শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭, ১০:৪০:৫৪

বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন টিকে থাকার জন্য পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়নি : প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু বুঝেছিলেন টিকে থাকার জন্য পাকিস্তানের সৃষ্টি হয়নি : প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক : বাঙ্গালী রাজনীতিবিদদের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই প্রথম বুঝতে পেরেছিলেন, কৃত্রিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের টিকে থাকার জন্য জন্ম হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, পাকিস্তান ছিল ধর্মের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত দুটি জাতির একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র। তবে এ রাষ্ট্র দুটির ভাষা সংস্কৃতি এবং আচার আচরণ ছিল ভিন্ন। ভৌগলিকভাবে কৃত্রিম এ রাষ্ট্র দুটির মধ্যে দূরত্ব ছিল প্রায় ১২০০ কিলোমিটার। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হবার পরপরই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ভাষার ওপর আঘাত আসে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন, টিকে থাকার জন্য পাকিস্তানের জন্ম হয়নি।

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনিস্টিটিউট মিলনায়তনে ঐতিহাসিক ৭ মার্চ পালন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট আয়োজিত সেমিনারে বক্তৃতাকালে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতার সনদ ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর সুচিন্তিত নেতৃত্ব এবং আন্দোলন জাতিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে একটি দিক নিদের্শনা দিবে এবং তারা এই মহান নেতাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতার বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপ সুচিন্তিত ছিলো বলেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি, বিজয় পেয়েছি। আমাদের পতাকা, জাতীয় সংগীত এবং এই ভূবনের নাম যে বাংলাদেশ হবে তার প্রতিটি সিদ্ধান্ত তার নিজের নেয়া। জাতীয় সংগীত এই গানটি করবেন, এই সিদ্ধান্তটা তার বহু আগেই নেয়া ছিলো।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিটি পদক্ষেপ বঙ্গবন্ধু নিয়েছিলেন ধাপে ধাপে। জাতিকে একত্রিত করে একটা স্বাধীন রাষ্ট্রগঠনের চিন্তা-ভাবনা মাথায় রেখে। বঙ্গবন্ধু প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে গিয়েছেন। ১৯৭০-এর নির্বাচনে ফলাফল কী হবে সেটা তিনি আগে থেকেই জানতেন। এটা তিনি লন্ডনে বসেই বলেছিলেন, কিন্তু সঙ্গত কারণে প্রকাশ্যে বলেননি। কারণ, তিনি কখনোই বিচ্ছিন্নতাবাদী হতে চাননি। তিনি বিদেশীদের সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় একটা কথা বার বার বলতেন, যারা সংখ্যাগরিষ্ঠ তারা কখনো বিচ্ছিন্নতাবাদী হতে পারে না।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা ঘোষণার যে বাণীটা আপনারা পান সেটা আগেই প্রস্তুত করা ছিলো। এখন ৩২ নাম্বারের লাইব্রেরীতে যে টেলিফোনটা ছিল সেই টেলিফোন দিয়ে শওকত সাহেবের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তাদের নির্দেশ দেয়া ছিল, আক্রমণের সাথে সাথে বার্তাটা পৌঁছে দেয়ার জন্য। বার্তাটা দেয়ার পর পরই আমদের বাড়িতে আক্রমণ করে এবং বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে যায়।

বঙ্গবন্ধুর ত্যাগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু জেলায় জেলায় বক্তৃতা দিলেন মামলা করা হলো, গ্রেপ্তার করা হলো, জামিন পেলেন, আবার গ্রেফতার হলেন। কিন্তু তিনি থেমে থাকেননি। আগরতলা মামলায় গ্রেফতার করা হলো তখন তাকে ফাঁসি দেয়ার একটা ষড়যন্ত্র ছিলো। বাঙালি জাতি গণঅভ্যুথানের মাধ্যমে তাকে মুক্ত করে আনে।

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার অবদান এবং তিনিই যে ভাষা আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন সেটা এক সময় মূছে ফেলার চেষ্টা হয়েছে। ৭ই মার্চের ভাষণের আগে চারদিক থেকে নানা উপদেশ ও পয়েন্ট আসতে লাগলো। সেদিন বক্তব্য দিতে যাওয়া আগে আমার মা বাবাকে বলেছিলেন তুমি এ দেশের মানুষকে চেনো। সারাজীবন তুমি মানুষের জন্য ত্যাগ স্বীকার করে গেছো। কারো কথা শোনার দরকার নেই। তোমার মনে যা চাইবে তাই বলবে। তোমার সামনে লাখো জনতা থাকবে। পেছনে থাকবে পাকিস্তানিদের ষড়যন্ত্র।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন জাতির পিতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বাঙালির উদ্দেশ্যে তার সেই ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন। যেখানে তিনি সকল দিক-নির্দেশনা দিয়েছিলেন বাঙালি জাতিকে। ’৭৫-পরবর্তী সময়ে এই একটি ভাষণ দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ছিল। এই ভাষণ বাজানোর জন্য আমাদের আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বহু নেতাকে জীবন দিতে হয়েছে। একটা সময় বঙ্গবন্ধুর নাম এমনভাবে নিষিদ্ধ ছিল যে, অনেকগুলো ছবির মাঝে বঙ্গবন্ধুর ছবিটা লুকিয়ে রাখতে হতো।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরবর্তী সময়ে ইতিহাস বিকৃতির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, কয়েকটা প্রজন্ম স্বাধীনতার প্রকৃতি ইতিহাস জানতে পারেনি।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ট্রাস্টের চেয়ারপার্সন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান “বঙ্গবন্ধুর ভাষণ : রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামো পরিবর্তনের দিক দর্শন” শীর্ষক একটি মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। ট্রাস্টের কার্যালয়ের প্রধান নির্বাহী মাশরুরা হোসেন ধন্যবাদ জানান।
১০ মার্চ ২০১৭/এমটি নিউজ২৪/এসএস

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে