রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০৪:৩৪:০০

নজরদারি এড়াতে প্রযুক্তি ব্যবহারেও সতর্ক জঙ্গিরা

নজরদারি এড়াতে প্রযুক্তি ব্যবহারেও সতর্ক জঙ্গিরা

গাজী ফিরোজ : নজরদারি এড়াতে প্রযুক্তির সতর্ক ব্যবহার করছে নিষিদ্ধ সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গিরা। তারা মুঠোফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করলেও খুদে বার্তা পাঠাতে অন্য প্রযুক্তি বিশেষভাবে ব্যবহার করে। ওয়েবভিত্তিক কোনো ই-মেইল বা ভার্চ্যুয়াল ড্রাইভে (ইন্টারনেটে ফাইল রাখার জায়গা) অ্যাকাউন্ট খুলে একই আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করে তারা। সচরাচর ব্যবহার করা হয়—এমন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি ব্যবহার না করায় জঙ্গিদের সাংগঠনিক তৎপরতা ও গতিবিধির পুরোটা নজরদারির আওতায় আনা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার জেএমবির চার জঙ্গিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কাজে যুক্ত গোয়েন্দা কর্মকর্তারা প্রতিবেদককে এসব কথা বলেছেন। তাঁরা বলছেন, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কিছু সাংকেতিক নাম ব্যবহার করে জঙ্গিরা। যেমন পুলিশকে ‘মামা’, বোমাকে বলে ‘মেওয়া’। জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে যুক্ত গোয়েন্দা পুলিশের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, যে এলাকায় গাড়ি চলাচল বেশি করে, সেখানে জঙ্গিরা গাড়ি নিয়ে ঘোরে। যেখানে ভিক্ষুকদের আনাগোনা বেশি, সেখানে ভিক্ষুক সেজে চলাফেরা করে তারা। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য এই প্রতিবেদককে বলেন, জঙ্গিদের প্রযুক্তির সতর্ক ব্যবহার পুলিশকে ভাবিয়ে তুলেছে। তাদের তৎপরতা নজরদারির মধ্যে আনতে প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পুলিশের দক্ষতা আরও বাড়ানোর কাজ চলছে। এ বিষয়ে নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ সুমন আহমেদ বলেন, ইন্টারনেটে কোনো তথ্য রাখলে, সম্পাদনা করলে বা আদান-প্রদান করলে তা অবশ্যই শনাক্ত করা বা খুঁজে পাওয়া সম্ভব। তবে তা শুধু নির্দিষ্ট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের (যেমন: গুগল, ফেসবুক, স্কাইপ, ভাইবার ইত্যাদি) মাধ্যমেই করতে হয়। এ ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে। তিনি বলেন, যেহেতু এই সময়ের ইন্টারনেটভিত্তিক তথ্য আদান-প্রদানের সব পণ্য বা সেবাতেই সাংকেতিকভাবে গোপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে (এনক্রিপশন) তাই সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা ছাড়া নজরদারি বা নির্দিষ্ট তথ্য উদ্ধার করা প্রায় অসম্ভব। ৫ অক্টোবর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে গ্রেনেড, অস্ত্র, গুলি, ছুরি, সাংগঠনিক কাগজপত্রসহ জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের ‘সামরিক প্রধান’ তৌফিকুল ইসলাম ওরফে জাবেদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে নগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরদিন জাবেদকে নিয়ে গ্রেনেড উদ্ধারে গেলে তাঁর সহযোগীদের ছোড়া গ্রেনেড বিস্ফোরণে জাবেদ নিহত হন বলে দাবি করে পুলিশ। বাকি চার জঙ্গি বুলবুল আহমেদ ওরফে ফুয়াদ, সুজন ওরফে বাবু, মাহবুবুর রহমান ওরফে খোকন ও শাহজাহান ওরফে কাজলকে পৃথক চারটি মামলায় ১৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সাইবার অপরাধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. বাবুল আক্তার প্রতিবেদককে বলেন, জঙ্গিরা আবারও সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে—এমন তথ্য পাওয়ার পর তাদের ধরতে অভিযানে নামে পুলিশ। কিন্তু প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অবস্থান জানা কঠিন হয়ে পড়েছে। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের জন্য জঙ্গিরা গুগলে থাকা তাদের একাধিক অ্যাকাউন্ট দিয়ে ফাইল বা খসড়া মেইলে তথ্য আদান-প্রদান করে। মুঠোফোন ব্যবহার করলেও সেগুলোর সিম নিবন্ধিত নয়। আবার দেখা গেছে, শুধু একটি কল করার পরই সিমটি ফেলে দিয়েছে। বাবুল আক্তার জানান, গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদের সময় তথ্য না দিয়ে এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল রপ্ত করেছে জঙ্গিরা। মানসিকভাবে ভেঙে না পড়া, জিজ্ঞাসাবাদে সময়ক্ষেপণ করা, ভুল তথ্য দেওয়া, প্রয়োজনে প্রতিপক্ষের নাম বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে পুলিশকে ব্যস্ত রাখা, একই কথা বারবার বলার মতো কৌশল নেয় তারা। চট্টগ্রাম নগর ডিবি পুলিশে সাইবার অপরাধ নিয়ে কাজ করা উপপরিদর্শক (এসআই) সন্তোষ কুমার চাকমা বলেন, গুগল বা অন্য কোনো মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য কয়েকজন জঙ্গি সাধারণত একই আইডি ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে। কারও জন্য মেসেজ (খুদে বার্তা) কোনো ভার্চ্যুয়াল ফাইল বা জায়গায় রাখা হলে তা পড়ার পর সে মুছে ফেলে। এ ছাড়া দলের কোনো সদস্য গ্রেপ্তার হলে অন্যরা দ্রুত আইডি ও পাসওয়ার্ড বদলে ফেলে। ১৮ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে