রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫, ১২:৫১:০৬

গোলকধাঁধায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল

গোলকধাঁধায় আওয়ামী লীগের তৃণমূল

রফিকুল ইসলাম রনি : আসন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে পৌরসভার মেয়র, কাউন্সিলর ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বারদের দলীয় মনোনয়ন ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় দেওয়া হবে তা এখনো পরিষ্কার নয় তৃণমূল আওয়ামী লীগের কাছে। দলের সংসদীয় বোর্ড, জেলা না উপজেলা আওয়ামী লীগ এসব মনোনয়ন দানের ‘অথরিটি’ হবে তা নিয়েই দলের ভিতর সৃষ্টি হয়েছে গোলকধাঁধা। শুধু তাই নয়, প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে এলাকার ‘ক্ষমতাধর’ এমপিরা জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগকে পাশ কাটিয়ে ছড়ি ঘোড়াতে পারেন এমন আশঙ্কাও রয়েছে সাধারণ নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কেন্দ্রের দিকনির্দেশনা চায় তৃণমূল আওয়ামী লীগ। বিগত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, ইউনিয়ন, পৌরসভা, উপজেলা পরিষদে একটি পদের জন্য আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পরে শুরু হয় নিজ দলের নেতাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব ও প্রতিযোগিতা। এতে তৃণমূলের কর্মীরা নানা উপদলে ভাগ হয়ে নিজেরা নিজেদের মধ্যে লড়াই করতে থাকেন। যার প্রভাব পড়ে জাতীয় নির্বাচনেও। সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে এমন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে। এ অভিজ্ঞতা থেকেই আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সংসদ নির্বাচনের মতো তারা স্থানীয় সরকারের প্রতিটি নির্বাচনে একজন করে প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন। এতে দলের সবাই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন। এতে প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা যেমন বাড়বে, তেমনি তৃণমূলে নেতা-কর্মীরা নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পাবেন। গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিসভার বৈঠকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার আইন পাস হয়। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় প্রার্থী বাছাই হবে সেটা নির্ধারণ করা হয়নি এখনো। ফলে গোলকধাঁধায় পড়েছে তৃণমূল আওয়ামী লীগ। এ প্রসঙ্গে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল কুদ্দুস এমপি প্রতিবেদককে বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় প্রার্থী ঠিক করা হবে তা এখনো পরিষ্কার করা হয়নি। কেন্দ্রের প্রতিনিধির সঙ্গে সমন্বয় করে জেলা-উপজেলা না পৌর কমিটি প্রার্থী বাছাই করবে তার কোনো নির্দেশনা পাইনি। এ ছাড়াও প্রার্থীরা দলের কাছে কীভাবে আবেদন করবেন তাও জানেন না সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ নিয়ে বলা যায় অন্ধকারেই রয়েছি আমরা। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, নির্বাচনী প্রস্তুতিতে তেমন কোনো পার্থক্য নেই। আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থী থাকত এখন দল মনোনীত প্রার্থী থাকবে। দল একজনকে মনোনয়ন দেবে। তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কারা মনোনয়ন দেবেন সেটা ঠিক করা হবে। এ জন্য আমাদের যারা নির্বাচনী আইন বিশেষজ্ঞ আছেন, যারা এই ধরনের কাজ করে থাকেন তারা বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন। দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ ব্যাপারে গাইড লাইন এলে অফিশিয়ালি কাজ শুরু হবে। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন এবং দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে পারার সুবিধার কারণে এবার বিদ্রোহী প্রার্থীর ঝামেলা পোহাতে হবে না। পাশাপাশি দলের কাছেও নির্বাচিত প্রার্থীরা দায়বদ্ধ থাকবেন। তারা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের সব নির্বাচনেই প্রতিটি জায়গায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকে কয়েকজন করে। প্রত্যকেই দলের সমর্থনের জন্য শক্ত অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। একমাত্র সংসদ নির্বাচনেই একজন করে প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয়। অন্যান্য ক্ষেত্রে এটা করা সম্ভব হয় না। ফলে দলের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে যান। দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বিভক্ত হয়ে পড়েন ওই সব প্রার্থীদের পক্ষ নিয়ে। দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ না থাকায় বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় না। এর ফলে ভোটও ভাগ হয়ে যায় এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কাছে বিজয়ের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও অনেক জায়গায় দলের প্রার্থীরা পরাজিত হন। সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সনজিৎ কুমার এই প্রতিবেদককে বলেন, এবার দলীয়ভাবে নির্বাচন করার কারণে জয়-পরাজয়ের দায়ভার দলকেই বহন করতে হবে। কোন প্রক্রিয়ায় আমরা প্রার্থী নির্ধারণ করব সে বিষয়ে এখনো কেন্দ্রের দিকনির্দেশনা পাইনি। কেন্দ্র প্রার্থী ঠিক করবে-নাকি জেলা না আমরা (উপজেলা) ঠিক করব, তা নিয়ে টেনশনে আছি। তবে খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে দিক নির্দেশনা পাবেন বলে মনে করেন তিনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা প্রতিবেদককে বলেন, দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে সাধুবাদ জানাই। তবে কেন্দ্রের উচিত এখনই দিকনির্দেশনা দেওয়া। কারণ প্রার্থী মনোনয়ন দেবে জেলা-উপজেলা-পৌর কমিটি, নাকি কেন্দ্র, এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে। আবার এসব কমিটিকে পাশ কাটিয়ে এলাকার ‘ক্ষমতাধর’ এমপিরা জেলা-উপজেলার কমিটির ওপর ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা করবেন। জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম সোলায়মান আলী এই প্রতিবেদককে বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কোনো দিকনির্দেশনা পাইনি। তবে দলীয়ভাবে, বিভিন্ন এনজিও এবং সংস্থার মাধ্যমে ইউনিয়ন ও পৌরসভার সম্ভাব্যপ্রার্থীদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। জেলার ৩২টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ২৪টি ইউনিয়ন পরিষদের দলীয় সম্ভাব্য চেয়ারম্যানপ্রার্থীদের খসড়া তালিকাও চূড়ান্ত করেছি।-বাংলাদেশপ্রতিদিন ১৮ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে