রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:৩০:৫৯

তৎপর চার কূটনীতিক

তৎপর চার কূটনীতিক

কূটনৈতিক প্রতিবেদক : ইতালিয়ান সিজার তাভেলা ও জাপানি হোশি কোনিও খুনের প্রেক্ষাপটে বিদেশি নাগরিকদের জন্য সতকর্তা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে সামনে থেকে তৎপরতা চালাচ্ছেন চার কূটনীতিক। এর মধ্যে রয়েছেন ঢাকার কূটনৈতিক কোরের ডিন ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার বরার্ট ডবি্লউ গিবসন সিএমজি, মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক ও কানাডার হাইকমিশনার পিয়েরে বেনওয়া লারামে। প্রভাবশালী এই চার রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারই সরকারকে গত মাসে আগাম সতর্কতার তথ্য দেওয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময় নিজেদের অবস্থানের প্রেক্ষাপটে সরকারের সঙ্গে দেনদরবার করছেন।

ঢাকার কূটনৈতিক সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে অস্ট্রেলিয়া ও পশ্চিমা স্বার্থের ওপর বাংলাদেশে জঙ্গি হামলা হতে পারে এমন তথ্য পেয়েছিল যুক্তরাজ্য। পরে সন্ত্রাস দমনে পারস্পরিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে সেই তথ্য অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আদান-প্রদান করা হয়। ২৫ সেপ্টেম্বরের আগে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়ার পরই অস্ট্রেলিয়া সাবধান হয়ে গিয়ে সতর্কবার্তা জারি করে।

এ তথ্যের ভিত্তিতেই বাংলাদেশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি দেখতে আসেন ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কর্মকর্তারা। তারা ঢাকায় থাকতেই গুলশানে কূটনৈতিক জোনে খুন হন ইতালিয়ান সিজার তাভেলা। বাতিল হয় অস্ট্রেলিয়ার সফর। পরে এ ঘটনার পাঁচ দিনের মাথায় রংপুরে খুন হন জাপানের গবেষক হোশি কোনিও। সেই সময় থেকে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ আরও কয়েকটি দেশ বাংলাদেশ সফরের বিষয়ে নিজ দেশের নাগরিকদের নিরুৎসাহিত করছিল। আগের সেই সতর্কবার্তাই আবার হালনাগাদ করে উচ্চ ঝুঁকির কথা বলেছে যুক্তরাজ্য। অস্ট্রেলিয়া ও কানাডা বজায় রেখেছে তাদের সতর্কতা। যুক্তরাষ্ট্র তাদের সতর্কবার্তা ১ অক্টোবরের পর হালনাগাদ না করলেও নিজেদের নাগরিকদের বিভিন্নভাবে সতর্ক রেখেছে।

জানা যায়, মঙ্গলবার ঢাকার ৪৫ কূটনীতিক ও বিশ্ব সংস্থার প্রতিনিধিদের ব্রিফিংয়ের পরই বিকালে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার এই শীর্ষ কূটনীতিকরা। বুধবার দুপুরে আবারও রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মধ্যাহ্নভোজের ওই আলোচনায় অংশ নেন গিবসন, বার্নিকাট, লারামে ও উইলকক। প্রভাবশালী এই কূটনীতিকদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে রাখা হয় গোপনীয়তাও।

এ কারণেই মধ্যাহ্নভোজের এ আলোচনায় পররাষ্ট্র সচিব ছাড়া অন্য কোনো কর্মকর্তাকে উপস্থিত রাখা হয়নি। বৈঠকে সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির পাশাপাশি দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার তদন্তের অগ্রগতি এবং এ ক্ষেত্রে বিদেশি সহায়তা নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানা গেছে। অবশ্য এর আগের দিনই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে একই স্থানে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট পৃথক একান্ত আলোচনা করেন।

অন্যদিকে আগাম তথ্যের কথা ফলাও করে প্রচার করে অ্যালার্ট জারির নামে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা ও আইএসের সম্পৃক্ততার বিষয়ে অতিরিক্ত আগ্রহের কারণে বিশেষ কিছু রাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডে নাখোশ সরকার। হামলার শঙ্কা থাকার কথা জানতে পেরে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিতে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেয়ে প্রচারে বেশি মনোযোগী হয়।

বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, নিরাপত্তা হুমকির তথ্য ও সতর্কবার্তা যেভাবে প্রচার করা হয়েছে, এর নেপথ্যে অন্য কিছু থাকতে পারে। বিশেষত ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে ক্রিকেটকে ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে। সরকারের একটি অংশ মনে করছে, পশ্চিমা কূটনীতিকদের একটি অংশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তাদের প্রভাব বাড়িয়ে স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ঠেকিয়ে নিজেদের মতো এই ভূখণ্ডকে ব্যবহার করতে চাইছেন। এ কারণেই নিরাপত্তা জোরদারের পরও নজিরবিহীনভাবে সতর্কবার্তা প্রচার করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করে চেষ্টা করা হচ্ছে চাপ তৈরির।-বিডিপ্রতিদিন
১১ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে