নিউজ ডেস্ক : রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে আলোচনা সমালোচনার সীমা নেই। এবার এই বিষয় নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিলেন সাংস্কৃতিক বিদ্যালয় বাতিঘরের পরিচালক তামান্না সেতু।
ফেসবুকে এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য বর্ডার উন্মুক্ত করে দেয়া উচিত কি না সেটা এক প্রসঙ্গ। রোহিঙ্গাদের সাথে যা হচ্ছে তা ঠিক না ভুল সেটা আরেক।
অতএব, ‘আপনি কি বলতে চান ওদের সাথে যা হচ্ছে তা ঠিক? না বললে বর্ডার খুলে দিন’ টাইপ কথা বলার মতো সহজ অংক এটা নয়।
আমরা অন্য দেশের মানুষ হয়ে, মানবিক হয়ে এটা বলছি এবং বলাই উচিত, যা হচ্ছে তা ঠিক হচ্ছে না। যা হচ্ছে এর থেকে অমানবিক বিষয় আর হতে পারে না। যত দ্রুত সম্ভব এ অবস্থার অবসান করার জন্য বিশ্বনেতাদের, জাতিসংঘের যা যা করণীয় তা করা উচিত। যা হচ্ছে তার জন্য মিয়ানমার সরকারকে জবাবদিহিতার জন্য বাধ্য করা হোক। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে শান্তিতে বসবাসের জন্য মিয়ানমারকে বাধ্য করা হোক। সকলের উচিত এ বিষয়ে আন্দোলন করে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা।
যেখানে দাঁড়িয়ে আমি আমার দেশের সনাতন ধর্মী মানুষদের নিজ দেশ ছেড়ে ভারত যাওয়া মেনে নিতে পারি না, সেখানে দাঁড়িয়েই আমি চাই না অন্য একটি জাতি তার দেশ, ১৪ পুরুষের বসতভিটা ছেড়ে শরণার্থী হয়ে আরেক দেশে আসুক। শরণার্থী জীবন বেছে নেয়ার থেকে তাদের দেশেই তাদের স্থায়ী হবার যুদ্ধে তাদের সঙ্গী হতে পারা আমার কাছে যৌক্তিক। সেই যুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারের কিছু করার থাকলে তা অবশ্যই করা উচিত।
বর্ডার উন্মুক্ত করে দিয়ে লক্ষ রোহিঙ্গাদের আসা নিশ্চিত করার কথা যারা বলছেন তারা কি প্রতি পরিবারের জন্য নিজেদের বাড়ির একটি অংশ খালি করে দেবেন কি না আমি জানি না। ও কাজটি আমি করতে পারবো না বলেই ব্যক্তি আমি বর্ডার খুলে দিতে বলছি না।
আমি জানি পুরো দায়িত্বটা নিতে হবে রাষ্ট্রকে। রাষ্ট্র কতটুকু সক্ষম এ দায়িত্ব নেয়ার জন্য অর্থাৎ লক্ষ মানুষের চাপ, একটি করে থাকার ঘর, তাদের সন্তানদের স্কুল, তাদের চাকরি, লক্ষ মানুশের খাবার জোগানের রসদ ইত্যাদি বিষয়ে সক্ষম কি না বাংলাদেশ সরকার সেটা ভাবার বিষয়। আমার জানামতে আমাদের দেশের বেকার সমস্যা, নদী ভাঙনের শিকার জনপদ, উচ্ছেদ করা উপজাতিদের বসতবাড়ির ব্যবস্থাই আমার দেশ এখনো করতে পারছে না। সে অবস্থায় অন্য কারো দায়িত্ব নিয়ে শেষ রক্ষা করা কি আদৌ সম্ভব?
রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমি কিছু কেন লিখছি না সে প্রশ্নের উত্তর আমার কাছে অনেকেই চেয়েছেন। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, এক মিনিটের জন্য ধরে নিন মিয়ানমারের এই রোহিঙ্গা প্রজাতি আসলে বিশাল একটি হিন্দু প্রজাতি। তারা জীবন বাঁচাতে আমাদের দেশে আসতে চাচ্ছে। ভেবে বলুন, আপনারা কি এখনো চান আমরা বর্ডার খুলে দেই?
চাওয়ার মানুষের পারসেন্টিজটা ধাই করে ৯০ ভাগ কমে যাবে বলে আমার ধারণা। অতএব, যে ৯০% মানুষ দাবি করছেন বর্ডার খুলে দেয়া আপনাদের মানবিক চাওয়া, তারা সে কথা বলে কেবলই লোক হাসাচ্ছেন।
সবশেষে তামান্না সেতু লিখেছেন, বিশ্বনেতাদের কাছে এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার কাছে আকুল আবেদন আপনারা যে করেই হোক রোহিঙ্গাদের বাঁচান। নারী শিশুসহ সকল রোহিঙ্গাকে যেভাবে হত্যা, (---), দেশ ছাড়ার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে তা চলতে থাকলে এর দায় অবশ্যই এবং অবশ্যই শুধুমাত্র প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে দেয়া যাবে না।
২৬ নভেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম