রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:৪৮:৪৯

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেট

মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেট

কাওসার আজম : ‘জি-টু-জি’ চুক্তি সংস্কার করে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে ‘জি-টু-জি প্লাস’ সমঝোতা সইয়ের বিষয়ে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সি বা বিআরএ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত রেখে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় একটি মেমোরেন্ডাম (স্মারক) তৈরী করেছে। চলতি মাসের শেষের দিকে এ ব্যাপারে একটি সমঝোতা সই হওয়ার কথা রয়েছে। সিনারফ্লাক্স এসডিএন বিএইচডি নামে মালয়েশিয়ান একটি কোম্পানি বাংলাদেশী ওয়ার্কার্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (বিডব্লিউএমএস) নামে অনলাইন পদ্ধতির মাধ্যমে কর্মী নেবে। এ ব্যাপারে সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বও পালন করবে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমিন নুর নামে এক ব্যবসায়ীর ওই কোম্পানিটি। এমন সব তথ্য জানিয়ে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনকে সম্প্রতি একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার সভাপতি আবুল বাশারের অভিযোগ, সিনারফ্লাক্স নামে বাংলাদেশী ব্যবসায়ী আমিন নুরের ওই কোম্পানির মাধ্যমে দেশটিতে কর্মী নিতে সব ধরনের আয়োজন করেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ‘জি-টু-জি প্লাস’ সমঝোতার জন্য যে মেমোরেন্ডাম তৈরী করা হয়েছে, সেখানে বায়রার নাম বাদ দিয়ে ‘বিআরএ’ নাম ব্যবহার করা হয়েছে। বায়রারই কিছু চিহ্নিত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে চাচ্ছে। বায়রা সভাপতি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে প্রতিবেদককে বলেন, ‘জি-টু-জি প্লাস’ সমঝোতা সই করে সিনারফ্লাক্স মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে অন স্টপ সার্ভিস সেন্টার করবে। সিনারফ্লাক্স বাংলাদেশী ব্যবসায়ী আমিন নুরের প্রতিষ্ঠান। এর আগেও তিনি বেস্টিনেট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় লোক নিতে সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করেছিলেন। তাদের কারণেই বি-টু-বি চুক্তি হয়নি। এবার তারা নতুন করে বায়রার ১২ শ’ সদস্যকে বাদ দিয়ে গুটি কয়েকজন ব্যক্তি সিনারফ্লাক্সের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় একচেটিয়া ব্যবসা করতে চাচ্ছেন। এতে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা রয়েছেন বলে গন্ধ পাচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা এটি হতে দেব না। বায়রার ১২ শ’ সদস্য রয়েছে। আমরা চাই সবাই মিলে ব্যবসা করুক। এখানে সিন্ডিকেট করতে হবে কেন? ইতোমধ্যে আমরা এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। বায়রা সভাপতি বলেন, তারা এ দেশ থেকে কর্মী নিতে আগেই মেডিকেল ও সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স বাবদ ৯ হাজার টাকা নেবে। এ ছাড়া ঢাকা শহরে আসতে-যেতে এটি করতে আগ্রহী ওই কর্মীকে আরও দুই-তিন হাজার টাকা খরচ করতে হবে। অর্থাৎ কোনো কর্মী যদি যেতে না পারে তাহলেও তাকে ১১-১২ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। জনগণ এ জরিমানা কেন দেবে? এত টাকা খরচ করে একটা লোক মালয়েশিয়ায় যাওয়ার নিশ্চয়তা পাবে না। এদিকে, সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কুয়ালালামপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তাদের সরকার বাংলাদেশী ওয়ার্কার্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (বিডব্লিউএমএস) নামে অনলাইন পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশী শ্রমিক নিয়োগের সব কার্যক্রম সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সিনারফাক্স নামে মালয়েশিয়ায় নিবন্ধিত একটি কোম্পানি এ ব্যাপারে সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেওয়ার বিষয়ে সিনারফাক্স বাংলাদেশে ও মালয়েশিয়ায় তাদের অন স্টপ সার্ভিস সেন্টার খুলবে। বাংলাদেশে তাদের সার্ভিস সেন্টারে উল্লেখযোগ্য কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে প্রথমত বায়ো-মেডিকেল পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন, উপস্থিতি ও যোগ্যতা নির্ণয়, ডাক্তারি পরীক্ষা। দ্বিতীয়ত বাংলাদেশ ও মালয়েশীয় হাইকমিশনে বাংলাদেশী কর্মীদের থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহপূর্বক ভিসা প্রসেসিংয়ের যাবতীয় কাজ সম্পাদন এবং ভিসা স্টিকারযুক্ত পাসপোর্ট হাইকমিশন থেকে গ্রহণ করা। উপরন্তু বিডব্লিউএমএস পদ্ধতির সুষ্ঠু পরিচালনা নিশ্চিতকল্পে প্রয়োজনে বিদ্যমান কোনো পদ্ধতির সহায়তা নিতে পারবে। চিঠিতে আরও বলা হয়, চলতি অক্টোবর মাসের শুরু থেকে সিনারফাক্সের এই পদ্ধতির কার্যক্রম সুষ্ঠু ও নিয়মিতভাবে পরিচালনার জন্য মন্ত্রণালয় হাইকমিশনের কাছে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করছে। এই সুযোগে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ হাইকমিশনকে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতার বিষয়টি আবারও নিশ্চিত করছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। বর্তমানে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ও সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তুরস্ক সফরে রয়েছেন। তাই তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। এ ব্যাপারে শনিবার বিকেলে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে বলেন, এ ব্যাপারে আমি এখন কিছুই বলতে চাই না। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার নিয়ে আমরা আপ্রাণ কাজ করছি। আপনারা সব কিছুই জানতে পারবেন। উল্লেখ্য, চলতি বছরের জুন মাসে সরকারের পাশাপাশি বি-টু-বি (বিজনেস টু বিজনেস) বা বেসরকারিভাবে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় তিন বছরে ১৫ লাখ কর্মী নেওয়ার বিষয়ে ঘোষণা আসে। চলতি বছরেই এ পদ্ধতিতে পাঁচ লাখ লোক দেশটিতে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু, শুরু থেকেই সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট খেলা চললেও এ বিষয়ে এখনো উভয় দেশের সরকারের মধ্যে সমঝোতা সই-ই হয়নি।-দ্য রিপোর্ট ১৮ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে