বৃহস্পতিবার, ২২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:৫০:০০

তুরস্ক-রাশিয়া: এক জটিল সম্পর্কের উত্থান-পতন

তুরস্ক-রাশিয়া: এক জটিল সম্পর্কের উত্থান-পতন

ডমিনিক ওয়াঘর্ন : তুরস্কে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত (আন্দ্রে কারলভ)কে যখন হত্যা করা হলো তখন খুব দ্রুততায় অনেকে বলতে লাগলেন, এর মধ্য দিয়ে কি একুশ শতাব্দীতে সারায়েভো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে যাচ্ছে কিনা। এ হত্যাকাণ্ডকে ১৯১৪ সালে আর্চডুকে ফার্দিনান্দ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তুলনা করা হলো। ফার্দিনান্দকে হত্যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে উস্কে দিয়েছিল।

তবে এবার, অন্তত এখন, ঘটলো তার উল্টোটা। মস্কোতে তুরস্ক, ইরান ও রাশিয়ার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের যে বৈঠক আগেভাগেই আয়োজন করা হয়েছিল তা অব্যাহত থাকলো। রাশিয়ার দাবি, সিরিয়ায় শান্তি পরিকল্পনা বের করে আনার জন্য ওই বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে। আমাদেরকে বলা হয়েছে, সিরিয়ায় শাসকগোষ্ঠীর পরিবর্তন নয় সেখানে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই হলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যদি সেটাই সত্যি হয় তার অর্থ হলো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতনের যে দাবি এতদিন ধরে তুরস্ক করে আসছিল তা থেকে তারা সরে গেছে।

সিরিয়ার উত্তাল সময় ও গৃহযুদ্ধের পুরোটা সময় তুরস্ক ও রাশিয়া বিপরীতমুখী অবস্থানে ছিল। রাশিয়া বলেছে, তাদের উদ্দেশ্য প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া নয়। কিন্তু পশ্চিমাদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছে তুরস্ক। তারা বলেছে, সিরিয়ার সমস্যা হলো প্রেসিডেন্ট আসাদ। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর তার পাশবিক নিষ্পেষণ থেকে সৃষ্টি হয়েছে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ। সিরিয়ার মানুষের বিরুদ্ধে ক্ষমতায় টিকে থাকায় তার যে একগুঁয়েমিতা এ জন্য তার বিরোধিতা করে তুরস্ক।

২০১৫ সালের নভেম্বরে তুরস্ক ও রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে। ওই সময়ে সিরিয়া সীমান্তের কাছে রাশিয়ার একটি জেট বিমান গুলি করে ভূপাতিত করে তুরস্ক। এ ঘটনায় তুরস্কের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে রাশিয়া। কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু দেশ দুটির মধ্যে প্রলম্বিত বিরোধ একটি দেশকে শেষ পর্যন্ত আরেকটি থেকে দূরে সরাতে পারে নি। দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কের বরফ গলা শুরু করে যখন জুলাইয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানের বিরুদ্ধে ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে রাশিয়া নিন্দা জানায়।

যেসব দেশ প্রথম ওই নিন্দা জানিয়েছিল তার মধ্যে ছিল রাশিয়া। যখন সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে তুরস্কের সীমান্তে কুর্দিদের হুমকি হিসেবে দেখা হয় তখন তা নস্যাৎ করতে আগ্রাসন চালায় তুরস্ক। এতে সহযোগিতা করে রাশিয়া। সিরিয়ার আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চলে যখন উদ্ধার অভিযানের জন্য একটি যুদ্ধবিরতি হয় তখন আবার দু’দেশ একে অন্যের সহায়তায় এগিয়ে আসে।  

তাহলে কি প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন যে অবস্থান নিয়েছিল তুরস্ক তা কি তারা ভুলে গেছে? আসাদ ইস্যুতে রাশিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি তারা মেনে নিয়েছে?
 
না। সিরিয়া বিষয়ে একটি চুক্তিতে আসার জন্য সুযোগ আছে তাদের জন্য। যেসব কুর্দি তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে বিভিন্ন এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করছে সেটা থামানোই তুরস্কের প্রধান অগ্রাধিকার। এ জন্যই তারা সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে এই গ্রীষ্মে অভিযান চালিয়েছে। হামলা চালিয়েছে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে। এর চেয়েও বেশি উদ্দেশ্য ছিল, দুটি কুর্দি গ্রুপের একত্রে যোগ দেয়া থামানো।

অনুপ্রবেশ করে তুরস্কের ওই অভিযানে একসঙ্গে কাজ করেছে সিরিয়ার বিদ্রোহী কিছু গ্রুপ। ধারণা করা হয়, গত সপ্তাহে আলেপ্পোর পূর্বাঞ্চল থেকে যেসব যোদ্ধাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী ওই গ্রুপগুলোর কিছু সদস্য। তারা তুরস্কের দিকে যাচ্ছে। তারপর আবার তারা ফিরে এসে সিরিয়ার বিভিন্ন অংশে লড়াইয়ে নামবে।
 
কুর্দিদের বিরুদ্ধে তুরস্কের যে লড়াই তাতে হস্তক্ষেপ করা রাশিয়ার মূল উদ্দেশ্য নয়। রাশিয়ার মূল উদ্দেশ্য হলো প্রেসিডেন্ট আসাদকে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট এরদোগান সিরিয়া ইস্যুতে নীতির যে পরিবর্তন করছেন তার মধ্য দিয়ে তিনি বড় এক জুয়া খেলছেন। আলেপ্পোতে রাশিয়ার বোমা হামলা ও প্রেসিডেন্ট আসাদের নৃশংসতার বিরুদ্ধে তুরস্কের অনেক নাগরিক ভীষণ ক্ষুব্ধ।

যদি এ দেশটির জনগণ দেখে এই নৃশংসতা সত্ত্বেও তুরস্কের সরকার চোখ বন্ধ করে রেখেছে তাহলে তুরস্কের সরকার ভীষণভাবে জনপ্রিয়তা হারাবে।

-স্কাই নিউজে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ। এমজমিন
২২ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে