রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৪৪:০৪

‘দুলাভাই এখন হাসে, স্বপ্নও দেখে’

‘দুলাভাই এখন হাসে, স্বপ্নও দেখে’

ড. সরদার এম. আনিছুর রহমান : শিরোনাম পড়ে পাঠকরা হয়তো বলতে পারেন- ‘আপনার দুলাভাই হাসে, স্বপ্ন দেখে’ এনিয়ে আবার লেখার কী আছে। এ রকম তো অনেকের দুলাভাই-ই হাসি-মস্করা করেন, নতুন স্বপ্ন দেখেন।সেগুলো তো আর অন্যকে জানানো হয় না। আপনি কেন এখানে ওসবের অবতারণা করছেন, এটা অন্যদের বা জানার কি দরকার আছে?

সুপ্রিয় পাঠক, ঠিক বলছেন। তবে আমার দুলাভাই অন্য দশজনের মতোন নন, তার স্বপ্নটাও অন্যদের মত নয়। একেবারেই ব্যতিক্রম। তার হাসি-স্বপ্নের মাঝে লুকায়িত আছে আমাদেরও সবার হাসি-কান্না। তাই বিষয়টি শেয়ার করতেই আমার আজকের এই লেখা।

প্রথমেই দুলাভাইয়ের পরিচয়টা দেয়া দরকার। অবশ্য এর আগেও দুলাভাইকে নিয়ে নিবন্ধ লেখেছি। যারা ওই নিবন্ধটি পড়েছেন তারা আমার দুলাভাই সম্পর্কে ওকেবহাল। তবে আজকের প্রসঙ্গটি একেবারেই আলাদা।

এটা সত্য যে, সবমহলেই আমার দুলাভাইয়ের একটা ব্যাপক পরিচিতি রয়েছ। গ্রামবাংলার নারী-শিশু-কিশোর, আবাল-বৃদ্ধ, বনিতা সবাই তাকে চিনেন। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে যেমন পরিচিত রয়েছে তেমনি কবি ও প্রেমিক হিসেবেও তার খ্যাতি কম নেই। ৮৫ বছর পেরিয়ে ৮৬তে পা রাখলেও তাতে কী! এখনও সুন্দরী তরুণীদের সাথে সেলফি তুলতে তার ভাল লাগে।

এইত ক’দিন আগেই তিনি বললেন, ‘সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে সেলফি তুলতে আমার খুব ভাল লাগে, ‘নারীরা শোপিস’ ‘যৌবন একটা গোল্ড লিফ সিগারেট। আমার যৌবন আর বেশি দিন নেই। কয়েক বছর পর আমি মধ্যবয়স্ক হয়ে যাব। তাই যতোদিন পারি, এই ক্ষণস্থায়ী যৌবনকে উপভোগ করতে চাই।’ এসব নানা রোমান্টিক কথা বলে তিনি মাঝেমধ্যেই সংবাদপত্রের শিরোনাম হচ্ছেন, সবার আলোচনায় থাকছেন। এছাড়া একাধারে ৮ বছর দেশ শাসন করে স্বৈরশাসকের খ্যাতি পেলেও এখনও ক্ষমতার মূল ক্রীড়নক। আমার এই বর্ণনায় পাঠকরা হয়তো এতক্ষণে দুলাভাইকে চিনে ফেলেছেন।   

এখন পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ‘উনি’ আবার কীভাবে আমার দুলাভাই! হ্যাঁ, এ প্রশ্ন উঁকি দেয়াটাই স্বাভাবিক। আগের নিবন্ধেই বিষয়টি খোলাসা করেছিলাম। এরপরও নতুন পাঠকদের জন্য পুনরুল্লেখ করছি। তিন দিক থেকে তিনি আমার দুলাভাই। এক. রওশনের বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের সুতিয়াখালি এলাকায়। আমাদের গ্রামের বাড়ি থেকে ১০-১২ মাইল দূর। তাই আমাদের ময়মনসিংহ-ত্রিশালের সর্বত্রই ‘গণদুলাভাই’ হিসেবেই এরশাদের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে। আমার জানা মতে, তিনি নিজেও এটাকে বেশ এনজয় করেন। এমন কী নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় কিংবা পার্টির মিছিল-সমাবেশে আজও আমাদের এলাকায় স্লোগান দেয়া হয় ‘দুলাভাই ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই,।

দুই. পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আবুবকর স্যারের মেয়ে আমাদের অগ্রজ বড় আপা বিদিশাকে বিয়ে করেন সে হিসেবেও তিনি আমাদের দুলাভাই। রাজশাহীতেও ‘দুলাভাই’ হিসেবেও তার একটা পরিচিতি রয়েছে। পিএইচডি গবেষণাকালে, রাজশাহী সার্কিট হাউজে তাঁর সাথে দেখা হতো, সেখানেও তাকে দুলাভাই বলেই সম্বোধন করতাম।

তিন. দুলাভাইয়ের বহুল আলোচিত সাবেক প্রেমিকা জিনাত হুসাইনও আমাদের ময়মসিংহেরই মেয়ে। সেই সুবাদেও তিনি আমার দুলাভাই। সঙ্গত কারণে আজকের কলামেও তাকে দুলাভাই বলেই সম্বোধন করলাম।

থাক এসব কথা। এবার ফিরে আসি আজকের মূল বিষয়ে। দুলাভাই কেন মুচকি হাসেন আর তিনি কী ধরনের বা স্বপ্ন দেখেন?

এখানে বলে রাখি নানা দিক থেকেই আমার  দুলাভাই ‘সৌভাগ্যবান’। তিনি এমনই একজন ব্যক্তি, তার তুলনায় তিনি নিজেই, দ্বিতীয় কাউকে খুজে পাওয়া দুষ্কর। কেননা, আমাদের রওশন আপাকে পাশে রেখেই এ জীবনে অনেক নারীর প্রেমে পড়েছেন, হয়েছেন নতুন নতুন আপার জীবন সঙ্গী। কিন্তু উদার হৃদয়ের অধিকারী বড় আপা (রওশন) কখনো তাকে ছেড়ে যাননি, পড়ন্ত বেলাও পাশে রয়েছেন । এছাড়া গণঅভ্যুত্থানে কোন স্বৈরশাসক ক্ষমতাচ্যুত হবার পর মূল ধারার রাজনীতিতে এভাবে টিকে থাকতে পেরেছেন এমন নজির বিশ্বেও বিরল।

এমন কী তিনি বর্তমানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূতও বটে। তার দল হয়েছে প্রধান বিরোধীদল। সহধর্মিনী হয়েছেন বিরোধী দলীয় নেত্রী। শুধু তাই নয়, সরকারের মন্ত্রীসভারও সদস্য হয়েছেন তার দলের কয়েকজন নেতা। কী সৌভাগ্য! সরকারের সাথে কী মধুর সম্পর্ক! কী অভিনব সংসদীয় গণতন্ত্র! এরশাদ শুধু রাজনীতিতেই টিকে নেই, যিনি জেলে থেকেই বারবার একাধিক আসনে জয়ীও হন। যা কপালে জোটেনি পাকিস্তানের আইয়ূব খান, ইয়াহিয়া খান, ইস্কান্দার মির্জা, জিয়াউল হক, পারভেজ মোশাররফ কিংবা আমাদের জিয়াউর রহমানেরও।

এরশাদ শুধু রাজনীতিতেই হিরু নন, একজন সনামধন্য কবিও বটে। এ পর্যন্ত তার অনেক কবিতার বই বেরিয়েছে। ক্ষমতা থাকাকালে তার রাজদরবারে কবি-সাহিত্যিকদের আনাগোনাও ছিল বেশ। সঙ্গীতপ্রেমীও বটে। এ থেকে সহজেই অনুমেয়, তিনি কতটা ‘রোমান্টিক পুরুষ’!

যদিও বর্তমানে রাজনীতি নিয়ে সকালে বলেন এক কথা, বিকেলে আরেক কথা আর রাতে বলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। সকালে সরকারের সমালোচনা, বিকেলে বিরোধী দলকে নানা উপদেশ দেন। রাতে আবার এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্নও দেখেন।

তেমনি ক্ষমতায় থাকাকালে তার সকালে, বিকেল, রাতে পাল্টে যেত কথিত প্রেমিকার তালিকাও। তার প্রেমিকার তালিকাও অনেক দীর্ঘ। ক্ষমতায় থাকাকালে ও গণঅভ্যুত্থানে পতনের পর তার প্রেম, পরকীয়া, রোমান্টিক প্রেমকাহিনী দেশ-বিদেশে আলোচনার ঝড় তোলে।  

তিনি শুধু সামরিক স্বৈরশাসক হিসেবেই নয়, রাজনৈতিক দাবাড়ু, বহুবিবাহ, অসংখ্য প্রেমিকা, সন্তানসহ নানা দুর্ঘটনায় দেশ-বিদেশে আলোচিত-সমালোচিত। ক্ষমতা দখল করে একদিকে তিনি রাজনীতিতে ধর্মকে টানেন, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম  করেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার করেন। এমনকি পরদিন কোন মসজিদে নামাজ পড়বেন, তাও আগের রাতে স্বপ্নে দেখেন। অন্যদিকে এদেশের কোনো নেতা বহুগামিতা নিয়ে রাজনীতিতে এমন সংযোজন-বিয়োগের দ্বিতীয় নজির তার মতো আর কেউ সৃষ্টি করতে পারেননি।নারীদেরকে কথিত প্রেমের ফাঁদে ফেলতে এরশাদ ক্ষমতা দখল করে কবিতা লেখেন। বলা হয়ে থাকে, রোমান্টিক কবিতা ও কবির প্রতি নারীরা দুর্বল। তাই নারী, গোলাপফুল, সেক্স বিষয়ক এসব কবিতা ছাপাতে বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদকদেরকে বাধ্যও করেন রাষ্ট্রপতি এরশাদ। এরশাদের পরকীয়া কাহিনী সাপ্তাহিক যায়যায়দিন এ ছেপে তখন দেশ ছাড়তে হয় পত্রিকাটির সম্পাদক শফিক রেহমানকে।

প্রঙ্গসত, এরশাদ ১৯৯৭ সালে জেল থেকে বের হওয়ার পর সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমি একজনকে ভালোবাসতাম। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, তিনি কি জিনাত মোশাররফ? জবাবে এরশাদ বলেন, অফকোর্স, তোমরা আমার ছেলের মতো। তার নামটা লিখো না প্লিজ!ক্ষমতায় থাকাকালে জিনাতের সঙ্গে এরশাদের পরকীয়া কাহিনী ছিল অনেকের মুখে মুখে। তার নামের সঙ্গে মিল রেখে জিনাত মোশাররফ নতুন নামকরণ করেন জিনাত হুসাইন! তার সঙ্গে পরকীয়া নিয়ে দৈনিক সংবাদের সাংবাদিক রাশেদ আহমদের কাছে খোলামেলা সাক্ষাৎকার দেন এরশাদ। এতে ঘর ভাঙ্গে জিনাতের। ছাড়াছাড়ি হয়ে যায় সাবেক মন্ত্রী মোশারফের সঙ্গে। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করলে এরশাদের ইচ্ছায় সংরক্ষিত আসনে মহিলা সংসদ সদস্য হন জিনাত।

এছাড়াও এরশাদের প্রেমিকার তালিকায় ছিলেন মেরি, শাকিলা জাফর, নাশিদ কামাল, নীলা চৌধুরী, সালমা বীল হেনা, আমেনা বারী প্রমুখ। প্রেমিকা থেকে জীবনসঙ্গী হয়েও সম্পর্ক ধরে রাখতে পারেননি আমাদের আপা বিদিশা। এরশাদের সঙ্গে দাম্পত্য জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি ‘শত্রুর সঙ্গে বসবাস’ নামে একটা বইও লিখেছেন।

আমরা জানি, জনঅসন্তোষে সব সেনাশাসকের পরিণতি হয়েছে কল্পনার চেয়েও ভয়াবহ। ব্যতিক্রম এরশাদ। একনায়কতন্ত্রের রাজদরবার- ছাড়ার পরও মূলধারার রাজনীতিতে এখনও সক্রিয়। এখনও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। বিশ্বের অন্য স্বৈরশাসকেরা কি তা কখনো ভাবতে পারেন? রাজনীতিতে শুধু টিকেই থাকেননি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের ক্ষেত্রে নাটের গুরু হিসেবেও ভুমিকা রেখে চলেছেন।

গণঅভ্যূত্থানে ক্ষমতাচ্যূত হয়েও বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি তাকে। এর কারণ হচ্ছে, আওয়ামী লীগ, বিএনপি পরবর্তীকালে যে কোনো প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে বার বার এরশাদেরই দ্বারস্থ হয়েছে। নিজেদের দলের ভেতরে তো নয়ই, শাসক হিসেবে সংসদে, রাষ্ট্র পরিচালনায়-কোথাও ন্যায্যতা ও নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয়নি হাসিনা-খালেদা। ব্যক্তি, পরিবার আর আত্মীয়তাকে প্রধান্য দেয়া হয়েছে সর্বস্তরে। সে হিসেবে আমার দুলাভাই এরশাদ সফল - তার রাজনীতির দূষণ প্রধান রাজনৈতিক দল ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আক্রান্ত করেছে পরম স্বার্থকতায়।

আজও স্মরণে আছে, ১৯৮৬ সালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবাহী দল আওয়ামী লীগকে সাথে পান সামরিক শাসন থেকে তথাকথিত গণতন্ত্র যাত্রায়। আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে আ’লীগকে সঙ্গ দিয়েছেন পরম কৃতজ্ঞতায় নানান ভানুমতির খেল দেখিয়ে! ফলে বলা যায়- রাজনীতিতে নীতিহীনতাই তাদের আদর্শ।

প্রসঙ্গত, একটা সময়ে শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া ছিলেন তার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করে তাদের ও দলকে করেছেন চরম নিপীড়ন। তারপরেও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার লোভে এরশাদকে জোটে ধরে রাখতে বা জোটে পেতে দু’নেত্রীর প্রাণান্তকর চেষ্টা দেশের গোটা রাজনীতিকে করেছে দেউলিয়া। নীতিহীনতা দিয়ে এরশাদ দু’নেত্রীকে জয় করেছেন, ক্ষমতার নোংরা খেলায় নিজের অপরিহার্যতা প্রমাণ করেন। স্বৈরশাসক হিসেবে বাংলাদেশে প্রথম গণঅভ্যূত্থানে পতিত হবার পরেও প্রাক্তন শত্রুপক্ষকে পেয়েছেন মিত্র হিসেবে। এক্ষেত্রে তিনি যদি আওয়ামী লীগের সঙ্গ ছাড়েন, বিএনপি মুখিয়ে থাকে তাকে সঙ্গী করার জন্য। তার রাজনীতির মূল অনুসঙ্গ হচ্ছে, নীতিহীনতা ও ভ্রষ্টাচার। তিনি কখনোই নীতি মানেননি, ন্যায্যতা চাননি-দলের মধ্যে, দেশের মধ্যে, কোথাও না। এরপরও নাটের গুরু।  

রাজনীতিতে দু’কূল রক্ষা করে কি করে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা যায়, সেই চর্চা বরাবরই করে যাচ্ছেন। রাজনীতিতে এই এরশাদ এখনও অনুকরণীয় এবং অনুসরণীয় আমাদের বড় দুই দলের কাছে। প্রধান দুই দলের দুই নেত্রীর পাশে সেই স্বৈরাচার এরশাদকে পাশে দেখে জাতির মাথা লজ্বায় নোয়ায়। আর তাদের রাজনৈতিক হানাহানির কারণে স্বৈরশাসক এরশাদের আমলকে এখনও মানুষ বর্তমানের চেয়ে ভাল হিসেবে স্মরণ করে। এখনও গ্রামবাংলায় অহরহ শোনা যায়- এরশাদই ভাল ছিলেন।  

তাই সম্প্রতি পার্টির এক অনুষ্ঠানে মুচকি হাসি দিয়ে আমার দুলাভাই এরশাদ বললেন, ‘আমরা জননন্দিত সরকার ছিলাম। এখনও দেশের মানুষ জাতীয় পার্টিকে ক্ষতায় দেখতে চায়।’ ‘যারা আমাকে স্বৈরাচার হিসেবে গালি দেয়, তারাই দেশকে পিছিয়ে নিয়ে গেছে। ৯০-এ ক্ষমতা ছেড়েছিলাম গণতন্ত্র রক্ষার জন্য। কিন্তু পরবর্তী সরকারগুলো গণতন্ত্রকে আরও ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। আগামিতে জনগণ আমাদের এককভাবে ক্ষমতায় দেখতে চায়।’

‘এখনকার প্রধানমন্ত্রী আমার চেয়েও বড় স্বৈরাচার। আমি গুলি করে মানুষ মারি নাই, মানুষ হত্যা করি নাই। এখন প্রতিদিন নূর হোসেন, বিশ্বজিৎ মরছে। কিন্তু আমাদের চোখে পানি আসে না।’ দুলাভাইয়ের কি অভিনব স্বীকৃতি! হায়! যদি আমাদের রাজনীতিবিদদের লজ্জা থাকিত..!

আমরা যেভাবেই দেখি না কেন, দুলাভাই এরশাদের এ কথাগুলো চরম সত্য। বলা যায়, বর্তমানে বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্র’ এর ন্যায় পৃথিবীর আর কোথাও এমন বিরল প্রজাতির গণতন্ত্র নেই। যেখানে সরকার-বিরোধী দল একাকার, আইন-শাসন ও বিচার বিভাগের অভিনবত্ব রূপ, আমলাদের অনাধিকার রাজনৈতিক চর্চার অভিনবত্ব একবারেই নজিরবিহীন। দুর্নীতির পাশাপাশি এখন আবার নতুন করে গ্রাস করছে জঙ্গিবাদ। এসবের দায় কার?

আমাদের দেশেও গণতন্ত্র আছে; কিন্তু সেটা শুধু আক্ষরিক অর্থেই। ঠিক তেমনই, যেমন- ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে কিন্তু গোয়ালে নেই’।

সবশেষে বলবো, বরাবরই স্বৈরাচারী শাসকরা ধরার বুকে অসাম্য ও অন্যায়ের দাবানলে দ্বগ্ধ করে বণী আদমকে পদপিষ্ট করে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে চরম নিষ্ঠুরতম পথ বাছাই করে নেয়। ফলে স্বৈরাচারী কোন শাসক যখন একটি জনবসতির উপর কর্তৃত্ব লাভ করে তখন তারা সেই জনপদের মানুষদের সবকিছু তথা সব নিয়ম-নীতি ধ্বংস করে ফেলে। তাইতো এক সময়ের স্বৈরশাসক আমার দুলাভাই স্বপ্ন দেখেন পুনরায় ক্ষমতাসীন হবার। হায়রে! ক্ষমতা, তোমার জন্য আমরা সবকিছুই বিসর্জন দিতে পারি।  
লেখক: গবেষক ও কলামলেখক, ই-মেইল- [email protected]
(লেখকের একান্তই নিজস্ব মতামত, এমটিনিউজ২৪ডটকমের সম্পাদকীয় নীতির আওতাভুক্ত নয়।)

১১ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে