সোমবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০১:৪৭:১১

বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ‘সুরক্ষা’য় ওবামার হস্তক্ষেপ চাইলেন হিন্দুরা!

বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ‘সুরক্ষা’য় ওবামার হস্তক্ষেপ চাইলেন হিন্দুরা!

ললিত কে ঝা : বাংলাদেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সহায়তা চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-প্রবাসী বাংলাদেশিদের একাংশ। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা ভয়াবহ জঙ্গি-হুমকিতে রয়েছে উল্লেখ করে এ ব্যাপারে ওবামার হস্তক্ষেপ করেন তারা। হোয়াইট হাউসের সামনের শান্তিপূর্ণ এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এইসব দাবি জানানো হয়। সমাবেশ শেষে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় ওবামার হস্তক্ষেপ চেয়ে হোয়াইট হাউসে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রবিবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে হিন্দু সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় ওই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সংখ্যালঘুদের সংগঠন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ইউনিটি কাউন্সিল ওই সমাবেশের উদ্যোগ নেয়। সমাবেশে যোগ দিতে হীম বাতাস উপেক্ষা করে বিক্ষুব্ধ মার্কিন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিউ ইয়র্ক ও ওয়াশিংটন ডিসির আশেপাশের এলাকা থেকে হোয়াইট হাউসের সামনে এসে একত্রিত হন। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ইউনিটি কাউন্সিল-এর প্রেসিডেন্ট নবেন্দু বিকাশ দত্ত সমাবেশে বলেন, ‘গত সাত বছরে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা ২৭৩টি মামলার মধ্যে মাত্র একটি মামলার নিস্পত্তি হয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক এক জরিপের প্রসঙ্গ ধরে নবেন্দু বিকাশ জানান, প্রতি বছর ২ লাখ ৩০ হাজার সংখ্যালঘু বিশেষ করে হিন্দুরা বাংলাদেশ ছাড়ছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘বাংলাদেশে নীরব গণহত্যা চলছে। যে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতির ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশ পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা পেয়েছিল তা প্রতিদিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।’

এতে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর সহিংস বিক্ষোভ এবং আনসারুল্লাহ বাংলার নামে কিংবা আল কায়েদা-আইএস-এর ছায়াতলে বুদ্ধিজীবী, ব্লগার, বিদেশি নাগরিক এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং অপ্রথাগত বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতাদের হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশে ইসলামী জঙ্গিবাদের উত্থান সম্পর্কে আঁচ পাওয়া যায়। এতে বাংলাদেশের একটি ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পর্যবসিত হওয়ার বাস্তবতাকেই সামনে আনে।

এতে আরও বলা হয়, ‘ইসলামী জঙ্গিবাদের উত্থানের নেপথ্যে রয়েছে সৌদি আরবসহ অন্যান্য উপসাগরীয় দেশ থেকে আসা অর্থসহায়তা। এই টাকাগুলো যায় বিভিন্ন মাদ্রাসা এবং ইসলামী সংগঠনে। ২০১৫ সালের জুলাই মাসের গুলশান হামলার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সরকার আইএস-এর উপস্থিতির বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেছে।

ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা কোনভাবেই কমছে না উল্লেখ করে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে অভিযোগ করা হয়, এইসব ঘটনার ভুক্তভোগীদের সুরক্ষা কিংবা দোষীদের বিচারের প্রশ্নে সরকারের নীরবতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা।
সিতাংশু গুহ নামে সমাবেশে যোগ দেওয়াদের একজন বলেন, ‘বাংলাদেশের হিন্দুদের বাঁচাতে এগিয়ে আসার জন্য প্রেসিডেন্টকে আহ্বান জানাতে এখানে এসেছি আমরা।’ ওবামা এখন পর্যন্ত সহায়তা করতে পারেনি উল্লেখ করে আক্ষেপ জানান তিনি।

সিতাংশু বলেন, ‘এখন আমরা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভরসাতেই আছি। পরবর্তী ৩০ বছরে বাংলাদেশের হিন্দুরা নির্মূল হয়ে যাবে। সভ্য বিশ্বের নেতা হিসেবে হিন্দু ও অন্য সংখ্যালঘুদের জন্য কিছু করাটা যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’
হিন্দু আমেরিকান ফাউন্ডেশন নামের এক সংগঠনের প্রতিনিধি জয় কানসারা। দক্ষিণ এশীয়ার দেশ বাংলাদেশের ঘটনাকে ‘ভয়াবহ ভীতিকর’ উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। জয় কানসারা বলেন, ‘এটাই এখন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার, কেননা বাংলাদেশ জঙ্গিবাদে পতিত হলে সেই অবস্থা থেকে বের হয়ে আসার উপায় থাকবে না।

সমাবেশ শেষে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনায় ওবামার হস্তক্ষেপ চেয়ে হোয়াইট হাউসে ৫ পাতার এক স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার যেন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রক্ষার মধ্য দিয়ে তাদের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় বজায় রাখে সে ব্যাপারে চাপ দিতে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের গর্বিত নাগরিক হিসেবে আপনাকে (ওবামা) এবং আমাদের সম্মানিত আইনপ্রণেতাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছি।’

স্মারকলিপিতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় এবং সংখ্যালঘুদের স্বার্থে কমিশন গঠন করতে সরকারকে প্রস্তাব দেওয়ার আহ্বান জানানো হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। ঘৃণাবাদী সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলোর তদন্ত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচার বিভাগের অধীনে বিশেষ বিভাগ প্রতিষ্ঠা করতে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দেওয়ার আহ্বানও জানানো হয় স্মারকলিপিতে।

বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশের পার্লামেন্টে ধর্মীয় এবং নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘুদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বও দাবি করা হয়। বাংলাদেশের সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের সমস্ত ক্ষেত্রেও আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। এজন্য নির্দিষ্ট সংখ্যার সংখ্যালঘুদের জন্য জেলা-বিবেচনায় এক একটি করে অঞ্চলগত প্রশাসন প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারাকে বিতর্কিত ও হিন্দুদের প্রতি বৈষম্যমূলক উল্লেখ করে তা বাতিলের আহ্বানও জানানো হয় সমাবেশ থেকে। সমাজকে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতি সংবেদনশীল করে তুলছে বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়। -বাংলা ট্রিবিউন।
১২ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে