বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৫, ০৯:৪৮:১১

মুজাহিদ-সাকার রিভিউ আবেদন আজ

মুজাহিদ-সাকার রিভিউ আবেদন আজ

ঢাকা : মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের রায় আজ বুধবার রিভিউয়ের (পুনর্বিবেচনার) আবেদন জানাবেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী। তাদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন জানাবেন বলে জানা গেছে।

দুজনেরই প্রধান আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, বুধবার (আজ) দুজনের পক্ষেই রিভিউ আবেদন দায়ের করা হবে। আমরা রিভিউ আবেদনে বলেছি, রাষ্ট্রপক্ষ এ দুটি মামলায় যে সাক্ষ্য-প্রমাণ হাজির করেছে তা সঠিকভাবে পর্যালোচনা করা হয়নি। সঠিকভাবে পর্যালোচনা করা হলে তারা সাজা থেকে মওকুফ পেতেন। তারপরও যে সাক্ষ্যপ্রমাণ আছে তার ভিত্তিতে তাদেরকে কোনোভাবেই মৃত্যুদণ্ড দেয়া যায় না।

এর আগে তাদের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের দেয়া রায় গত ৩০ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। ওই দিনই রায়ের কপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয় সুপ্রিমকোর্ট প্রশাসন। ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল তাদের মৃত্যু পরোয়ানা জারি করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। মৃত্যু পরোয়ানা হাতে পেয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক মুজাহিদকে এবং কাশিমপুর কারাগারে আটক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে তা পড়ে শোনায় কারা কর্তৃপক্ষ। আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী আসামিপক্ষ রায়ের কপি হাতে পাওয়ার অথবা আসামিকে মৃত্যু পরোয়ানা জারির বিষয়টি পড়ে শোনানো যেটি আগে হয়, সেই হিসাব ধরে রিভিউ আবেদন দায়েরের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন। সেই হিসাবে তাদেরকে ১৫ অক্টোবরের মধ্যে রিভিউ দায়ের করতে হবে।

নির্ধারিত সময়ের একদিন আগেই আসামিপক্ষ রিভিউ আবেদন দায়ের করবে বলে জানান তাদের আইনজীবীরা। এখন রিভিউ আবেদন দায়ের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের মৃত্যু পরোয়ানার কার্যকারিতা স্থগিত হয়ে যাবে বলে আগেই জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। এই রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাদের ফাঁসি কার্যকর করা যাবে না। রিভিউ আবেদনের শুনানি শেষে যে সাজা বহাল থাকবে সেই সাজা কার্যকর হবে। আর আসামিপক্ষের দায়ের করা রিভিউ আবেদন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানি করা হবে বলে আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ রয়েছে।

রিভিউ আবেদনের নিষ্পত্তির পরও যদি আসামিদের ফাঁসি বহাল থাকে তাহলে তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদনের সুযোগ পাবেন। যদিও এর আগে ফাঁসি কার্যকর হওয়া দুজন যুদ্ধাপরাধী রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদনের সুযোগ গ্রহণ করেননি।

এদিকে মঙ্গলবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে মুজাহিদের সঙ্গে দেখা করেছেন তার আইনজীবীরা। বিকাল তিনটায় আইনজীবী শিশির মনিরের নেতৃত্বে মুজাহিদের পাঁচ আইনজীবী জেলগেটে আসেন। এরপর তারা কারাগারের ভেতরে ঢোকেন। শিশির মনির ছাড়া অন্য চার আইনজীবী হলেন- মসিউল আলম, এহসান আবদুল্লাহ সিদ্দিক, মতিউর রহমান আকন্দ ও আসাদ উদ্দিন।

সাক্ষাৎ শেষে বিকাল চারটার দিকে বের হয়ে জেলগেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন শিশির মনির। তিনি জানান, রিভিউ আবেদন চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে আধা ঘণ্টা সাক্ষাৎ করেছি আমরা। বুধবার সকাল দশটায় রিভিউ আবেদন দাখিল করব আপিল বিভাগে। দুটি মূল পয়েন্টে তারা রিভিউ চাইবেন বলে জানিয়ে শিশির মনির বলেন, প্রথমটি হচ্ছে, তদন্ত কর্মকর্তা বলেছেন, আল বদর, আল শামস ও শান্তি কমিটির কোনো তালিকায় তার (মুজাহিদ) নাম খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাহলে তিনি আল বদর কমান্ডার হলেন কী করে? দ্বিতীয়টি হচ্ছে, একাত্তরের ২৩ বছরের একজন ছাত্র ও বেসামরিক ব্যক্তি কীভাবে সামরিক ও আধা সামরিক বাহিনীর প্রধান হন?

২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদের মামলার রায় দেন। ওই রায়ে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হয়েছিল। এর মধ্যে ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগে তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। এ রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরের আগস্টে মুজাহিদ আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করেন। আপিল বিভাগ এই আপিল নিষ্পত্তি করে গত ১৬ জুন তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন।

আর ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ পৃথক চারটি (৩, ৫, ৬ ও ৮নং) অভিযোগে সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দিয়ে রায় দেন। এছাড়া তিনটি (২, ৪ ও ৭নং) অভিযোগে তাকে দেয়া হয় ২০ বছর করে কারাদণ্ড। দুটি (১৭ ও ১৮নং) অভিযোগে দেয়া হয় ৫ বছর করে কারাদণ্ড। একই বছরের ২৯ অক্টোবর এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন সাকা চৌধুরী। আপিল বিভাগ এই আপিল নিষ্পত্তি করে গত ২৯ জুলাই তার মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় দেন। ৩০ সেপ্টেম্বর ওই দুটি রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের মধ্য দিয়ে তাদের ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া আরও এক ধাপ এগিয়ে যায়।
১৪ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএম/ডিআরএ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে