সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০১:৪৮:১২

হোঁচট খেলো বিএনপির এক নেতা এক পদ নীতি

হোঁচট খেলো বিএনপির এক নেতা এক পদ নীতি

শফিউল আলম দোলন : দলের জাতীয় কাউন্সিলের পর জেলা কমিটি গঠনের শুরুতেই হোঁচট খেল বিএনপি। গঠনতন্ত্রে সংশোধিত ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা নিজেদের অতিরিক্ত পদ ছেড়ে দিলেও অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দিয়েই জেলা কমিটি গঠন ও সেগুলো অনুমোদন করছেন। এর মাধ্যমে দলের গঠনতন্ত্র লঙ্ঘিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি এবং চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদ মিলে ৩০ জনেরও বেশি সদস্য এখনো দলের একাধিক পদে রয়েছেন। এরা কেউই তাদের অতিরিক্ত পদ ছেড়ে দেননি এবং ছাড়তেও চান না। বেশির ভাগই চাচ্ছেন চেয়ারপারসনের বিশেষ বিবেচনায় উভয় পদই ধরে রাখতে। অনেকে উভয় পদ ধরে রাখতে চেয়ারপারসনের বিবেচনার জন্য আবেদন জানিয়ে চিঠিও পাঠাচ্ছেন কেন্দ্রে। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সব সমস্যা কেটে গিয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে সকল জেলায় কমিটি পুনর্গঠন সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

জানা গেছে, গত ১৯ মার্চ দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে গঠনতন্ত্রে ‘এক নেতার এক পদ’ নীতি সংযোগ করার আগে থেকেই যারা একাধিক পদে আছেন তাদের অতিরিক্ত পদগুলো বাদ না দিয়ে— উল্টো অনেককেই আবারও নতুন করে জেলা কমিটিতে পদ দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় কমিটির পদ ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে জেলা কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হলেও পরে আর সেই প্রতিশ্রুতি রাখছেন না কেউ। সংশ্লিষ্ট জেলায় যোগ্য, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা থাকা সত্ত্বেও লবিং-তদবির, স্বজনপ্রীতিসহ অন্যান্য কারণে কেন্দ্রীয় নেতাদেরই জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগকারীরা জানান, নির্বাচনী এলাকায় নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার স্বার্থে জেলা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে রাখতে চান তারা।

সূত্র জানায়, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নিজেই ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সভাপতি ও কৃষক দলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির পদ দুটি ছেড়ে দিয়েছেন। জেলা কমিটি পুনর্গঠনে সমন্বয়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানও নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতির পদ ছেড়েছেন। অথচ জেলা কমিটি গঠন করতে গিয়ে তারাই আবার সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক বানাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির নেতাদের। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের পর দুটি মাত্র জেলায় সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

যেখানে দুজন কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদককে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এরা হলেন কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলম এবং জামালপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন। এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, কিশোরগঞ্জ ও জামালপুর জেলায় শরীফুল আলম এবং ওয়ারেছ আলী মামুনকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করার আগে তারা দুজনই কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির পদ ছেড়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটির পদ ছেড়ে জেলা কমিটিতে থাকার কারণ কী, জানতে চাইলে শাহজাহান বলেন, এটা তাদের বিষয়। তবে আমার মনে হয়, এমপি ইলেকশনের স্বার্থেই এলাকায় থাকতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তারা।

জানা গেছে, দলের ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী পটুয়াখালী জেলা বিএনপিরও সভাপতি। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ কে এম মোশাররফ হোসেন ময়মনসিংহ (উত্তর) জেলা বিএনপিরও সভাপতি। তারা জেলা সভাপতির পদে থাকতে ইতিমধ্যেই চেয়ারপারসন বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে। তবে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো তারা কেন্দ্র থেকে পাননি। অনুরূপভাবে কেন্দ্রীয় সিনিয়র নেতাদের অনেকেই নিজ জেলার নেতৃত্বে থাকতে চান।

এ রকম একাধিক পদধারী কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে রয়েছেন রাবেয়া চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, মজিবর রহমান সরোয়ার, খায়রুল কবীর খোকন, আসাদুল হাবিব দুলু, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, ফজলুল হক মিলন, অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, এ বি এম মোশাররফ  হোসেন, কামরুল মনির, আফজাল এইচ খান, লুত্ফুর রহমান আজাদ, মোস্তাফিজুর রহমান বাবু, আমজাদ হোসেন, কাজী আকরামুজ্জামান, মাহমুদুর রহমান বাবু, শাহজাদা মিয়া, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, জি কে গউছ, হাজী ইয়াসিন প্রমুখ। বিডি প্রতিদিন

১৯ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে