রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৩:৫১:৩০

চ্যালেঞ্জের মুখে ইসি

চ্যালেঞ্জের মুখে ইসি

সিরাজুস সালেকিন : স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে করতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব গত সপ্তাহে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়েছে। পৌরসভা নির্বাচন সামনে রেখে অধ্যাদেশ জারি করে সংশোধিত আইনটি কার্যকর করা হবে। মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় ডিসেম্বরের মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই দলীয়ভাবে এ নির্বাচন করতে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দলীয় প্রতীকে ব্যালট ছাপানো। ইসির হিসাব অনুযায়ী সারা দেশের ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার সংখ্যা ৭ কোটি ৭৩ লাখ। আর ৩২৩ পৌরসভায় ভোটার সংখ্যা ১ কোটির বেশি। এই ভোটারদের জন্য ব্যালট পেপার ছাপাই বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছেন ইসির কর্মকর্তারা। তাদের মতে, আগে পৌরসভায় একজন ভোটারের জন্য মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে তিন ধরনের এবং ইউপিতে চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য তিন ধরনের ব্যালট ছাপানো হতো। কিন্তু দলীয়ভাবে হলে নির্বাচন উপযোগী ২৪৬ পৌরসভায় প্রায় ১ কোটি ভোটারের জন্য প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ধরনের ২ কোটি ২৫ লাখ ব্যালট ছাপাতে হবে। একইভাবে সাড়ে চার হাজার ইউপির জন্য ২২ কোটি ব্যালট ছাপাতে হবে। বিদ্যমান আইনে কম প্রার্থী থাকলেও ১২টি প্রতীকের ব্যালট পেপার ছাপিয়ে রাখে নির্বাচন কমিশন। তবে যেখানে প্রার্থী ১২ জনের বেশি হবে সেখানে অতিরিক্ত প্রতীক যোগ করে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়। নির্দলীয় এ নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হলে প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা আলাদা ব্যালট পেপার ছাপাতে হবে মেয়র ও কাউন্সিলর পদের জন্য। বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪০। স্থানীয় পর্যায়ে সব দল অংশ নিলে একটি পদের ব্যালট কত লম্বা হবে, তাই এখন দেখার বিষয়, বলেন ইসির এক কর্মকর্তা। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, সারা দেশে অনেক পৌরসভা রয়েছে যেখানে এখন দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন করতে গেলে ‘জগাখিচুড়ি’ অবস্থা হবে। উপসচিব পদমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, হাতে রয়েছে আর সর্বোচ্চ দেড় মাস। আইন সংশোধন হলে সে আলোকে বিধিমালা ও আচরণবিধি সংশোধন করা হয়তো সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন কম সময়ে করা জগাখিচুড়ি ছাড়া কিছুই হবে না। এই বছর শেষে পৌরসভা এবং নতুন বছরের শুরুতে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আয়োজনের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আইন সংশোধন হলে নির্বাচন কমিশনকে স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করতে হবে স্বীকার করেই ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলছেন, আসন্ন ইউপি ও পৌরসভার নির্বাচনের ক্ষেত্রে কাজটি তাদের জন্য কঠিন হবে। সরকার আইন সংশোধন করলে আমাদের তো সেভাবে ভোট করতে হবে। তবে স্বল্প সময়ে প্রথমবারের মতো দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা তো চ্যালেঞ্জেরই হবে। এখনও সময় রয়েছে, দেখি কি হয়? আইন সংশোধনের প্রস্তাবটি মন্ত্রিসভার অনুমোদনের জন্য সংসদে বিল হিসেবে উপস্থাপন করতে হবে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির প্রতিবেদনের পর বিল পাস হবে। দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়াতে চাইলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইন সংশোধন করতে হবে। এরপর কিছু বিষয়ে বিধিমালা সংশোধন করবে ইসি। এখনও মতামত না চাওয়ায় সার্বিক বিষয়ে ইসি কোন সুপারিশ দেয়নি বলে সিরাজুল ইসলাম জানান। আইনের সংশোধনী পর্যালোচনার সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, এ কাজ তো কয়েক দিনে করা সম্ভব নয়। মাস ছয়েক সময় দিতে হবে। এদিকে বাংলাদেশে অসংখ্য রাজনৈতিক দল থাকলেও কেবল নিবন্ধিত ৪০টিই সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। আইন সংশোধনের পর আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শুধু এই দলগুলোকেই অংশ নিতে সুযোগ দেয়ার পক্ষপাতি নির্বাচন কমিশন। তাতে অনেক দলই স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের এই নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ হারাবে। এদের মধ্যে কেউ কেউ আদালতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদি তারা আদালতে যান, তাহলে নতুন করে জটিলতার মধ্যে পড়তে হবে নির্বাচন কমিশনকে। এমনিতেই নভেম্বরে পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হলে তার আগে বিধিমালা সংশোধন করতে হবে, যা নিয়ে চাপে রয়েছে ইসি। দলীয় ভিত্তিতে হলে প্রার্থী মনোনয়ন কে দেবে, তাও এখনও স্পষ্ট করতে পারছে না নির্বাচন কমিশন। এত দিন ধরে যোগ্য যে কেউ এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারলেও আইন সংশোধনের পর দলীয় প্রার্থীর বাইরে কারও ভোট করতে হলে সংসদ নির্বাচনের মতো কয়েকটি শর্ত পূরণে করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে। ইসি বলছে, পৌরসভা নির্বাচনের আগে নতুন করে কোন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়া হবে না। অর্থাৎ দলীয়ভাবে ওই ৪০টি দলই কেবল নির্বাচন করতে পারবে। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ এ প্রসঙ্গে বলেন, দলভিত্তিক স্থানীয় নির্বাচনের আইনটি পাস হলে নিবন্ধিত দলগুলোই নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী দেবে। অন্যদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে। পৌর নির্বাচনের সময় রয়েছে আর দেড় মাস। এ সময়ের মধ্যে নতুন কোনো দলকে নিবন্ধন দেয়ার ব্যাপারে আমরা চিন্তা করছি না। সমপ্রতি নিবন্ধন চেয়ে ইসিতে আবেদন করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-বিএনডিপি। দলীয়ভাবে অংশ নেয়ার সুযোগ না পেলে আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন দলটির চেয়ারম্যান শেখ মোস্তাফিজুর রহমান। পৌর নির্বাচনের আগে নিবন্ধন না পেলে আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে পৌর নির্বাচনে আগ্রহী আরও কয়েকটি দল। পৌরসভার আইন সংশোধনের অধ্যাদেশ চলতি সপ্তাহের মধ্যে চাইছে ইসি। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, অধ্যাদেশটি যত দ্রুত হাতে পাবেন তারা, তত দ্রুত বিধিমালা সংশোধনে হাত দিতে পারবেন। সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করা হয় দল থেকে। এতে আসন অনুপাতে দলীয় নির্বাচনী ব্যয়সীমাও রয়েছে। পৌরসভাসহ সব স্তরে এবার দলীয় ব্যয়সীমাও নতুন করে নির্ধারণ করে দিতে হবে। পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে কিংবা কাউন্সিলর পদে দলীয় প্রার্থীকে মনোনয়ন দেবে- কেন্দ্রীয় কমিটি, জেলা কমিটি, পৌর কমিটি, কাউন্সিলরের ক্ষেত্রে কি ওয়ার্ড কমিটি তা এখনও স্পষ্ট নয়। স্থানীয় নির্বাচনে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও সমমর্যাদার ব্যক্তির প্রচারে অংশ নেয়ার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এখন কি হবে, তাও ভাবতে হচ্ছে ইসিকে। দলীয় প্রতীকে ভোটের উদ্যোগ চললেও রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রে এখনও স্থানীয় নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি নেই। ফলে আগামী ডিসেম্বরে পৌরসভা নির্বাচন এবং তার কয়েক মাসের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন করার আগে দলগুলোকে তাদের গঠনতন্ত্রে সংশোধন আনতে হবে। এত দিন ধরে উপজেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদে নির্দলীয়ভাবে হলেও আইন সংশোধনের পর দলীয় প্রতীকে হবে এসব নির্বাচন, প্রার্থী মনোনয়ন দেবে দলগুলো। বর্তমানে সংসদ নির্বাচনে দলগুলো প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে থাকে এবং সেই প্রক্রিয়া তাদের গঠনতন্ত্রেও রয়েছে। প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর গঠনতন্ত্রে স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়ার কোনো বিবরণ নেই। তাই প্রথমবারের মতো স্থানীয় নির্বাচন দলীয়ভাবে হওয়ায় নানা ধরনের জটিলতার আশঙ্কা করছেন নির্বাচন কমিশনের অনেক কর্মকর্তা। অন্যদিকে অতীতে নির্দলীয়ভাবে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোয় জালিয়াতিসহ নানা অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার উপযুক্ত প্রমাণ উপস্থাপন করা হলেও কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এমন অবস্থায় পৌর ও ইউপি নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণকেই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন ইসি কর্মকর্তারা।-এমজমিন ১৮ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে