পরিতোষ পাল, কলকাতা থেকে : শীতের কলকাতায় তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১৩-১৪ ডিগ্রিতে। এই কাঁপুনি ধরা ঠাণ্ডাতে কলকাতার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সরণিতে বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সামনে শ’খানেক মানুষ কম্বল মুড়ি দিয়ে রাত জাগছেন। ভোরের আলো ফোটার পর থেকে সেই লাইনে স্রোতের মতো মানুষ এসে দাঁড়াচ্ছেন। ক্রমে তা বেড়ে হাজারেরও বেশি হয়ে যাচ্ছে।
গত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনের সামনে এই দৃশ্যের সাক্ষী থাকছেন স্থানীয় মানুষ। এরা সকলেই বাংলাদেশে যেতে চান। কেউ যেতে চান আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করতে, কেউবা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের অসুস্থতার খোঁজ নিতে, আবার কেউ ছুটির দিনে বাংলাদেশে ঘুরে আসতে চান। আর পূর্ববঙ্গের সেই মানুষগুলো যেতে চান শিকড়ের খোঁজে, নস্টালজিয়ায় ভেসে বেড়াতে।
কিন্তু বাংলাদেশে যাওয়ার ভিসা পেতেই এখন খুব সমস্যায় পড়তে হচ্ছে সকলকে। ওড়িশার ঝাড়সুগুদা থেকে এসেছেন শামিউল হাসান। তিনি সস্ত্রীক বাংলাদেশে যেতে চান অসুস্থ এক আত্মীয়কে দেখতে। কিন্তু দু’দিনের চেষ্টাতেও তিনি লাইন দিয়ে ভিসার আবেদন জমা করতে পারেননি। এইভাবে একাধিক দিন লাইন দিয়েও ফিরে যাচ্ছেন এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। আর যারা আবেদন জমা করতে পারছেন ৪-৫ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে তারা নিজেদের ভাগ্যবান মনে করছেন। কিন্তু সেখানেও তাদের ভিসা পেতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে কয়েকদিন।
বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভিসা আগ্রহী মানুষের কথা ভেবেই প্রচণ্ড পরিশ্রম করে গত সোমবারই ৮২০ জনকে ভিসা দেয়া হয়েছে। আসলে এত মানুষের একদিনে ভিসা দেবার মতো লোকবল ও পরিকাঠামো না থাকা সত্ত্বেও উপ-দূতাবাসের ভিসা বিভাগ যত সম্ভব মানুষকে ভিসা দেয়া যায় সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছেন। উপ-দূতাবাসের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, গত সেপ্টেম্বর থেকেই ভিসা প্রত্যাশীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। ছুটির মৌসুম শুরুর মুখে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য মানুষের চাপ বেড়ে গিয়েছে অসম্ভব হারে।
মালদহ থেকে এসেছেন মনোরঞ্জন ভদ্র্র। ষাটোর্ধ এই প্রবীণ মানুষটি কয়েকদিন আগে ভিসার আবেদন জমা দিয়ে গিয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় ভিসা নিতে এসেছেন। তিনি জানালেন, দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করে ভিসা নেয়া কলকাতার বাইরের মানুষের পক্ষে রীতিমতো কষ্টকর ও খরচসাপেক্ষ। তিনি প্রতিবছরই বাংলাদেশে যান। তবে এবারই মানুষের সংখ্যা দেখে তিনিও বিস্মিত। তার মতে, দু’দেশের মধ্যে যাতায়াত সহজতর হওয়াতেই এপারের মানুষ বেশি বেশি করে বাংলাদেশে যাচ্ছেন। ত্রিপুরার স্বদেশ রঞ্জন রায় আগরতলা থেকে বিমানে কলকাতায় এসেছিলেন কাজে। কিন্তু জরুরি প্রয়োজনে তিনি ফিরে যেতে চান। আর সেজন্যই ট্রানজিট ভিসার জন্য আবেদন করেছেন। তাকেও অপেক্ষা করতে হয়েছে। বুধবার তিনিও ভিসা পেয়েছেন।
আবার কলকাতার উপকণ্ঠের কালিকাপুরের বাসিন্দা চন্দনা বিশ্বাস বাংলাদেশে যেতে চান আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করতে। সঙ্গে বেড়ানোটাও লক্ষ্য। তিনি জানালেন, অনলাইনে ভিসা দেয়ার ব্যবস্থা চালু করা হলে দীর্ঘ সময় ধরে লাইন দেয়া এবং অপেক্ষা করার কষ্ট লাঘব হতে পারে। এটাই তার প্রস্তাব। দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, আগে দিনের ভিসা সেদিন দেয়া হলেও এখন ভিসা প্রত্যাশীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাওয়াতে কয়েকদিন সময় লাগছে। আগে যেখানে দিনে ৪০০-৪৫০ ভিসা দেয়া হতো, এখন সেখানে দেয়া হচ্ছে ৬০০-৬৫০। একদিনে ৮২০ জনকে ভিসা দেয়া একটা রেকর্ড।
উপ-দূতাবসের বাইরে ভিসা নেয়ার জন্য অপেক্ষারত অনেকের মতে, লোকবল বাড়ানো গেলেই প্রতিদিনের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিদিন ভিসা তুলে দেয়া সম্ভব। তবে বাংলাদেশ সরকার ভারতের মতো স্টিকারে ভিসা দেয়ার ব্যবস্থা কলকাতাতেও চালু করতে চলেছে। ইতিমধ্যেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। উপ-দূতাবাসের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়াও শুরু হয়েছে। তবে সেই ব্যবস্থা চালু হলে ভিসার চাপ কমানো যাবে কিনা- তা সময়েই বলবে। এমজমিন
২২ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসবি