বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭, ০১:৪৪:১৪

মাথা নত না করার দীপ্ত শপথ

মাথা নত না করার দীপ্ত শপথ

নিউজ ডেস্ক : ভাষা শহীদদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সারা দেশে পালিত হয়েছে মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। একুশের প্রথম প্রহর থেকে গতকাল দিনভর দেশজুড়ে ছিল নানা আয়োজন। শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রভাত ফেরি, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ, আলোচনা সভা, বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে দেশে এবং দেশের বাইরে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশ্বের নানা প্রান্তে স্মরণ করা হয়েছে সালাম-বরকতদের ভাষার জন্য আত্মত্যাগকে। এদিকে ভাষা দিবসের নানা কর্মসূচিতে অন্যায়- অবিচারের বিরুদ্ধে, অধিকার আদায়ের পক্ষে দেশজুড়ে উচ্চারিত হয়েছে বজ্র শপথ। অন্যায়ের কাছে মাথানত না করার শপথ উচ্চারিত হয়েছে প্রতিটি শহীদ মিনারে। ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে একুশের প্রথম প্রহর থেকেই  ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মানুষের ঢল নামে। যা চলে গতকাল দুপুর পর্যন্ত।

একই অবস্থা ছিল সারা দেশের সব শহীদ মিনারে। ভোরের আলো ফোটার আগেই হাতে ফুল ও মুখে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ কালজয়ী এই একুশের গান গেয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মরণ করে বিভিন্ন বয়স ও শ্রেণী-পেশার মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘ হয়। এ সময় জগন্নাথ হল, পলাশী মোড় ছাড়িয়ে নীলক্ষেত ও ইডেন কলেজের আশপাশে হাজারও মানুষের মিছিল নামে। নগ্ন পায়ে, বুকে শোকের প্রতীক কালো ব্যাজ, হাতে ফুল ও জাতীয় পতাকা নিয়ে আসতে থাকেন সব সয়সী ও পেশার সাধারণ মানুষ।

দুপুর পর্যন্ত শহীদ মিনারে এ শ্রদ্ধা নিবেদন চলে। দিনভর শ্রদ্ধা নিবেদনে আর মানুষের ভালোবাসার ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনার। এর আগে একুশের প্রথম প্রহরে রাত ১২টা ১ মিনিটে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের সূচনা করেন প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির জন্য চরম শোক ও বেদনার। মায়ের ভাষা ‘বাংলা’র অধিকার আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত এই দিন।

গতকাল জাতিসংঘের উদ্যোগে সারাবিশ্বে ভাষা শহীদদের স্মরণে দিবসটি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয়। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা (ইউনেস্কো) ১৯৯৯ সালে মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এ উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক, কূটনীতিকবৃন্দ, তিন বাহিনীর প্রধানগণ।

ভোর সাড়ে ৫টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় তারা বেদিতে ফুল দিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার শ্রদ্ধা নিবেদন করে। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন- প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমদ, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্য, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সকাল পৌনে ৯টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তাঁর সঙ্গে আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশন, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একুশে ’ল ইয়ার্স কাউন্সিল, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবদল, ছাত্রদল, বাংলাদেশ জনসেবা পার্টি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বাসদ (মার্কসবাদী), ছায়ানট, খেলাঘরসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন। এছাড়া শিশু একাডেমি, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিউজে), ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান,  সাংবাদিক ফোরাম, ইয়ুথ জার্নালিস্টস ফোরাম বাংলাদেশ (ওয়াইজেএফবি)সহ বিভিন্ন সংগঠন শহীদ মিনারে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ করে।

এদিকে গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আজিমপুর কবরস্থানসহ একুশের প্রভাতফেরি প্রদক্ষিণ এলাকায় ৪ স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। শহীদ মিনারকে ঘিরে শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, আজিমপুর, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালসহ পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সিসি (ক্লোজ সার্কিট  ক্যামেরা) ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয়। গতকাল ছিল সরকারি ছুটির দিন। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। এ উপলক্ষে সারা দেশের মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। বিকালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাজধানীসহ সারা দেশের স্কুল-কলেজ, পাড়া-মহল্লায়ও ছিল নানা আয়োজন। এ উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আজ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। বিকাল ৩টায় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলতনায়তনে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমজমিন
২২ ফেব্রুয়ারি,২০১৭/এমটিনিউজ২৪/এসবি

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে