশাদের জন্য পাঁচতারা হোটেল বরাদ্দ না দেওয়ায় চিঠি চালাচালি হয়। পরে অবশ্য উন্নত হোটেলের ব্যবস্থা হয়। ২০১৪ সালে জেনেভায় অনুষ্ঠিত আইপিইউ সম্মেলনেও রওশন এরশাদ গিয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকারের নেতৃত্বে আলোচিত সেলিম উদ্দিন ও রওশন আরা মান্নানকে নিয়ে।

সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং ও আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করায় বিব্রত দলের এমপিসহ তৃণমূল নেতারা। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংসদে না থেকেও এ সুযোগ পাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে সংসদের বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির অবস্থান প্রশ্নবিদ্ধ হয় বলে তাঁদের অভিমত।

পার্টির একাধিক নেতা অনুযোগের সুরে বলেন, বাজেটসহ জাতীয় ইস্যুতে সংসদের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদ। আগে কোনো বিরোধীদল এমন কাজ করেননি। দলীয় কার্যালয় বাদ দিয়ে সংসদে যেখানে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটি ব্রিফিং করে তা ব্যবহার মানানসই নয়।

জাতীয় পার্টি সরকারের সঙ্গে থেকেও তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নাজেহাল ও বঞ্চিত হচ্ছে। সংসদে বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিলেও জাপা নেতাকর্মীদের সঙ্গে রওশনের দূরত্ব ক্রমেই বাড়ছে বলে মনে করেন পার্টি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। নিজ এলাকা ময়মনসিংহ ছাড়া তিনি কোনো সাংগঠনিক জেলা সফর করেননি। এমনকি পার্টি চেয়ারম্যান এরশাদের সঙ্গে তাঁর মতপার্থক্য প্রকাশ্যে আসায় নেতাকর্মীদের প্রায়ই টিপ্পনির টিকার হতে হয়। -কালের কন্ঠ।
১৪ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে