বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:২৬:২৮

দিনের বেলায় ‘ক্রিকেটার’, সন্ধ্যা হলেই ‘হাইজ্যাকার’

দিনের বেলায় ‘ক্রিকেটার’, সন্ধ্যা হলেই ‘হাইজ্যাকার’

উদিসা ইসলাম : রাজধানীর ব্যস্ততম এলাকা কারওয়ানবাজারের সার্ক ফোয়ারা। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। বাংলামোটর থেকে একটি গাড়ি গোলচক্কর ঘুরে এফডিসির রাস্তায় যাবে। ঠিক ঘোরার মুহূর্তে জানালার কাচ নামানো গাড়ি থেকে এক নারীর কানের দুল টান দিয়ে উধাও এক ছিনতাইকারী।

ওই নারীর কান দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছিল তখন। গাড়ির চালক বললেন, ‘আমি দেখেছি, পরনে কালো গেঞ্জি, গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, দৌড়ে গেছে।’ চালকের ইশারায় দেখা গেল, ছিনতাইকারী রাস্তা ঘেঁষে থাকা পান্থকুঞ্জ নামের পার্কটির দিকে পালিয়েছে।  ওই এলাকায় কথা বলে জানা যায়, পার্কটিতে সারা দিন ১০/১৫ জনের একটি দল ক্রিকেট খেলে। তারা আশেপাশের দোকানেই খাওয়া-দাওয়া করে।

আর অন্ধকার নামলেই তারা ভাগ হয়ে যায় কয়েকভাগে। গাড়ি থেকে মোবাইল ফোন-ব্যাগ, কখনও সুযোগ বুঝে গলা বা কানের অলঙ্কার টান দিয়ে নিয়ে যায় একজন। তারপর তার হাত থেকে আরেকজনের হাত হয়ে চলে যায় পান্থকুঞ্জে। এদের সবাই চেনে, কিন্তু কেউ কিছু বলে না। কেন বলে না প্রশ্ন করা হলে পান্থকুঞ্জের কোণের দিকে থাকা এক চা বিক্রেতা বলেন, সবার হিসাব-নিকাশ আছে। সবার ভাগ আছে। কে কাকে কি বলবে?

পার্কের পাশে একটি শৌচাগারের দায়িত্বে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, যারা ছিনতাই করে এবং সারাদিন এই মাঠে ক্রিকেট খেলে, তাদের বয়স ১৩ থেকে ২২ বছর। এদের পরিচালনার জন্য এলাকার কিছু মাস্তান আছে। পুলিশ বিষয়টি জানে না এটা হতেই পারে না। এখান থেকে মোবাইল ছিনতাই করে ওরা এই পার্কে বসেই ভাগাভাগি করে বেশিরভাগ সময়। রাত ১১টার পর এই ভাগাভাগির কাজটি হয়।

বেলা ১২টার দিকে পার্কের মধ্যে খেলছিল কয়েকজন। তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা অস্বীকৃতি জানায়। এবং এখানে থাকলে বিপদ হবে বলে চলে যেতে বলে। পার্কে কি বিপদ হবে জানতে চাইলে তারা সেখান থেকে বের হয়ে চলে যায়।

পান্থকুঞ্জের ভেতর বেশকিছু স্থাপনা গড়ে উঠেছে। তবে কে বা কারা এগুলো তৈরি করেছে, তা কেউ বলতে পারে না। পার্কের মধ্যে বেঞ্চ পেতে ছিন্নমূল শিশুদের জন্য মাদ্রাসার একটি বোর্ড লাগানো হয়েছে। একপাশে মাটির ঢিবি করে জংলা মতো জায়গা তৈরি করা হয়েছে। এখানে বসে থাকা এক নারী বলেন, চারপাশে যে লোহার বাউন্ডারি আছে, সেগুলো মাঝে মাঝে ভেঙে ফেলা হয়। যারা ছিনতাই করে, তারা কাজ সেরে রাস্তার পাশের ওই ভাঙা অংশগুলো দিয়ে পার্কে ঢুকে অনায়াসে কাঁঠালবাগান ঢালের দিকে পালিয়ে যায়।

এই পার্কে ‘ক্রিকেট’ খেলা কিশোর-তরুণদের কর্মকাণ্ড বিষয়ে জানানো হলে পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, আমরা ওই জায়গা নজরদারিতে রেখেছি। এধরনের ঘটনার অভিযোগ পেলে নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এর সঙ্গে প্রশাসনের কেউ জড়িত না। এই জায়গা সাধারণ মানুষের যোগ্য করে তোলা গেলে অপরাধগুলো নিশ্চয় কমে যাবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (দক্ষিণ) এর মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, আমরা ৩১টি খেলার মাঠ ও পার্ক সংস্কারের কাজ হাতে নিয়েছি, যার ভিতর পান্থকুঞ্জও আছে। মাঝে এটা সাধারণের বসার উপযোগী করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আবারও এটা হাতছাড়া হয়ে যায়।

পার্কটিকে আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রকল্পটির নাম- গড়ব চল সবুজে ঢাকা। এটির আওতায় পান্থকুঞ্জ পার্কের কনসেপ্ট ডিজাইনও হয়ে গেছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। বাংলা ট্রিবিউন

২৯ ডিসেম্বর,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে