নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই দেশের নারী সমাজের উন্নয়নে কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার সংসদে তার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য কামাল আহমেদ মজুমদারের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, নারীর উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়, এ গভীর উপলদ্ধি থেকেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর নারী সমাজের উন্নয়নে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু দেশকে উপহার দেন ’৭২-এর অনন্য সংবিধান। যাতে কেবল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মুক্তির কথাই বলা হয়নি, অত্যন্ত বলিষ্ঠভাবে এতে নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদে সর্বপ্রথম জাতির পিতা নারীদের জন্য ১৫টি আসন সংরক্ষিত করেন। এটাই বাংলাদেশের ইতিহাসে নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে প্রথম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ। যার ফলে স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের প্রথম সংসদেই নারীরা প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পান। আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর পঞ্চম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নারী উন্নয়নকে যুক্ত করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৭ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে সর্বপ্রথম জাতীয় নারী উন্নয়ননীতি ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৭ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩টি সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একই বছর ২৮ মে ‘নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ১৯৯৮ সালে নারীর উন্নয়নে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
তিনি বলেন, সন্তানের পরিচিতির সাথে বাবার নামের পাশে মায়ের নাম ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার সর্বপ্রথম সামরিক বাহিনীতে অফিসার পদে নারীদের নিয়োগ দেয়া শুরু করে। এ সময় বাংলাদেশে প্রথম মহিলা সচিব নিয়োগ দেয়া হয়। ২০০০ সালে বাংলাদেশ ‘সিইডিএডব্লিউ’ সনদের ‘অপশনাল প্রটোকল’ অনুস্বাক্ষর করে। একই বছর মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল সনদে স্বাক্ষর করে নারী উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১১ সালে যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি প্রণয়ন করা হয়েছে তা এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন-২০১০, পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) বিধিমালা-২০১৩, ডিএনএ আইন-২০১৪ এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৩-২৫ প্রণয়ন করা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটি ৬ মাসে উন্নীত এবং মাতৃত্বকালীন ভাতা ও ল্যাকটেটিং মাদার ভাতা চালু করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়গুলোতে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার, মন্ত্রী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সিনিয়র সচিব বা সচিব পদে, ব্যাংকিং সেক্টরে উচ্চ পদ, রাষ্ট্রদূত, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নারীদের নিয়োগ বা দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নারী উন্নয়নে মোট বাজেটের ২৭ দশমিক ২৪ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়, যা মোট জিডিপি’র ৪ দশমিক ৭৩ শতাংশ । সকল মন্ত্রণালয়ের নারী উন্নয়ন সংক্রান্ত ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় সংসদে ৭১ জন নারী সংসদ সদস্য রয়েছেন। সংরক্ষিত নারী আসন ৫০টিতে উন্নীত করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলা পরিষদে ১ জন নির্বাচিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রয়েছেন। সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা নারীর ক্ষমতায়ন বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, উপবৃত্তি, বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ বিতরণ এবং অবৈতনিক শিক্ষা প্রদানের ফলে নারী শিক্ষার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ছাত্রীদের স্কুলে ভর্তির হার শতভাগে উন্নীত হয়েছে। নারীর উচ্চ শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে একটি বাড়ি একটি খামার, ভিজিডি, আশ্রয়ণ, বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, প্রসূতি মায়েদের ভাতা, আত্ম-কর্মসংস্থানে প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্র ঋণসহ অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে অবহেলিত ও বঞ্চিত নারীদের আত্ম-বিশ্বাসের উৎস তৈরি করা হয়েছে। প্রশিক্ষণ নিয়ে নারীরা দেশে-বিদেশে চাকরি করছেন। ক্ষুদ্র নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঢাকায় বিপণন কেন্দ্র ‘জয়িতা’ চালু করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে ও জেন্ডার সমতা নির্ধারণে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় নারীর সামর্থ্য উন্নীতকরণ, নারীর অর্থনৈতিক প্রাপ্তি বৃদ্ধিকরণ, নারীর মত প্রকাশ ও মত প্রকাশের মাধ্যম সম্প্রসারণ এবং নারীর উন্নয়নে একটি সক্রিয় পরিবেশ সৃষ্টিকরণ এ ৪টি বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা নারী উন্নয়নে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৬’ অনুযায়ী ১৪৪টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭২তম যা দক্ষিণ এশিয়ার যে কোনো দেশের চাইতে ভালো অবস্থান নির্দেশ করছে। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারী অংশগ্রহণের মান হিসেবে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ ৬ষ্ঠ স্থানে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মহিলা ও শিশুদের স্বাস্থ্যের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্ভাবনী চিন্তা শক্তির জন্য বাংলাদেশ ২০১১ সালে ‘ডিজিটাল হেলথ ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট’ শীর্ষক সাউথ-সাউথ পুরস্কারেও ভূষিত হয়। নারী শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরি ও শিক্ষার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ ইউনেস্কো থেকে ‘পীস ট্রি’ এওয়ার্ড লাভ করেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীর ক্ষমতায়নে ও জেন্ডার সমতা আনায় উন্নতির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ‘ওমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম এওয়ার্ড’ শীর্ষক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। এছাড়া প্লানেট ফিফটি ফিফটি এওয়ার্ড এবং এজেন্ট অব চেইঞ্জ এওয়ার্ড পুরস্কার প্রাপ্তি বাংলাদেশের সকল নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ। অর্জিত সাফল্যে নারীরা আজ সমাজকে আলোকিত করেছে। এ পুরস্কার এ দেশের সকল নারীর।
০৮ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস