বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:১১:০৯

‘স্বপ্ন ছিল মেয়েটাকে ডাক্তার বানাবো’

‘স্বপ্ন ছিল মেয়েটাকে ডাক্তার বানাবো’

নিউজ ডেস্ক : প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় খুন করা হয় মেধাবী স্কুলছাত্রী কবিতা মনিদাস (১৫)কে। মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার টান সূত্রাপুর উত্তর গজারিয়া এলাকায় বিজয় সরণি উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশেই ঘাতক বিক্রম মনিদাস বিজয় (২১)-এর ছুরিকাঘাতে খুন হয় ওই স্কুলছাত্রী।

ঘটনার পরপরই ঘাতককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। নিহতের বাবা সাগর মনিদাস বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা করে। খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বুধবার দুপুরে খুনির ফাঁসির দাবিতে ব্যানার ও ফেস্টুন হাতে মানববন্ধন ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মিছিল করে।

এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা যায়, কবিতার বাড়ি ঢাকা জেলার ধামরাই থানার রাবরাবন এলাকায়। বাড়ির পাশে ভাল কোন বিদ্যালয় না থাকায় ২০১০ইং সালে মামার বাড়ি কালিয়াকৈর উপজেলার টান সূত্রাপুর উত্তর গজারিয়া এলাকায় চলে আসে এবং পাশের বিজয় সরণি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। লেখাপড়া করে অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে পড়াশোনা করে বেড়ে উঠতে থাকে স্বপ্নবিলাসী চপলমতি কবিতা। প্রায় ৬ মাস আগে শুরু হয় তার জীবনের কালো অধ্যায়।

ওই এলাকার রাম মনিদাসের লম্পট ছেলে বিক্রমের চোখ পড়ে কবিতার দিকে। বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে বিভিন্ন সময়ে বিরক্ত করতে শুরু করে। বিষয়টি কবিতার মামা ভবেশ ও রূপকুমার এলাকার স্থানীয় মাতব্বর রঞ্জিত মনিদাস ও স্থানীয় ইউপি সদস্য বীরেন্দ্র চন্দ্রকে জানায়। কিন্তু বিক্রমের পরিবারের সঙ্গে ওই ইউপি সদস্যের সখ্য থাকায় ইউপি সদস্য বীরেন্দ্র সে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। কবিতার মামাদের বলে দেয় মেয়েকে বিয়ে দিতে হবে। এসব বিষয় এড়িয়ে যাওয়াই ভাল। পরে বিষয়টি পুলিশে না জানিয়ে ঘরোয়া ভাবে সমাধান করে দেয়। বিক্রমকে পড়ালেখার জন্য তার পরিবার সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয় কলেজে ভর্তি করে দূরে সরিয়ে দেয়।  

খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুধবার দুপুরে বিজয় সরণি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা মানববন্ধন ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে ব্যানার, ফেস্টুন হাতে খুনির ফাঁসির দাবিতে মিছিল করে।

কবিতাকে হত্যার খবর পেয়ে কবিতার মামা ভবেশ ঘটনাস্থলে গেলে ঘাতকের বড় ভাই বিপ্লব মনিদাস ভাড়াটে লোকজন নিয়ে তার ওপর হামলা করে। এসময় তার হাতে ও পায়ে ছুরিকাঘাত করে। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে।

নিহত স্কুলছাত্রীর মামা ভবেশ মনিদাস জানান, যখন মেম্বার ও মাতব্বরকে বিরক্ত করা নিয়ে যে অভিযোগ জানিয়েছিলাম তখন যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হতো তবে হয়তো আমার ভাগ্নির স্বপ্ন এভাবে নষ্ট হয়ে যেত না। এভাবে কোন নরপিশাচের হাতে তার মৃত্যু হতো না।
ইউপি সদস্য বীরেন্দ্র চন্দ্র বলেন, আমাকে কেউ এ ব্যাপারে জানায়নি। জানালে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম।

নিহত কবিতার মা অঞ্জনা মনিদাস বলেন, আমার মেয়ে লেখাপড়ায় যেমন ভাল ছিল তেমনি ছিল ধর্মকর্মে সাক্ষাৎ দুর্গা মা। ভালোই ছিলাম আমরা। মেয়ের স্বপ্ন ছিল অনেক দূর পর্যন্ত লেখাপড়া করবে। ওর মামারা ওকে খুব আদর করতো আর আমার স্বামীর বাড়ির পাশে ভাল কোন বিদ্যালয়ও নেই। তাই নিজেদের কাছে এনে নিজ খরচে লেখাপড়া করাতো। কিন্তু ওই ঘাতক সব কেড়ে নিলো। সব স্বপ্ন ভেঙে দিলো। আর কোনদিন আমার দুর্গা মা স্কুলে যাবে না। ওই নরপিশাচের ফাঁসি চাই আমি। এভাবে বলতে বলতে মূর্ছা যান অঞ্জনা মনিদাস।

কবিতার বাবা সাগর মনিদাস বলেন, কি অপরাধ ছিল আমার মানিকের! ও তো শুধু লেখাপড়া করে বড় হতে চেয়েছিল। আমার স্বপ্ন ছিল মেয়েকে ডাক্তার বানাবো। আমি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কার্ডিওলজি বিভাগে ওয়ার্ডবয় হিসেবে কাজ করি।  সেখানকার বড় বড় ডাক্তারদের কাছেও বলেছি আমার মেয়েকে ডাক্তার বানাবো।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান কামরুজ্জামান বলেন, আমরা ঘটনায় মর্মাহত, হতভম্ব। আজ খুনির ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন ও মিছিল করেছি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই আতিকুর রহমান রাসেল বলেন, আসামির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেয়া হয়েছে। গাজীপুর কোর্ট হাজতে পাঠানো হয়েছে।-মানবজমিন
১৫ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এসএস/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে