বুধবার, ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:১০:২৭

প্রাণ বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে বাংলাদেশে ঢুকছে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা

প্রাণ বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে বাংলাদেশে ঢুকছে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা

নিউজ ডেস্ক : মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের নির্যাতিত রোহিঙ্গারা যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য সীমান্তে কড়াকড়ি অব্যাহত রয়েছে। তারপরও রোহিঙ্গারা নাফ নদী পার হয়ে টেকনাফে প্রবেশের চেষ্টা করছে।

এরইমধ্যে আনুমানিক ১,৫০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। কক্সবাজারের সাংবাদিক ও সীমান্ত এলাকার অধিবাসীরা এ কথা জানান।

কক্সবাজারের টেনাফের হোয়াইকং সীমান্তের মোহাম্মদ হোসেন টেলিফোনে জানান, ‘প্রায় প্রতিদিনই নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গরা নৌকায় করে বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। বিজিবি তাদের ফিরিয়ে দিচ্ছে। তাদের কেউ কেউ নদীতে ঝাঁপ দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার স্থানীয়দের সহায়তায় আশাপাশের গ্রামে আশ্রয় নিচ্ছে। রাতেও কিছু রোহিঙ্গা দালালদের সহায়তায় বাংলাদেশে আসছে। তারা স্থানীয়দের আশ্রয়ে পরিচয় গোপন করে থাকছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘যারা আসতে পারছেন, তাদের কাছে নির্মম নির্যাতনের কথা জানা যাচ্ছে। তাদের কেউ পরিবারে সদস্যদের হারিয়েছন, কারো ঘড়বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে।’

তিনি আরো জানান, ‘এই রোহিঙ্গারা নদীতে ছিনতাই এবং চুরি-ডাকাতিরও শিকার হচ্ছেন।’

কক্সবাজারের সাংবাদিক আব্দুল আজিজ জানান, ‘এ পর্যন্ত কয়েক দফায় আশ্রয় নিতে আসা পাঁচ শতাধিক রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে বিজিবি। তবে নানাভাবে ১৫০০-র মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পেরেছে বলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি। প্রধানত রাতেই তারা নাফ নদী পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। তাদের টাকার বিনিময়ে কিছু লোক বাংলাদেশে ঢুকতে সহায়তা করছে।’

তিনি আরো জানান, ‘যেসব রোহিঙ্গা টেকনাফ এলাকায় প্রবেশ করতে পেরেছেন তাদের কয়েকজনের সঙ্গে আমি কথা বলেছি৷ তারা জানিয়েছেন রাখাইন প্রদেশে হত্যা, নির্যাতন এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া অব্যাহত আছে।’

জাতিসংঘের অভিবাসন সংক্রান্ত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব মাইগ্রেন্টস (আইওএম) -এর নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রত্যক্ষদর্শী আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, সোমবার ৫শ'রও বেশি রোহিঙ্গাকে সীমান্ত পেরিয়ে পাহাড়ি ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিতে দেখেছেন তিনি। জাতিসংঘের অন্যান্য ত্রাণ কর্মকর্তাও তাদেরকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেখেছেন।

এদিকে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ স্যাটেলাইট থেকে তোলা কিছু ছবি প্রকাশ করে জানিয়েছে, অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বরের মধ্যে মায়ানমারে মংডু জেলার তিনটি গ্রামের ৪৩০টি ভবন পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আর ২১ নভেম্বর স্যাটেলাইট থেকে তোলা আরো কিছু ছবি বিশ্লেষণ করে জানায়, ১০ নভেম্বর থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সহিংসতায় নতুন করে মংডু জেলার ৫টি গ্রামে ৮২০টি ঘর-বাড়ি ও অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের হিসেব মতে, সবমিলে এক মাসে ধ্বংস হওয়া ঘর বাড়ির সংখ্যা ১২৫০।

জাতিসংঘের হিসেবে চলমান সহিংসতায় ৮৬ জন রোহিঙ্গা নিহত হয়েছেন। ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে ৩০,০০০ মানুষ।

এর আগে ২০১২ সালে উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের তাণ্ডবে প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা মারা যায়। ঘর ছাড়তে বাধ্য হয় ১ লাখেরও বেশি মানুষ।

বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজারের তিনটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ৩৩ হাজার। তবে অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরনার্থীর সংখ্যা তিন লাখেরও বেশি হবে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়। অবশ্য এখন বাংলাদেশ নতুন করে রোহিঙ্গাদের প্রবেশ করতে দিচ্ছেনা। সরকারের পক্ষ থেকে কেউ কিছু স্পষ্ট করে বলছেনও না। সোমবার সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের নিয়ে অস্বস্তিকর অবস্থায় আছি।’

এদিকে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে কক্সবাজারে বৈঠক হতে পারে বলে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিজিবি’র কক্সবাজারের সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আনিসুর রহমান জানান। তবে বৈঠকে কী নিয়ে আলোচনা হতে পারে তা তিনি জানাননি। সীমান্ত পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে জানাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা যা করার তা-ই করছি।’

সূত্র জানায়, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে যাতে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে টহল এবং নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সূত্র: ডয়চে ভেলে
২৩ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে