শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১০:২৮:২৯

রোহিঙ্গা শিবিরে অদৃশ্য গণহত্যা : লিনসে অ্যাডারিও

রোহিঙ্গা শিবিরে অদৃশ্য গণহত্যা : লিনসে অ্যাডারিও

নিউজ ডেস্ক : বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মানবিক বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন আলোকচিত্রী লিনসে অ্যাডারিও। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা শিবির, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শিবির ও বসতিতে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে তার এই লেখাটি আজ শুক্রবার টাইম সাময়িকীর অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছে। লিনসে অ্যাডারিও টাইম সাময়িকীর প্রদায়ক ও ফটো এজেন্সি ভারবাটিমের প্রতিনিধি।

২০১৫ সালের নভেম্বরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ছোট একটি শিবিরে চার দিনে তিনজনের শেষকৃত্য দেখেছি। মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ থাকলে ওই তিনটি মৃত্যুই ঠেকানো যেত। মরিয়ম খাতুন নামের আরেক নারীকে আমি পাঁচ দিন ধরে দেখেছি। ওই নারী অ্যাজমা রোগে ভুগছিলেন। তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল। একটি ক্লিনিকের দেয়ালের পাশে তিনি বসে পড়েছিলেন এবং চিকিৎসকের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনো সাহায্যই তিনি পাননি। একপর্যায়ে কফ দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসছিল। ওই নারীর পাশে ছিলেন তার মেয়েরা। পরে মেয়েরা তাকে বাড়িতে নিয়ে যান। আমি ওই এলাকা ত্যাগ করার কয়েক সপ্তাহ পর ওই নারীর মৃত্যু হয়।

মিয়ানমারে আনুমানিক ১০ লাখ রাষ্ট্রবিহীন রোহিঙ্গার বাস। তারা নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত। এই আধুনিক যুগে চারপাশে সেনা তল্লাশিচৌকি বেষ্টিত ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে’ বাস করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। ওই ক্যাম্প থেকে তারা বের হতে পারে না। বাইরে কাজে যেতে পারে না। তারা মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা ও খাদ্য থেকে বঞ্চিত। বেশির ভাগ সাহায্য সংস্থার কর্মীদের সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। খাবার জোগাড় ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে ছোট ক্যাম্পে নিজেদের যা আছে, তার ওপরই নির্ভরশীল রোহিঙ্গারা। সাংবাদিকদের ওপরও সেখানে প্রবেশে নিয়মিতভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হচ্ছে। ধীরগতিতে এবং ইচ্ছাকৃতভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর এই বিনাশ বিশ্ব যাতে দেখতে না পায়, সেটা নিশ্চিত করার জন্যই মিয়ানমার এই পথ অবলম্বন করছে।

মিয়ানমার থেকে অনেক রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী বাংলাদেশে যেতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে মিয়ানমার সীমান্তের কাছে আনুমানিক তিন থেকে পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা ঘনবসতিপূর্ণ অস্থায়ী শিবির ও বসতিতে ভীতিকর জীবন যাপন করছে। কারাগারে যাওয়া বা বিতাড়িত হওয়ার সার্বক্ষণিক আশঙ্কার মধ্যে বাস করছে তারা।

মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিক এবং যুদ্ধক্ষেত্র বা নিপীড়নের হাত থেকে পালানো শরণার্থীদের নিয়ে গত ১৬ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কাজ করেছি। তবে একটি পুরো জনগোষ্ঠীকে সহায়হীন ও অনথিভুক্ত রেখে পদ্ধতিগত এই নিপীড়ন খুব কমই দেখেছি। মিয়ানমার এবং বাংলাদেশে শিবির ও বসতিতে থাকা এই রোহিঙ্গারা আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার সহায়তা থেকে লক্ষণীয়ভাবে বঞ্চিত। পরিণামে অগুনতিসংখ্যক রোহিঙ্গা অনথিভুক্ত থেকেই মারা যাচ্ছে। এটা অদৃশ্য গণহত্যা। প্রথম আলো

১৬ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে