শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০২:০৪:৪৪

পাকিস্তানকে সব সূচকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ

পাকিস্তানকে সব সূচকে পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ

মানিক মুনতাসির : স্বাধীনতার আগে সব ধরনের উন্নয়নই হতো পশ্চিম পাকিস্তানে। দালানকোঠা আর ঝকঝকে রাস্তাঘাটের শহর ছিল ইসলামাবাদ, করাচি আর পাঞ্জাব। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (আজকের বাংলাদেশ) সে সময় ছিল শুধুই উৎপাদনস্থল। কিন্তু ভোগের জায়গা ছিল পশ্চিম পাকিস্তান। এই শোষণ-বঞ্চনার ইতি ঘটে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে।

ফলে স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর দৃশ্যপটও পাল্টে গেছে। এখন উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সম্পদ উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিশুমৃত্যুর হার কমানো, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক সক্ষমতা অর্জন, রপ্তানি আয়, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, বৈদেশিক শ্রমবাজার, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জননিরাপত্তা, সামাজিক বৈষম্য নিরসনসহ প্রায় সব সূচকেই পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। স্বাধীনতার মাত্র চার দশকেই বাংলাদেশ অবিশ্বাস্যভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বিস্ময়করভাবে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

১৯৭১ সালে শোষণ ও বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। ৯ মাস যুদ্ধের পর পশ্চিম পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীকে তাড়িয়ে লাল-সবুজের স্বাধীন বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নেয়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে কঠোর পরিশ্রম আর মেধা দিয়ে বাঙালি জাতি সোনার বাংলা গড়ায় মনোনিবেশ করে। স্বাধীনতার ৪৬ বছরের মাথায় বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ১১ শতাংশে। আর ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। এক বছরে বাংলাদেশের মানুষের গড় আয় বেড়েছে ১৫২ মার্কিন ডলার। আর সমান সময়ে পাকিস্তানের গড় আয় বেড়েছে মাত্র ৪৭ মার্কিন ডলার।

২০১৫ শেষে বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে। আর পাকিস্তানে অতিদারিদ্র্যের হার দাঁড়িয়েছে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশে। চলতি বছরের নভেম্বর শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩২ বিলিয়ন ডলারে। আর পাকিস্তানের রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ১৮ বিলিয়ন ডলারে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর পাকিস্তান দিনে দিনে স্বীকৃতি পেয়েছে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে। আর বাংলাদেশ পেয়েছে শান্তি ও সমৃদ্ধির স্বীকৃতি। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক কর্তৃক এ স্বীকৃতি এসেছে, গড় আয়ের ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন মধ্য আয়ের দেশ। আর দারিদ্র্য বিমোচনে যে সাফল্য এসেছে তা বিশ্বব্যাপী অনুকরণীয়। গত ছয় বছরে দেশে অতিদারিদ্র্যের হার কমেছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। অতিদারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের দেশ ভারত, পাকিস্তান ও ভুটানের চেয়েও এগিয়ে রয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটি বলছে, দেশে উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যহত থাকায় এটা সম্ভব হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে বাংলাদেশে অতিদারিদ্র্যের হার কমে ১২ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। আর ২০১০-১১ অর্থবছরে বাংলাদেশে এ হার ছিল ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, যাদের দৈনিক আয় ১ দশমিক ৯০ ডলারের (প্রায় ১৪৫ টাকা) কম, তারাই অতিদরিদ্র। আর এটা ২০১১ সালে ছিল সোয়া ১ ডলারের (১০০ টাকা) কম। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বাঙালি জাতি। সে লক্ষ্য নির্দিষ্ট সময়ের আগেই পূরণ হবে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। এদিকে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধিতেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে।

প্রথমবারের মতো ৭ দশমিক ১১ শতাংশ জিডিপি অর্জিত হয়েছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে। অথচ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর প্রথম অর্থবছরে জিডিপি অর্জনের টার্গেটই ছিল ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। ২০২১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ ২ অঙ্কের প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি প্রতিদিনই কমছে। বিশ্বব্যাংক বলছে, ২০০০ সালে বাংলাদেশের প্রায় ৩৩ শতাংশ মানুষ খোলা আকাশের নিচে মল ত্যাগ করত, যা এখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। ফলে জনস্বাস্থ্য ও স্যানিটেশনে ১৬ বছরে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। পুষ্টি এবং খাদ্য নিরাপত্তায়ও বাংলাদেশ সমানতালে এগিয়ে চলেছে।

ইতিমধ্যে চালও রপ্তানি শুরু করেছে বাংলাদেশ। খোদ বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু চলতি বছর ঢাকা সফরে এসে বাংলাদেশের উন্নয়নে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ হচ্ছে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল। আর দারিদ্র্য বিমোচনে বিশ্বের জন্য অনুসরণীয় এবং অনুকরণীয়। ২০১৪ সালে জাতিসংঘ প্রকাশিত মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১৪২তম। ২০১৫ সালেও সে অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে পাকিস্তান পাঁচ ধাপ পিছিয়ে ১৪৭তম অবস্থানে চলে গেছে। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায়ও বাংলাদেশ বিশ্বের অনেক দেশের জন্য অনুকরণীয়।

দেখা যাচ্ছে, মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকে ১৯৯০ সালেও পাকিস্তান বাংলাদেশের তুলনায় এগিয়ে ছিল। ২০০৪ সালে পাকিস্তানকে অতিক্রম করে বাংলাদেশ। ২০১৪ সালের হিসাবে বাংলাদেশের পয়েন্ট শূন্য দশমিক ৫৭, অন্যদিকে পকিস্তানের পয়েন্ট শূন্য দশমিক ৫৩। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশ অর্থনীতি, মানব উন্নয়নসহ অন্য সব সূচকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে বাংলাদেশের উন্নয়নের গতি আরও বাড়ত বলে মনে করেন তিনি। বিডি প্রতিদিন
১৬ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে