নিউজ ডেস্ক : রোহিঙ্গা ইস্যুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক অ্যাম্বাসেডর-অ্যাট-লার্জ ডেভিড এন. স্যাপারস্টিন বলেন, বাংলাদেশ দুই লাখ থেকে পাঁচ লাখ পর্যন্ত রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশের এ উদারতাকে আমি প্রশংসা করি। রোহিঙ্গা ইস্যুটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয়। রোহিঙ্গা ইস্যু হলো মানবাধিকার সংক্রান্ত উদ্বেগ, ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়ে উদ্বেগ।
বৃহস্পতিবার ঢাকায় এসব কথা বলেছেন তিনি।
ডেভিড এন. স্যাপারস্টিন আরো বলেন, আমি ছয় মাস আগে থাইল্যান্ডে ভ্রমণ করেছি। সেখানেও রোহিঙ্গা আছেন। আমাদের কাছে রোহিঙ্গা ইস্যু একটি মূল উদ্বেগের ইস্যু। এ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ তরফ থেকে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেছি।
কক্সবাজারে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, রাখাইন রাজ্যে ভয়াবহ এক পরিস্থিতির বর্ণনা তারা দিয়েছেন। সেখানে ধর্ষণ হচ্ছে, বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে, মসজিদ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মিয়ানমার গ্রামে অভিযান চালিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে। এসব অভিযোগ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা করেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যুর সঙ্গে শক্তিশালী ধর্মীয় উপাদান রয়েছে। এই ইস্যুতে আমরা ধারাবাহিকভাবে মিয়ানমারের সরকারে সম্পৃক্ত আছি। মিয়ানমার সরকারকে আমরা বলছি, গণতন্ত্র নির্ভর করে মানবাধিকারের ওপর। ফলে মিয়ানমারের ঘটনার স্বচ্ছ তদন্ত করতে হবে।
আমেরিকান সেন্টারে কয়েকটি পত্রিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডেভিড স্যাপারস্টিন আরও বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের কর্তৃপক্ষ মানবাধিকার লঙ্ঘন করায় যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। রোহিঙ্গা ইস্যুর সঙ্গে ধর্মীয় স্বাধীনতার ইস্যু জড়িত রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়েও যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন।
ডেভিড স্যাপারস্টিন বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এমন একটি দেশ যেখানে ধর্মীয় সহিষ্ণুতার দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এখানে ধর্মীয় সহাবস্থানও আছে। এই দেশে সবাই স্বাধীনভাবে ধর্মীয় উপাসনালয়ে যেতে পারেন। ধর্মীয় উৎসব স্বাধীনভাবে অনুষ্ঠিত হয়। ফলে ধর্মীয় স্বাধীনতার বিচারে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি মডেল। ইন্দোনেশিয়াতেও এমন ধর্মীয় স্বাধীনতা আছে।
মার্কিন এই বিশেষ দূত বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে তিনি এসব হামলার ব্যাপারে সরকারের সাড়া দেয়াকে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করে পদক্ষেপ নিচ্ছে। পাশাপাশি, রামুতে ভাঙা মূর্তি পুনঃস্থাপন করেছে। সেখানে আমি নিজেই গিয়েছি। তবে উদ্বেগের ব্যাপার হলো, অনেক ক্ষেত্রে এসব হামলায় জড়িত অপরাধীকে পাওয়া যায়নি। বিচার বিভাগীয় ও পুলিশের তদন্তে দীর্ঘসূত্রতা করা হচ্ছে। আমাদের আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, ফরেন ডোনেশন অ্যাক্টে মৌলিক মানবাধিকার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে।
গাইবান্ধায় সাঁওতাল এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিন্দুদের ওপর হামলা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব ঘটনা কিছুটা ধর্মীয়, কিছুটা অর্থনৈতিক, কিছুটা ভূমি দখল সংক্রান্ত ঘটনা। আমি সাঁওতাল ও হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওই সব এলাকায় যাইনি। আমি শুধু রামুতে গেছি। তবে হিন্দু ও সাঁওতালদের ব্যাপারেও আমি সুশীল সমাজের সঙ্গে কথা বলেছি। সরকারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছিল গঠনমূলক।
ডেভিড স্যাপারস্টিন বাংলাদেশে ধর্মীয় স্বাধীনতার অবস্থা দেখার জন্যে রোববার ঢাকায় আসেন। এই সফরকালে তিনি ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। মার্কিন এই বিশেষ দূত কক্সবাজারে সম্প্রতি মিয়ানমারের রাখাইন স্টেট থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে রামুতে ইতিপূর্বে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ মন্দির পরিদর্শন করেন। প্রসঙ্গত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয় মনিটর করে থাকে এবং এ বিষয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
২৩ ডিসেম্বর, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম