সোমবার, ১২ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:০১:১৩

বিবাহ করিলে প্রমাণ হইবে সে অবিবাহিত

বিবাহ করিলে প্রমাণ হইবে সে অবিবাহিত

কাসাফাদ্দৌজা নোমান : মুরাদ সম্পর্কে আমার ছোট ভাই। ঢাকায় পড়ে থাকে সব সময়। বাড়িতে গেলে সবার সামনে এমন ভাব করে, যেন তার ঢাকায় অনেক কাজ। সে না থাকলে ঢাকা অচল। কিন্তু এবারের ঘটনা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঈদে বাড়ি যাওয়ার পর সে আর ঢাকার পথ মাড়ায়নি। এ নিয়ে জনমনে নানা রকম প্রশ্নের উদয় ঘটেছে। তার বন্ধুরা খুব চিন্তিত। একজন আমাকে ফেসবুকে জিজ্ঞেস করল, ‘ভাইয়া, মুরাদের কী হয়েছে? সে বাড়িতে এত দিন কেন?’
আমি জবাবে লিখলাম, ‘নতুন বিয়ে করলে তো একটু বেশিদিন বাড়িতে থাকবেই।’
: মুরাদ ভাই বিয়ে করছে কবে?
: এই তো ঈদের তিন দিন পর।
মুরাদের বন্ধু অভিমান করে বসল। ফেসবুকেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘একবার জানালও না!’ এই পর্যায়ে তার অভিমান ভাঙার কঠিন দায়িত্ব নিয়ে বললাম, ‘খুব তাড়াহুড়ার মধ্যে হয়েছে। তাই কাউকে বলতে পারেনি। একদম ঘরোয়াভাবে আয়োজন।’
: তারপরও ভাই, একবার জানাতে তো পারত! যা হোক, ভাবি কে?
: যার সঙ্গে প্রেম করত, সে না। ওর আম্মার পছন্দ করা ছিল। ফুপাতো না খালাতো বোন—কেউ একজন হবে।
: আচ্ছা ভাই, ঠিক আছে।
বুঝলাম, ছেলেটা একবুক অভিমান করেছে। তার অভিমান তো আর মুরাদ বুঝবে না। একসময় অভিমানী মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকল। শেষে আমি নিজেই মুরাদকে ফেসবুকে নক করলাম। অভিমানী মানুষদের জন্য কিছু করা দরকার।
: কী অবস্থা, কেমন আছ?
: জি ভাই, ভালো।
: বউ কেমন আছে?
: বউ?
: ২০ তারিখে যে বিয়ে করছ, এইটা শুনছি। সমস্যা ছিল বলে দাওয়াত দাও নাই। অস্বীকার করার কী আছে!
: কী বলেন ভাই, আজব আজব কথা! বিয়ের বয়স হইছে নাকি?
: সঠিক সময়ে বিয়ে করলে তোমার একটা মেয়ে এবার মেডিকেলে চান্স পাইত। এখন করছ, একদম খারাপ করো নাই। আমি তো তা-ও করতে পারলাম না!
: আরে ভাই, আমি বিয়া করি নাই তো! বাদ দেন। আপনি কেমন আছেন, বলেন।
: কেমন আর থাকব। একা একা। যাকগে, ঢাকায় আসবা কবে?
: দেরি হবে মনে হয়।
: দেরি হওয়া স্বাভাবিক। নতুন বিয়ে করছ...
: ভাই, আমি বিয়া করি নাই!
: অনেকেই বিয়ে করার পর বুঝতে পারে তারা একটা ভুল করেছে। সেই ভুল নিয়ে চিন্তা করতে করতে হতাশ হয়ে পড়ে। হতাশার একপর্যায়ে ভাবে, সে আসলে বিয়ে করে নাই। তখন অবচেতন মনে সেটা মাঝে মাঝে দাবিও করে বসে। যা হোক, ব্যাপার না।
মুরাদ রিপ্লাই দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। বুঝলাম, আমাকে নিয়ে পুরোপুরি হতাশ। তার বিবাহজীবন সম্পর্কে কথা বলি, এটা সে চায় না। কিন্তু বড় ভাইকে তো আর এভাবে অবহেলা করতে পারে না। আমি নিশ্চিত, বিবেকের দহনে সে আবার নক করবে। কিছুক্ষণ পর করলও।
: ভাই, কিছু টাকা দেন না। ব্যাপক অর্থকষ্টে আছি।
: স্বাভাবিক। একজনের জায়গায় দুজন হয়েছ, খরচ বেড়েছে। অর্থকষ্ট তো হবে। কিন্তু আমার কাছে তো তোমাকে দেওয়ার মতো টাকা নাই।
সে এবার বোধ হয় চেঁচিয়ে উঠল। ফেসবুকে দেখা না গেলেও মেসেজের ধরনে বোঝা গেল। বলল, ‘কইলামই তো ভাই, বিয়া করি নাই। হুদাই প্যাঁচান।’
: মুরাদ, বিয়ে করে কদিনের মধ্যেই তুমি ভাই-বেরাদরদের সঙ্গে বাজে ব্যবহার শুরু করে দিয়েছ?
: ভাই, বাদ দেন। থাকুম না আর বাড়িতে। ঢাকায় চলে আসব।
: কবে?
: দু-এক দিনের মধ্যেই।
: একা আসবা?
মুরাদ আবার রিপ্লাই দেওয়া বন্ধ করে দিল। তবে পরদিন সে আবার ফেসবুকে নক করল।
: ভাই, সিরিয়াস কথা আছে। তবে আপনি প্লিজ লাগে বিয়ের কথা বলবেন না।
: আচ্ছা, ঠিক আছে। তুমি যে বিয়ে করেছ, সে কথা কাউকে বলব না।
: ভাই, আবার! আমি বিয়া করি নাই বললাম তো!
: ভাই, আমি বিয়ে করি নাই। বিয়ে করব। আপনার হাতে কোনো পাত্রী আছে?
: তোমাদের বয়সী ছেলেপেলেরা এমন কেন? বিয়ের বয়স হয়েছে?

: আচ্ছা, তুমি বিয়ে করো নাই। সব বিবাহিত পুরুষই নিজেকে অবিবাহিত ভাবতে পছন্দ করে। এটা বড় কোনো ঘটনা না। বলো, কী বলতে চাও।
: ভাই, কী করলে আপনি বিশ্বাস করবেন যে আমি বিয়ে করি নাই?
: তুমি একটা কাজ করো, একটা বিয়ে করে ফেলো।
: বিয়ে করলে কী হবে?
: প্রমাণ হয়ে যাবে যে তুমি বিয়ে করো নাই।
: কীভাবে?
: রবীন্দ্রনাথের নাম শুনেছ? নাকি বিয়ে করে সেটাও ভুলে গেছ? রবীন্দ্রনাথ একটা গল্প লিখেছিলেন। সেখানে কাদম্বিনী নামের এক নারী ‘মরিয়া’ প্রমাণ করেছিলেন যে তিনি মরেন নাই। তোমার মতোই অবস্থা। সবাই জানত, তিনি মরে গেছেন। কেউ বিশ্বাস করত না। তারপর কাদম্বিনী ‘মরিয়া’ প্রমাণ করিলেন যে তিনি মরেন নাই। তুমিও বিবাহ করিয়া প্রমাণ করো যে তুমি অবিবাহিত।
: আচ্ছা ভাই, ঠিক আছে। আমি আমার যথাসাধ্য চেষ্টা করব। এই জীবন আর ভালো লাগে না। সবাই ফোন দিয়ে ওয়াইফের কথা জিজ্ঞেস করে, বাচ্চা কবে নিচ্ছি জিজ্ঞেস করে, বাচ্চার নাম কী রাখব, সেটাও জিজ্ঞেস করে! প্রেমিকা ব্রেকআপ করে ফেলবে ফেলবে অবস্থা। সে নাকি পরকীয়া করতে চায় না!

মুরাদের শেষ অবস্থা খুব করুণ। যেকোনো কথার একটাই উত্তর দেয়, ‘আমি বিয়ে করি নাই। আমি বিয়ে করব।’ তার এই খবর শুনে সমবেদনা জানানোর জন্য ফোন করলাম—
: মুরাদ, কেমন আছ?
: ভাই, আমি বিয়ে করি নাই। বিয়ে করব। আপনার হাতে কোনো পাত্রী আছে?
: তোমাদের বয়সী ছেলেপেলেরা এমন কেন? বিয়ের বয়স হয়েছে? নাক টিপলে পানি বের হয় আর বিয়ে করতে চাও? যাও পড়তে বসো। যত্ত সব!
মুরাদ চুপ। এবারের আঘাত বোধ হয় সে মেনে নিতে পারেনি। বাংলা সিনেমার থিওরিতে প্রথম আঘাতে যদি স্মৃতিশক্তি যায়, দ্বিতীয় আঘাতে ফিরে আসে। পুরো জাতি অপেক্ষায় আছে, মুরাদ স্মৃতি ফিরে পাবে। আমিও আশাবাদী!-প্রথমআলো
১২ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে