রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:৩৪:৫৮

১৪ দলে চলছে হিসাবনিকাশ

১৪ দলে চলছে হিসাবনিকাশ

উৎপল রায় : দলীয় প্রতীকে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নানা চিন্তাভাবনা চলছে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর মধ্যে। চলছে হিসাবনিকাশ। জোটের শীর্ষ নেতারা বলছেন, নতুন আইনে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে একক না-কি জোটগত প্রার্থী দেয়া হবে সে বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত না হলেও এ নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ চলছে। জোটের শরিক দলগুলোর সভায় ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য পৌরসভা নির্বাচনের আগে নির্বাচনের রূপরেখার বিষয়ে আলোচনার প্রস্তুতিও চলছে বলে জানান জোটের শীর্ষ নেতারা। সূত্র জানায়, রাজনৈতিক পরিচয় ও দলীয় প্রতীকেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন-সরকারের সামপ্রতিক এমন সিদ্ধান্তে জোটের শরিকদের কারও কারও মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ ও হতাশা থাকলেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে কারও দ্বিমত নেই। তবে, এ ধরনের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মনোনয়ন বাণিজ্যসহ বড় রাজনৈতিক দলগুলো লাভবান হবে এমন মন্তব্য করে জোটের একাধিক শীর্ষ নেতারা বলছেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও সঠিক ভোটের মাধ্যমে যোগ্য জনপ্রতিনিধি যেন নির্বাচিত হয়- এটাই প্রত্যাশা তাদের। এদিকে জোটসূত্র জানিয়েছে, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করায় পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য দলগুলোর প্রার্থী সব জায়গায় থাকবে নাকি জোটের পক্ষ থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হবে এ বিষয়ে এখনও আলোচনা হয়নি। নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হলে জোটের পক্ষ থেকে আলোচনার উদ্যোগ নেয়া হবে। নেতারা কালোটাকা, সন্ত্রাস ও পেশিশক্তিমুক্ত স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপর গুরুত্ব আরোপ করে জানিয়েছেন, বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে যুক্তিযুক্ত। এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে প্রয়োজনে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠনের কথাও বলছেন ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া এ বিষয়ে প্রতিবেদককে বলেন, আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আমরা জোটগতভাবে না-কি একক ভাবে অংশ নেব সে বিষয়ে চূড়ান্ত কিছু সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। শিগগিরই দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, এটা নিয়ে কি ধরনের হোমওয়ার্ক হয়েছিল তা জানি না। কিন্তু দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আরও আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন ছিল। এ ধরনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে পরবর্তীকালে কি কি ধরনের প্রতিক্রিয়া হয় সেটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে, সিদ্ধান্ত যেহেতু হয়েছে নতুন আইনে আমরাও দলগতভাবেই নির্বাচনে অংশ নেব। শরীফ নুরুল আম্বিয়া আরও বলেন, নির্বাচন যেভাবেই হোক সবচেয়ে বড় কথা হলো নির্বাচন যাতে অবাধ ও সুষ্ঠু হয়। জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, আসলে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সবসময় দলীয় আমেজটাই থাকে। এই আইনটির ফলে এটি একটি লিগ্যাল কাভারেজ পেয়েছে। তিনি বলেন, অগামী পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে ১৪ দলে এখনও কোন আলোচনা হয়নি। তবে, দলীয়ভাবে যেহেতু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে তাই সকল দলের উচিত তৃণমূলের মতামতকে গুরুত্ব দেয়া। আর আমরা আশা করি বিএনপিসহ সকল দল স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেবে। কারণ সকল দলের অংশগ্রহণেই নির্বাচন ইতিবাচক হবে। গণতন্ত্রী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুর রহমান সেলিম এ বিষয়ে বলেন, আমরা এখনও দলীয় ফোরামে এ নিয়ে কোন আলোচনা করিনি। আওয়ামী লীগও এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোন কথা বলেনি। একক না-কি জোটগতভাবে আগামী পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নেয়া হবে দলীয় ফোরামেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, এখন থেকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন যেহেতু দলীয় প্রতীকে হবে, তাই যার যার দলের প্রার্থী নিয়ে মাঠে নামার এখনই সময়। তবে, কালোটাকা, পেশিশক্তি মুক্ত ও অবাধ নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয় সে বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ১৪ দলের একাধিক দায়িত্বশীল নেতা আলাপকালে প্রতিবেদককে বলেন, দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও বিএনপি তাদের প্রতিক্রিয়ায় বিষয়টিকে সহজভাবে মেনে নেয়নি। এতে করে আগামী পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তাদের অবস্থান কি দাঁড়াবে সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। তাই নির্বাচনে ১৪ দলের শরিকদের অংশগ্রহণ জোটগত না-কি একক-এ বিষয়ে বিএনপির নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়ও থাকতে হতে পারে। ১৪ দলের শরিক দলের একজন শীর্ষ নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, দলীয় পরিচয়ে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে বিএনপি তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তাতে এই নিয়মে নির্বাচনে অংশ নেয়া না নেয়ার বিষয়ে তাদের অবস্থান এখনও স্পষ্ট নয়। যদি বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে সিদ্ধান্ত হবে একরকম আর তারা যদি নির্বাচনে না আসে তাহলে সিদ্ধান্ত অন্যরকম হতে পারে। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ/মোজাফফর) সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, যদিও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কে আসলো না আসলো এটা বড় বিষয় নয়, তারপরও আমরা আশা করবো বিএনপি আগামী স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নেবে এবং সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি বলেন, নতুন আইন অনুযায়ী দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে। আমরা সবসময়ই বলে আসছি সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচন কমিশনকে আরও জনবল দেয়াসহ কমিশনকে আরও শক্তিশালী ও স্বাধীন করতে হবে। একই দলের যুগ্ম সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বলেন, নতুন আইনে জোটগত না-কি এককভাবে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেয়া হবে, সে বিষয়ে খুব শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি-না সেটি এখনও নিশ্চিত নয়। তাদের অংশ নেয়া না নেয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেই হয়তোবা ১৪ দলের শরিকদের সিদ্ধান্ত হতে পারে।-এমজমিন ১৮ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে