বুধবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৬, ০২:১২:১৬

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে বাংলাদেশের উদ্যোগ বিশ্বে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধে বাংলাদেশের উদ্যোগ বিশ্বে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত

রিমন মাহফুজ: ২২তম বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশ স্পষ্টতই বলেছে যে, বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য বাংলাদেশ কোনোভাবেই দায়ী নয়। তার পরেও বাংলাদেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়ণরোধে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যা বিশ্বে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে।
জলবায়ু সম্মেলনের সাইড ইভেন্টে বাংলাদেশ ও জার্মান উন্নয়ন সংস্থার  যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক আলোচনাসভায় বাংলাদেশের এ অবস্থান ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে। এই আলোচনায় বাংলাদেশ ছাড়াও মেক্সিকো, নামিবিয়া ও ভিয়েতনাম স্ব স্ব দেশের কার্বন কমানোর পরিকল্পনা তুলে ধরেন।

বাংলাদেশের পক্ষে পরিকল্পনা তুলে ধরেন পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক মির্জা শওকত আলী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী নয়। এ দেশকে মাথাপিছু দশমিক ৩৫ শতাংশ কার্বন নি:সরণ করে। যা বৈশ্বিক উষ্ণতায় কোনো ভুমিকা রাখে না। তা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে তিনটি খাতে ৫ শতাংশ কার্বন কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে। বিদ্যুৎ, পরিবহন ও শিল্পখাতে কার্বন কমানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ পরিকল্পনা গ্রহণ করেই বসে থাকেনি। তা বাস্তবায়নে রোড ম্যাপও তৈরি করেছে। যা খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সবগুলো খাতের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন দেখভাল করার জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি উপদেষ্টা কমিটিও গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয় এই কমিটির সদস্য থাকবে। এছাড়া প্রত্যেকটি খাতে আলাদা আলাদা ওয়ার্কিংগ্রুপ কাজ করবে। যার নেতৃত্বে থাকবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।

আলোচনায় মেক্সিকোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জলবায়ুর পরিবর্তন রোধে মেক্সিকো অভিযোজন ও প্রশমন দুই বিষয়েই কাজ করছে। এ ক্ষেত্রে সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাত সরকারকে সহায়তা করছে।
ভিয়েতনাম বলেছে, আমাদের ঠিক এ্যাকশন প্লান নেই কার্বন নির্গমণের জন্য। কিন্তু আমরা ছোট ছোট প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।  ভিয়েতনাম এমনিতেই একটি জ্বালানিদক্ষ দেশ। ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নি:সরন নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকবে।
নামিবিয়া বলেছে, তারা একটি মাষ্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। ইতিমধ্যে কম কার্বন নি:সরণের জন্য গণপরিবন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এবং বেসরকারি খাতেও কম কার্বন নি:সরণকারী যানবাহনকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তবে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা দক্ষতা ও অর্থায়ন নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তৃতায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, কার্বন নির্গমন ও গ্লোবাল ওয়াংর্মিং নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কার্বন আমাদের নানা সমস্যার সৃষ্টি করছে। এটা কমাতে হলে ক্যাপ পড়াতে হবে। কোন দেশ কিভাবে ক্যাপ পড়াবে তা এখনই ঠিক করতে হবে। কারণ পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে খারাপ হচ্ছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো বেশি ভুগছে। শুধু অভিযোজন করে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা সম্ভব নয়। ফলে উন্নত দেশগুলোতে কার্বন কমানোর প্রতি জোর দিতে হবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হলেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রতিরোধ দক্ষতা বাড়ছে। নিজস্ব উদ্যোগেই বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ৪০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছে বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায়।
তিনি বলেন, আমরাও কার্বন নির্গমন কমাতে চাই। তবে সকল দেশকেই এটা কমাতে হবে। আমরা কার্বন কমাতে গিয়ে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত করতে পারবো না। বাংলাদেশ এখন একটি উদীয়মান দেশ। গত এক দশক ধরে ৬ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। এ বছর ৭ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে। ফলে এই অর্জনকে আমরা ব্যাহত করতে পারবো না। উন্নয়ন করতে হলে আমাদের বিদ্যুত লাগবে। আমরা এখন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে পরিণত করছি। এ ক্ষেত্রে যাতে কার্বন নির্গমণ না বাড়ে সে ব্যাপারে আমরা বেশ সতর্ক। ইতিমধ্যে আমাদের দেশে ৫ মিলিয়ন (৫০ লাখ) সোলার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। দেশের গরীব মানুষ এই সোলার সিস্টেম থেকে বিদ্যুৎ পেেেয় খুব খুশি। তবে আমরা গ্রীডভিত্তিক সোলার বিদ্যুতে যেতে পারবো না। কারণ আমাদের খুব বেশি পরিত্যাক্ত জমি নেই। এসব সত্ত্বেও আমরা নিজস্ব উদ্যোগে কার্বন কমানোর যে প্রতিশ্রতি দিয়েছি তা বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর। বর্তমানে বিশ্বের সবগুলো দেশ কার্বন কমানোর যে প্রতিশ্রুিতি দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করলেও বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। তাই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে তথা ধরনীকে রক্ষা করতে হলে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্বন নির্গমণের ক্ষেত্রে অবদান আরো বাড়াতে হবে।
১৬ নভেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এইচএস/কেএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে